সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৫ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি):- নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় প্রথমবারের মতো কৃষি যান্ত্রিকীকরণের মাধ্যমে আধুনিক পদ্ধতিতে ধান চাষ শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অফিস পাড়ার মাঠে এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ হচ্ছে। এরই মধ্যে ”ট্রে পদ্ধতিতে” বীজতলা ও চারা তৈরির কাজ শেষ হয়েছে। এ পদ্ধতি অবলম্বনে চাষিরা লাভবান হবেন বলে আশা উপজেলা কৃষি বিভাগের। জানা গেছে, যান্ত্রিক পদ্ধতিতে ধান রোপনের জন্য ট্রেতে বীজতলা তৈরি আবশ্যক। এছাড়াও বোরোর বীজতলা ”ট্রে পদ্ধতিতে” করলে কুয়াশা বা শৈত্যপ্রবাহে নষ্ট হয় না। এই পদ্ধতির চারাগুলো সুস্থ ও সবল হয়। এতে চাষে ফলন বেশি পাওয়া যাবে। উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনার আওতায় ডিমলা সদর ইউনিয়নের জমুদ্দীর চৌপথি সংলগ্ন আবহাওয়া অফিস পাড়া মাঠের ১৫০ বিঘা জমিতে হাইব্রিড এসএলএইট জাতের এ ধান চাষ করা হচ্ছে। এ কারণে আবহাওয়া অফিস পাড়া মাঠে ৪ হাজার ৫০০টি ট্রেতে ৪৯৫ কেজি বীজ বপন করে চারা তৈরি করা হয়েছে। এ বছর ট্রেতে বীজতলা, যন্ত্রের মাধ্যমে চারা রোপণ ও কম্বাইন্ড হারভেস্টারের মাধ্যমে ধান কাঁটাও হবে। অর্থাৎ এ বছর যুগোপযোগী আধুনিক পদ্ধতিতেই কৃষি কাজ সম্পন্ন হবে। এ পদ্ধতিতে চাষিরা কম খরচে তাদের ধান ঘরে তুলতে পারবে। তথ্যনির্ভর যুগোপযোগী ও আধুনিক পদ্ধতিতে এই প্রথমবার বীজতলা ও চারা তৈরির কাজে সার্বিক তত্ত্বাবধানে রয়েছেন উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. সেকেন্দার আলী। ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে যেভাবে ফসলি জমি কমতে শুরু করেছে, এ অবস্থায় সমলয় ভিত্তিতে চাষাবাদ খুবই সময়োপযোগী। এই পদ্ধতিতে চাষাবাদের মাধ্যমে আধুনিক প্রযুক্তির প্রসারে ট্রেতে চারা উৎপাদনের ফলে ধানের উৎপাদন খরচ কমানো, শ্রমিক সংকট নিরসন ও সময় সাশ্রয় সম্ভব। এছাড়াও এই সমলয় পদ্ধতি জনপ্রিয় করা গেলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি চাল রপ্তানির ক্ষেত্রেও দারুন অগ্রগতি হবে। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মো. খোরশেদ আলম জানান, ট্রের ওপর পরিমাণ মতো জৈব সার ব্যবহার করা হয়। পরে তা ২৫ থেকে ৩০ দিন পর মাদুরের মতো করে তোলা হয়। এরপর রোপণ যন্ত্র রাইস ট্রান্সপ্লান্টারের মাধ্যমে মাঠে রোপণ করা হয়। এ পদ্ধতিতে দুইজন শ্রমিক একটি মেশিন দিয়ে দিনে প্রায় ১৫ বিঘা জমিতে ধানের চারা রোপণ করতে পারেন। ”ট্রে পদ্ধতিতে” চারা টেনে তুলতে হয় না, তাই চারার শিকড় ছিঁড়ে না। ফলে শিকড় দ্রুত মাটি থেকে খাদ্য গ্রহণ করে এবং গাছ সবল হয়ে বেড়ে ওঠে। তিনি আরো জানান, অত্যাধুনিক তথ্যনির্ভর এ প্রযুক্তির ব্যবহার কৃষকদের মধ্যে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে দিতে পারলে তা দেশের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেকসই উন্নয়নেও ভূমিকা রাখবে বলে মনে করেন অনেকে। সনাতন পদ্ধতির চেয়ে ধান চাষে ফলন বাড়ে ১৪ থেকে ১৫ শতাংশ। এ পদ্ধতি জনপ্রিয় করা গেলে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার খাদ্য চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি রপ্তানিযোগ্য চাল উৎপাদন করাও সম্ভব হবে। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. সেকেন্দার আলী জানান, সনাতন পদ্ধতিতে চারা রোপণ করলে ৩৫-৪০ দিনের চারা রোপণ করতে হয়। সনাতন পদ্ধতিতে বীজতলা তৈরি না করে প্লাস্টিকের ট্রেতে বীজ বপন করতে মাটিতে জৈব সার মিশ্রণ দিয়ে বীজতলা তৈরি করা হয়। এরপর বীজ ছিটিয়ে পুনরায় জৈব সার দিয়ে সমতল জায়গায় রেখে পানি দিয়ে ভিজিয়ে রাখা হয়। বীজতলা তৈরির তিন দিনের মধ্যে অঙ্কুর বের হয়ে যায়। ২০-২৫ দিনের মধ্যে চারা উৎপাদন করে রোপণ করা সম্ভব। এই পদ্ধতিতে কৃষক ভালো মানের চারা উৎপাদন করে অল্প সময়ের মধ্যে অধিক জমিতে ফসল ফলাতে পারেন।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।