শুক্রবার, ০৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ১২:৪৯ অপরাহ্ন
মোঃ শিহাব উদ্দিন,
গোপালগঞ্জ প্রতিনিধি:
গোপালগঞ্জের খন্দকার শামস্উদ্দিন স্মতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধানশিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) খন্দকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। তার এসব স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতির কারণে সেখানকার শিক্ষার পরিবেশ চরমভাবে বিঘিত হচ্ছে। সম্প্রতি তার উপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে তাকে পদত্যাগে বাধ্য করে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে আরেক শিক্ষককে প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু করলেও ওই চেয়ারে ফিরে যেতে তিনি শুরু করেছেন নানা পায়তারা।
ইতিমধ্যে তিনি লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে মহড়া দিয়েছেন এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যা অভিযোগ করে তিন শিক্ষককে হয়রানী করেছেন। একারণে বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী, এসএসসি পরীক্ষার্থী ও শিক্ষকরা কাটাচ্ছেন নানা শংকায়।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের অভিযোগে জানা যায়, বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক খন্দকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেন ২০১৮ সালে ১৬ নবেম্বর তার দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই তিনি নানা অনিয়ম ও দুর্নীতি করে এসেছেন। সরকারি পরিপত্র মানেন না; বরং সরকারি বিধিমালাকে পাশ কাটিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক হিসেবে তিনি ৬ মাসের স্থলে প্রায় ৬ বছর ধরে ওই চেয়ারে রয়েছেন। অন্যায়ভাবে শিক্ষকদের শোকজ করে বেতন-ভাতা বন্ধসহ উচ্চতর স্কেল স্থগিত করে রেখেছেন। দায়িত্ব গ্রহণের সময় ৪টি ব্যাংকে বিদ্যালয়ের প্রায় ১৫ লক্ষ টাকা ছিল, যার কোন হিসাব নেই। ২০১৯ সালে মুজিব-বর্ষ উপলক্ষে পিকনিকে যাওয়ার নামে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে প্রায় ১ লক্ষ টাকা, ২০১৯ থেকে ২০২২ সালের শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে বোর্ড-বই সংগ্রহ করে তা বিক্রী করে প্রায় ২ লাখ টাকা, ব্যবস্থাপনা কমিটির অনুমোদন ছাড়া শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে ল্যাব, লাইব্রেরী, ডিজিটাল অনলাইন ও বিভিন্ন দিবস উপলক্ষে টাকা তুলে নিজে আত্মসাৎ করেছেন। সরকার কর্তৃক প্রদত্ত টিউশন ফি প্রতিবছর ১ লক্ষ টাকা বিদ্যালয়ের আয়ের হিসাবে দেখাননি। গতবছর বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের ৭ মাসের বেতন দেননি; এবছরও জুন থেকে অদ্যাবধি শিক্ষকদের বেতন দেননি। এছাড়াও শিক্ষকদের ২৬ মাসের প্রফিডেন্ট ফান্ডের টাকা না দিয়ে তিনি তা আত্মসাৎ করেছেন। প্রতিমাসে ভাউচার লিখে নামে-বেনামে বহু টাকা আত্মসাৎ করেছেন। সম্প্রতি তিনি বিদ্যালয়ের ৬৬টি পুরোনো মেহগনি গাছ ও একমাত্র ছাত্রবাস-ভবনটি ভেঙ্গে বিক্রী করে দিয়েছেন। এরই একপর্যায়ে গত ২০ অক্টোবর বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে তিনি প্রধানশিক্ষক (ভারপ্রাপ্ত) পদ থেকে পদত্যাগে বাধ্য হন। খবর পেয়ে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার, জেলা শিক্ষা অফিসার অফিসার ও পুলিশ কর্মকর্তারা সেখানে গিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেন এবং বিদ্যালয়ে চলমান এসএসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট-পরীক্ষাসহ বিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম