শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:২০ অপরাহ্ন
রফিকুল ইসলাম মামুন, বিশেষ প্রতিনিধি
নিউজটি লিখতে গিয়ে কলিজা দুমড়েমুচড়ে গিয়েছে শতবার। জানিনা আমাদের পাপের বোঝা কতটুকু ভারি করে নিয়েছি আমরা যার কারণে এই মহামারি নামক ভয়ংকর গজবের শিকার তামাম দুনিয়াবাসী।
বৈশ্বিক মহামারি করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি ছিলেন মা ও ছেলে আইসিইউ বেডে ছিলেন মা।
যখন শুনলেন ছেলের অবস্থা ভাল নয় সাথে সাথে ছেলের জন্য ছেড়ে দিলেন আইসিইউ বেড। এবং আইসিইউ বেড ছেড়ে দয়ার ঘন্টাখানিক যেতে না যেতে দুনিয়া থেকে চিরবিদায় নিলেন মা জননী।
মায়ের মৃত্যুর ৬ঘন্টার মাথায় ছেলেও মৃত্যু বরণ করলেন।
মঙ্গলবার (২৭ জুলাই) দিবাগত রাতে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউতে এ ঘটনা ঘটেছে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের ফোকাল পারসন ও সিনিয়র কনসালটেন্ট ডা. আব্দুর রব।
তিনি বলেন, ৬৫ বছর বয়সী বৃদ্ধ মা ৩৮ বছর বয়সী ছেলের জন্য আইসিইউ ছেড়ে দিয়েছেন। পুরো ঘটনাই আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে। কিন্তু আমরা নিরূপায়। মা ও ছেলে বেঁচে নেই।
তবে মা যা করেছেন তাতে আমাদের সায় ছিল না। তারপরও উনার জোরাজুরিতেই আমরা নিরূপায় হয়ে তাকে আইসিইউ বেড থেকে নামিয়েছি। মায়ের ছেড়ে দেওয়া আইসিইউ সিটে ছেলে শিমুল পাল ছিলেন কিন্তু শেষ পর্যন্ত তিনিও মৃত্যু বরণ করলেন।
জানা গেছে, চট্টগ্রামের সিএনবি কলোনী এলাকার মা ও ছেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হয়েছিলেন চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালে। মায়ের অবস্থা সংকটাপন্ন হওয়ায় ২২ জুলাই তাকে আইসিইউতে নিয়ে যান চিকিৎসকরা। ছেলে ভর্তি ছিলেন সাধারণ ওয়ার্ডে। ধীরে ধীরে ছেলের অবস্থাও খারাপ হতে থাকে। একপর্যায়ে মঙ্গলবার আইসিইউয়ের প্রয়োজন হয় ছেলেরও। কিন্তু চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের ১৮টি আইসিইউ বেডেই রোগী ভর্তি তখন। ছেলের জন্য আইসিইউ না পাওয়ার সংবাদ চলে যায় আইসিইউতে ভর্তি থাকা মায়ের কানে। তাতেই ছটফট করতে থাকেন মা। নিজের হাতে লাইফ সাপোর্টের সরঞ্জাম খুলে ছেলেকে আইসিইউতে আনতে চিকিৎসকদের ইশারা দেন বৃদ্ধ মা।
হাসপাতালের দায়িত্বরত চিকিৎসকরা বলেন, শত চেষ্টা করেও মাকে বোঝাতে পারেনি আমরা। বাধ্য হয়ে মাকে নামিয়ে ছেলেকে তোলা হয় আইসিইউতে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, মা হাসপাতালের আইসিইউ থেকে নামার ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই মারা যান। অন্যদিকে ৬ ঘন্টার মাথায় ছেলেও মারা যান।
বর্তমানে চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোতে কোথাও আইসিইউ শয্যা খালি নেই। সবগুলো আইসিইউ বেড রোগীতে পরিপূর্ণ বলে জানা গেছে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।