রবিবার, ২২ ডিসেম্বর ২০২৪, ১০:১৪ অপরাহ্ন
মোঃ আরশাদ আলী স্টাফ রিপোর্টার।
সাতক্ষীরা সদরের ফিংড়ী, ব্রম্মরাজপুর ও ধুলিহর ইউনিয়নের পাকা আমন ধানে ব্যাপকভাবে কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে । এসব এলাকাতে কারেন্ট পোকা আক্রমনে রোপা আমন চাষি দিশেহারা হয়ে পড়েছে। কৃষক জানায়, বিভিন্ন কিটনাশক ব্যবহার করেও তেমন প্রতিকার পাওয়া যাচ্ছে না। তাছাড়া পাকা ধানে এমন কারেন্ট পোকা এর আগে কখনো দেখেনি তারা। এদিকে কারেন্ট পোকা দমনের জন্য জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে আমন চাষিদের বিভিন্ন পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সাতক্ষীরা সদর উপজেলার বাধনডাঙ্গা গ্রামের আমন চাষি আজহারুল ইসলাম জানান, চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘা পরিমান জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন। ধানের ফলনও খুবই ভালো। কিন্ত ক্ষেতে ধান পাকা শুরু হওয়ার সাথে সাথে কারেন্ট পোকার আক্রমনে অধিকাংশ ধান নষ্ট হয়ে গেছে। তিনি বলেন, গত দুই দিনে প্রায় ২০ শতাংশ জমির ধান কর্তন করেছেন। কিন্তু কারেন্ট পোকা লেগে ৫০ থেকে ৫৫ শতাংশ ধান চিটা হয়ে গেছে। কৃষক আজহারুল ইসলাম আরও জানান, গত মৌসুমে একই পরিমান জমিতে রোপা আমন চাষ ২০০মণের উপরে ধান উৎপাদন করেছিলেন। কিন্ত চলতি মৌসুমে ১০০ মণ ধান পাবেন কিনা তা নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে। তিনি বলেন, জমি চাষ, বীজতলা, চারা রোপন, সার, কিটণাষক ও শ্রমিকের মজুরী দিয়ে প্রতি বিঘাতে ৮ থেকে সাড়ে ৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে তার আমন চাষে। এ হিসাব অনুযায়ী চলতি মৌসুমে ১৫ বিঘাতে ১ লাখ ২০ থেকে ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা উৎপাদন খরচ হয়েছে। কিন্তু ধানের যে অবস্থা তাতে উৎপাদন খরচটা হয়তো কোনো রকম উঠে আসবে।
একই অবস্থা বাধনডাঙ্গা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক আব্দুল হাকিম, আব্দুল খালেক, এনামুল হক, আনারুল ইসলাম ও নাসির উদ্দিনের। তারা সকলেই কম বেশি পরিমান জমিতে রোপা আমন চাষ করেছেন বলে জানান। কিন্তু হঠাৎ করে কারেন্ট পোকার আক্রমনে নষ্ট হয়ে গেছে তাদের ক্ষেতের ৪০ থেকে ৪৫ শতাংশ পাকা ধান। এ কৃষক জানান, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তাদের মরামর্শ অনুযায়ী পোকা দমনের জন্য প্লেনাম, তড়িত ও মিমসিনসহ বিভিন্ন প্রকার কিটনাশক ব্যবহার করেও কোনো প্রতিকার পাওয়া যায়নি।
এই তিন ইউনিয়নের চলতি রোপা আমনে দেখা দিয়ে ব্যাপকভাবে কারেন্ট পোকা। এতে করে মারাত্মক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন আমন চাষিরা।
এদিকে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, চলতি ২০২৩-২৪ মৌসুসে জেলার সাতটি উপজেলাতে ২ লাখ ৫২ হাজার ৫৯০টন চাল উৎপাদন লক্ষ্য নিয়ে ৮৮ হাজার ৭৬৮ হেক্টর জমিতে রোপা আমন চাষ করা হয়েছে। যা গত মৌসুমের তুলনায় ২৪৩ হেক্টর পরিমান বেশি। গেল মৌসুমে জেলায় রোপা আমনের আবাদ হয়েছিলো ৮৮ হাজার ৫২৫ হেক্টর জমিতে। যা থেকে ২ লাখ ৪৯ হাজার ২৫৭ টন আমন উৎপাদন হয়।
সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক মো. সাইফুল ইসলাম জানান, জেলার বেশ কিছু এলাকাতে বিচ্ছিন্নভাবে কারেন্ট পোকার আক্রমন দেখা দিয়েছে। তবে সকল উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তাদেরকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে মাঠ পর্যায়ে যেয়ে কৃষকদের মরামর্শ দেয়ার জন্য। কৃষকরা যাতে কারেন্ট পোকার আক্রমন থেকে রক্ষা পায় সে জন্য বিভিন্ন কিটনাশক ব্যবহারের জন্য পরামর্শ দেয়া।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।