চালিয়ে নিতে সবার সঙ্গে কথা বলে সহকারি শিক্ষক কানাই লাল বিশ্বাসকে প্রধানশিক্ষকের দায়িত্ব দিয়ে আসেন। এর পর থেকেই খন্দকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেন পুনরায় ওই চেয়ারে ফিরে যেতে নানা পায়তারা শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে তার কিছু লোকজন নিয়ে বিদ্যালয়ে মহড়া দিয়েছেন এবং থানায় একটি মিথ্যা অভিযোগ দিয়ে বিদ্যালয়ের তিনজন শিক্ষককে একদিন সকাল-সন্ধ্যা থানায় আটকে রাখেন। পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারসহ শিক্ষা অফিসারদের কাছ থেকে বিষয়টি জানার পর পুলিশ কর্মকর্তা তাদেরকে ছেড়ে দেন। এসব কারণে এখন বিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে নানা শংকা বিরাজ করছে।
এদিকে, এসব অভিযোগ নিয়ে বার বার চেষ্টা করেও খন্দকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেনের সঙ্গে কথা বলা যায়নি। বাড়িতে নেই, ঢাকা আছি ব্যস্ত, ফিরে এসে কথা বলব, ইত্যাদি বলে তিনি সাংবাদিকদের এড়িয়ে গেছেন। সাংবাদিকের ফোন বুঝতে পারলে তিনি ফোনকলও ধরেন না। ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির সঙ্গেও কোনভাবে যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
জানা যায়, ১৯৮৬ সালে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার উত্তর গোপীনাথপুরে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর বিদ্যালয়টি ট্রাস্টি বোর্ডের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে। ট্রাস্টি বোর্ডের মাধ্যমে অদ্যাবধি বিদ্যালয়টির ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির পদটি খন্দকার পরিবার হাতেই রয়েছে। কিন্তু সভাপতি খন্দকার শামসউদ্দীন মাহমুদ তার পেশাগত ব্যস্ততার কারণে ঢাকা থেকে গোপালগঞ্জের এ বিদ্যালয়ে তার আসা-যাওয়া নেই। তার অবর্তমানে ম্যানেজিং কমিটির কোন মিটিংও হয়না বা অন্য সদস্যরাও থাকেন চুপচাপ। আর এ সুযোগটি নিয়েই ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষকের পদে থেকে খন্দকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেন দিনের পর দিন নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা ও দুর্নীতি করেছেন। ট্রাস্টি বোর্ডের দোহাই দিয়ে সরকারি নির্দেশনাগুলোও তিনি এড়িয়ে চলেছেন।
এব্যাপারে থানা শিক্ষা অফিসার মোঃ সেলিম তালুকদার সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক খন্দকার মোহাম্মাদ জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন সময় অভিযোগ পেয়েছি; কিন্তু ট্রাস্টি বোর্ডের আওতায় পরিচালিত হচ্ছে বিধায় বিদ্যালয়ের সবকিছু দেখার দায়িত্ব ম্যানেজিং কমিটির। কমিটির সভাপতি কখনও বিদ্যালয়ে আসেন না। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করে তারাও কখনও কথা বলতে পারেননি। বিদ্যালয়টি আসলে কীভাবে চলছে বা আয়-ব্যয়সহ অন্যান্য বিষয়গুলো কীভাবে হচ্ছে বা তাদের রেজুলেশনগুলো কীভাবে হচ্ছে, সেগুলো নিয়েও যথেষ্ঠ সন্দেহ রয়েছে।
সদর উপজেলা নির্বাহী মহসিন উদ্দীন সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, স্কুলের প্রাধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ছাত্রজনতা দুনীতির অভিযোগ করলে তিনি পদত্যাগ করেন। স্কুলে এস এসসি পরীক্ষার্থীদের টেস্ট পরিক্ষা চলছে আইন শৃঙ্খলা শান্তির রক্ষায় স্কুলের শিক্ষক কানাই লাল বিশ্বাসকে ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি আরো বলেন, যেহেতু ছেলেমেয়েদের এসএসসি টেস্ট পরীক্ষা চলছে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।