রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:২৮ অপরাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ প্রাণঘাতী কেভিড-১৯ করোনাভাইরাসের প্রবল থাবায় মৃতু্যপুরীতে পরিণত হয়েছে ইতালি। ইউরোপে সবচেয়ে নাজুক অবস্থায় পড়া এই দেশটিতে প্রাদুর্ভাবের মধ্যে এক দিনেই ১৬৮ জনের মৃতু্য হয়েছে; এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৩১ জনে। এ ছাড়া আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ১০ হাজার ১৪৯ জন। এই হিসাবে মঙ্গলবার আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে ১০.৭ শতাংশ, আর মৃতের সংখ্যা বেড়েছে ৩৬ শতাংশ। সংবাদসূত্র : বিবিসি, রয়টার্স, এএফপি
চীনের মূল ভূখন্ড বাদ দিলে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা ইতালিতেই সবচেয়ে বেশি। আক্রান্তদের মধ্যে এক হাজার চারজন মঙ্গলবার সুস্থ হয়ে উঠেছেন, আর ৮৭৭ জনকে রাখা হয়েছে নিবিড় পরিচর্যায়; জানিয়েছে ইতালির সিভিল প্রটেকশন এজেন্সি।
নতুন রোগী ও মৃতের সংখ্যা বাড়তে থাকায় মঙ্গলবার থেকে পুরো ইতালিতে চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপের পাশাপাশি জনসমাগম নিষিদ্ধ করার মতো কঠোর পদক্ষেপ নেয়া হয়। এর ফলে দেশটির সাড়ে ছয় কোটি মানুষ কার্যত অবরুদ্ধ দশার মধ্যে পড়ে।
করোনাভাইরাস মাত্র দুই সপ্তাহের মধ্যে ইতালিকে পুরোপুরি নাড়িয়ে দিয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ইতালিজুড়ে মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এ রকম ব্যাঘাত আর দেখা যায়নি। নজিরবিহীন ‘লকডাউন’ আরোপের পর প্রথম দিন মঙ্গলবার দেশজুড়ে দোকান- রেস্তোরাঁ বন্ধ ছিল, শত শত ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে, রাস্তাঘাটও সব ফাঁকা ছিল।
৩ এপ্রিল পর্যন্ত ইতালিয়ানদের অপ্রয়োজনীয় সব ধরনের ভ্রমণ এড়িয়ে বাড়িতে অবস্থান করার পরামর্শ দিয়েছে সরকার। করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব ছড়ানোর কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠা সম্পদশালী উত্তরাঞ্চলে আগেই এ ধরনের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল, পরে তা দেশব্যাপী বিস্তৃত করা হয়। সরকারের এই পদক্ষেপে অনেক ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছেন।
রোমের টিপটপ আবাসিক এলাকার ল্যারিস রেস্তোরাঁর পরিচালক মারিও মোফ্রেদা বলেন, ‘যেন রোজকেয়ামত নেমে এসেছে, আশপাশে কেউ নেই।’ সরকারি নির্দেশ অনুযায়ী, সব রেস্তোরাঁ ও বার এখন সন্ধ্যা ৬টার মধ্যেই বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। ‘এটা পুরোপুরি বিপর্যয়। এতে কোনো কিছু হ্রাস পাবে না। এই লকডাউনের কারণে সৃষ্ট অর্থনৈতিক সংকটে ভাইরাসের চেয়েও বেশি লোক মারা যাবে,’ বলেন মোফ্রেদা।
তবে এই পদক্ষেপে দ্রম্নত ছড়িয়ে পড়া প্রাদুর্ভাবের গতি কমে আসবে বলে আশা করছে কর্তৃপক্ষ। তবে দেশটিতে মৃতদের মধ্যে ৭৪ শতাংশ লমবার্দির লোক হলেও করোনাজনিত রোগ কেভিড-১৯ এখন দেশটির সব জায়গায় ছড়িয়ে পড়েছে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হলে অপেক্ষাকৃত অনুন্নত দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকাগুলোর স্বাস্থ্য ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে- এমন আশঙ্কায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছে প্রধানমন্ত্রী গুইসেপ কন্টের সরকার।
জাপানে মাস্ক বিক্রিতে মুনাফা নিষিদ্ধ
এদিকে, করোনাভাইরাস আতঙ্কে বিশ্বজুড়ে বেড়েছে মাস্কের ব্যবহার। তাই বিশ্ববাজারেও দেখা দিয়েছে মাস্ক সংকট। বিশ্বজুড়ে মাস্ক সংকট এবং দাম বৃদ্ধি পেলেও এবার জাপান সরকার মাস্ক বিক্রিতে ‘মুনাফা’ নিষিদ্ধ করেছে। লাভের জন্য মাস্ক বিক্রিকে নিষিদ্ধ করে একে দন্ডনীয় অপরাধ বলে ঘোষণা করেছে দেশটির সরকার।
বলা হয়েছে, যারা অতিরিক্ত লাভের জন্য মাস্ক বিক্রি করবে, তাদের এক বছরের কারাদন্ড বা ১০ লাখ জাপানি ইয়েন জরিমানা করা হবে। অথবা উভয় দন্ডে দন্ডিত হবে। এই শাস্তি ১৫ মার্চ থেকে কার্যকর হবে।
জাপানের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ‘করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাব রুখতে আমরা জাপানের সব মানুষের মাস্ক ব্যবহার নিশ্চিত করতে চাই।’ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৫৪৩ জন করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। আর এই ভাইরাসে দেশটিতে এখন পর্যন্ত মৃতু্য হয়েছে ১৩ জনের।
করোনাভাইরাস সংক্রমণের সংখ্যা প্রতিনিয়ত বাড়তে থাকায় উত্তরাঞ্চলীয় হোক্কাইদো দ্বীপে জরুরি অবস্থা জারি করেছে জাপান। দেশটির কর্তৃপক্ষ জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে ওই অঞ্চলের মানুষকে ঘর থেকে বের না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছে।
ভারতে আক্রান্ত বেড়ে ৬২
অন্যদিকে, ভারতে করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে ৬২ জনে পৌঁছেছে। এর মধ্যে চারজন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বুধবার সকালে ডাটা সংগ্রহকারী ওয়েবসাইট ওমিটারস ডট ইনফো এ তথ্য জানিয়েছে।
পরিস্থিতি এমনপর্যায়ে পৌঁছেছে, মানুষ শুধু নিজেদের নিয়েই ভাবছে না, দেবতাদের নিয়েও দুশ্চিন্তা করছেন তারা। বারানসিতে করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা করতে সদ্যনির্মিত এক দেবতার মূর্তিতে মাস্ক পরিয়ে দেয়া হয়েছে। আশা করা হচ্ছে, এর মাধ্যমে ভক্তদের প্রতি সদয় হয়ে ভাইরাসের বিস্তার ঠেকাবেন দেবতা। বারানসির প্রহেলাদেশ্বর মন্দিরে ঘটেছে এমন ঘটনা। সেখানে শিব লিঙ্গেও মাস্ক পরানো হয়েছে। এ ছাড়া কেরালায় নতুন করে ছয়জনের মধ্যে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হয়েছে। এর মধ্যে তিন বছরের এক শিশুও রয়েছে। শিশুটি সম্প্রতি ইতালি থেকে এসেছিল। আক্রান্ত শিশুটিকে এর্নাকুলাম মেডিকেল কলেজের আইসোলেশন ওয়ার্ডে রাখা হয়েছে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।