বুধবার, ১২ মার্চ ২০২৫, ০১:২৯ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার সাতক্ষীরা।
সাতক্ষীরার ধুলিহর-ব্রহ্মরাজপুর সম্মিলিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নারী শিক্ষিকাকে শ্লীলতাহানি ও অকথ্য ভাষায় গালি-গালাজ করার প্রতিবাদে প্রধান শিক্ষক মোমিনুর রহমান মুকুলের বিরুদ্ধে মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৬ মার্চ) সকালে ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সামনে সাতক্ষীরা টু আশাশুনি সড়কে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের ব্যানারে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন ভুক্তভোগী শিক্ষিকা আকলিমা খাতুন, ১০ শ্রেণির শিক্ষার্থী তাবাচ্ছুম ফেরদৌস, মাছুম বিল্লাহ, সিরাজুম মুনিরা, আল মামুনসহ অন্যান্যরা।
বক্তারা বলেন, স্কুলের প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুল বঙ্গবন্ধু পরিষদ সাতক্ষীরা পৌর শাখার সভাপতির পদ পাওয়ার পর থেকে স্কুলের কোন শিক্ষককে তিনি আর শিক্ষক মনে করেন না। তিনি শিক্ষকদের তার বাড়ির চাকর মনে করেন। অকথ্য ভাষায় গালি- গালাজ করেন। হুমকি ধামকি দেন। ছাত্র-ছাত্রীদের সামনে শিক্ষক- শিক্ষিকাদের মারতে উদ্যত হন। আজে-বাজে কথা বলেন। সে একজন বিকারগ্রস্থ না হলে এমন করতে পারেনা। তাকে এলাকার মানুষ কানকাটা মুকুল নামেই চিনে।
বক্তারা আরো বলেন, গতকাল ৫ মার্চ স্কুলের পিয়নকে দিয়ে শিক্ষিকা আকলিমা খাতুনকে স্কুলে আসতে বলেন প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান। স্কুলে আসা মাত্রই কোন কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রধান শিক্ষক আকলিমাকে মারপিট করেন। অকথ্য ভাষা ব্যবহার করে গালিগালাজ করেন। যা একজন শিক্ষকের মুখে কোনদিন শোভা পায়না। আমরা তার উপযুক্ত বিচার চাই। স্কুলের এমন কোন শিক্ষক নেই যিনি মুকুল মাস্টারের দ্বারা লাঞ্ছিত হননি।
এসময় ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে থেকে প্রধান শিক্ষক মমিনুর রহমান মুকুলের বহিস্কার ও তাকে দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তি দাবি করে মুহুর্মুহু স্লোগান দেয়া হয়। এ সময় উক্ত বিদ্যালয়ের ভিতরকার নানা অনিয়ম দূর্ণীতির ফিরিস্তি জনগণের সামনে তুলে ধরেন বক্তারা। তারমধ্যে ২০১৮-১৯ সাল হতে বিদ্যালয়ের কোন আয়-ব্যায়ের সঠিক হিসাব না থাকা, বিদ্যালেয়ের আয়ের অংশ হতে লভ্যাংশ ব্যাংকে জমা না দেওয়া, সাম্প্রতিক সময়ে ব্রহ্মরাজপুর বাজারের কৃষি ব্যাংক হতে এফ ডি আর (স্থায়ী সঞ্চয়) হতে ভূয়া রেজুলেশন করে ৬ লক্ষ টাকা উত্তোলন, বিদ্যালয়ের দোকান ঘরগুলোর এক কালীন পজিশনের টাকার হিসাব না থাকা, বিদ্যালয়ের আম, নারিকেল গাছের টাকার হিসাব না থাকা, প্রতিবছর এসএসসি পরীক্ষার্থীদের নিকট হতে বিদ্যালয়ের উন্নয়ন বাবদ ফর্মফিলাম এর সময় বোর্ড কর্তৃক নির্ধারিত টাকা বাদে অতিরিক্ত ১ হাজার করে টাকা বেশি নেওয়া, শিক্ষকদের উচ্চতর স্কেল এর আবেদন করার সময় তাদের নিকট হতে অর্থ আদায়, নিয়ম বহির্ভূত ভাবে কর্মচারী দের সাময়িক বরখাস্ত করা, শারীরিক শিক্ষক আবুল হাসানকে কানে চড় মেরে কানের ক্ষতিসাধন করা, নিয়োগে বড় ধরনের নিয়োগ বাণিজ্য করা, ২ বারের বেশি সভাপতি না হওয়ার আইন ধাকলেও গোপনে পকেট কমিটি করে, প্রতিনিয়ত নিজ চাচাকে দীর্ঘ বছর ধরে সভাপতি হিসেবে মনোনয়ন দেন, সভাপতি শ.ম. শহিদুল ইসলাম বি.এ পাশ করেন নি। নিয়ম আছে সভাপতি হতে কমপক্ষে বি.এ পাশের যোগ্যতার প্রয়োজন। তিনি তার চাচার জন্য ভূয়া বিএ পাশের সার্টিফিকেট এর ব্যবস্থা করে দেন। এমনকি প্রধান শিক্ষকের নিজের কম্পউটার সার্টিফিকেট এবং বিএড সনদ জাল বলে অনেক শিক্ষক দাবী করেন। এসব ছাড়াও তিনি শিক্ষকদের অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। কথায় কথায় তিনি বলেন আমার বাপের প্রতিষ্ঠান তোরা সবাই আমার কর্মচারী। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ভুক্তভোগী শিক্ষিকা গতকাল নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে একটি মামলা দায়ের করেছেন বলে জানা যায়। উল্লেখ্য গত কয়েকদিন আগে বিদ্যালয়ের সামনে অবস্থিত সেলুন দোকানদার বাহারুল ইসলামকে বিনা কারণে অকথ্য ভাষায় গালি গালাজ করে তিনি জন রোষানলে পড়েন।
মানববন্ধনে বক্তারা আরও বলেন, ডিবি ইউনাইটেড মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মুকুল বিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং শিক্ষার্থীদের সাথে প্রায়ই খারাপ আচরণ করে থাকেন। অকথ্য ভাষায় গালিগালাজও করেন। এমনকি কথায় কথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের গায়েও হাত তোলেন। মানববন্ধনকারীরা অবিলম্বে প্রধান শিক্ষক মোমিনুর রহমান মুকুলকে বহিস্কারসহ তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জোর দাবি জানান।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।