শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পূর্বাহ্ন
মোঃ আলিম উদ্দিন আলিম,সিলেট সদর উপজেলা প্রতিনিধি
করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামারী গোটা বিশ্বের শিক্ষাব্যবস্থাকে চরমভাবে ধাক্কা দিয়েছে। বাংলাদেশে প্রাইভেট স্কুলের প্রায় ৬০ হাজার প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ২০ লাখ শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিবার আজ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় তারা কোনো টিউশন ফি আদায় করতে পারেনি। তাই শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি।
কিন্ডারগার্টেন জাতীয় বেশির ভাগ প্রতিষ্ঠানই ভাড়া বাড়িতে পরিচালিত হয় এবং শিক্ষক নেতারাও বলেছেন, ৯৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানই ভাড়া বাড়িতে অবস্থিত। বাসা মালিকদের চাপে পড়ে করোনাকালে স্কুল বন্ধ থাকলেও প্রতিষ্ঠানগুলোর বাড়ি ভাড়া ঠিকই দিতে হচ্ছে। মালিক পক্ষের অমানবিক ব্যবহার সহ্য করতে না পেরে স্কুল কর্তৃপক্ষের অনেকেই ব্যাংক লোন করে বিদ্যালয়ের ঘরভাড়া পরিশোধ করছেন।
যদিও শিক্ষার্থীরা ঠিকমতো বেতন দিচ্ছেনা। অথচ এসব প্রতিষ্ঠান শিক্ষার্থীর বেতনের উপর পুরোপুরি নির্ভরশীল। এই বেতন থেকে আবার বিদ্যুৎ বিল সহ স্কুলের যাবতীয় ব্যায় সংকুলান করতে হয়।
কিন্ডারগার্টেন ও প্রাইভেট বিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষক প্রতিষ্ঠান থেকে প্রায় ৩-৫ হাজার টাকা করে বেতন পান। মুলত: তাঁরা নির্ভর করেন প্রাইভেট টিউশনির ওপর। করোনাকালে দীর্ঘ এই ছুটির কারনে টিউশনিও বন্ধ রয়েছে, তা’তে বন্ধ হয়ে গেছে তাঁদের সকল উপার্জন। তাঁরা না পাচ্ছেন প্রতিষ্ঠান থেকে বেতন, না পাচ্ছেন টিউশনের বেতন।
আবার অনেকই টিউশনি করছেন কিন্তু অভিভাবকগন নানা অজুহাত দেখিয়ে শিক্ষকদের বেতন দিচ্ছেন না।বেতন দিতে গেলে কতযে গড়িমসি। কাজেই জীবন চালানো, সংসার চালানো এসকল শিক্ষকদের জন্য দুরূহ হয়ে পড়েছে।
প্রায় ৭ মাস ধরে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ কিন্তু লক্ষ লক্ষ শিক্ষক ও কর্মচারী যাঁরা শিক্ষা দান করছেন অথচ তাঁরা রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে কোনো বেতন-ভাতা পান না, সত্যিকারার্থে তাঁদের উপায় কি হবে?
দুই-একটি প্রতিষ্ঠান হয়তো নিজেদের গচ্ছিত ফান্ড থেকে শিক্ষক-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা পরিশোধ করছে বা করতে পারছে, কিন্তু স্বল্প আয়ের বিশাল সংখ্যক বিদ্যালয়ের কি হাল হবে?
সিলেটের খাদিমপাড়া ইউনিয়নের কিংস্টার উচ্চ বিদ্যালয়ের পরিচালক এম এন জামান নাজমু ,
বেসিক লানার্স একাডেমির শিক্ষা বিষয়ক পরিচালক আলাউদ্দিন আলাল এবং শাহজালাল কলেজিয়েট স্কুল এর পরিচালক সেলিম আহমদ মহোদয় গনের কাছে সরেজমিনে তাদের স্কুলের বর্তমান অবস্থা জানতে চাইলে সবাই প্রায় একই কথা বলেন। তাঁরা বলেন যে, অভিভাবকগন আশানুরূপ সহযোগীতা করছেন না। বরং তাদের একই কথা “ক্লাস হলো না, বেতন দেব কেন? ” ফলে স্কুলের ঘর ভাড়া,শিক্ষকদের বেতন সহ অন্যান্য খরচ চালাতে তারা হিমসিম খাচ্ছেন। অভিভাবকগনের এহেন বেবিচারী আচরনের ফলে অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে গেছে।
তাই মানবিক দৃষ্টি কোন থেকে বিবেচনা করে, নিজ সন্তানকে দ্বায়মুক্ত করনের লক্ষ্যে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি পরিশোধ করার জন্য অভিভাবকদের কে আহবান জানান।
প্রাইভেট স্কুলের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত টকশোতে তারা বলেন, প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকরাও মানুষ গড়ার কারিগর। প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকরা আজ মানবেতর জীবন যাপন করছে। অনেক শিক্ষক রিক্সা চালাচ্ছেন,আবার অনেকে সবজি বিক্রি করেছেন। যা কোনভাবেই কাম্য নয়।
অর্থাভাবে অনেক প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষক শিক্ষকতা পেশার ক্ষেত্রে মানসিক ভাবে ভেংগে পড়েছেন। আবার অনেকে দু:শ্চিন্তায় স্ট্রোক করে মারা গেছেন।
তাই প্রাইভেট স্কুলের শিক্ষকদের প্রতি সরকারি ও বেসরকারি ভাবে সকলের সহযোগিতা করা উচিত।
লেখক-মোঃ আলিম উদ্দিন আলিম
সহঃ শিক্ষক -কিংস্টার উচ্চ বিদ্যালয়
সুরমাগেইট, খাদিমনগর, সিলেট
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।