শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪২ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি):-
নীলফামারীর ডিমলায় বয়সকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে মেয়ের সঙ্গে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়া মা মারুফা আকতার এবার মেয়ের সাথে এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছে । মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বিজ্ঞান বিভাগ থেকে আর মা মারুফা আকতার একই কলেজের বিএম শাখা থেকে। তারা দুজনেই উপজেলার শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব সরকারী মহাবিদ্যালয়ের পরীক্ষার্থী।
এর আগে ২০২০ সালের এসএসসি পরীক্ষায় একসাথে অংশ নিয়ে মেয়ের চেয়ে ভালো ফলাফল করেন মা। মা মারুফা আকতার পেয়েছিলেন জিপিএ ৪ দশমিক ৬০ এবং শাহী সিদ্দিকা জিপিএ ৩ দশমিক ০০।
জানা যায়, ২০০৩ সালে দশম শ্রেণীতেই লেখাপড়া শেখার অদম্য ইচ্ছে বুকে ধারণ করে মারুফা আকতারকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছিল। বিয়ের পর বন্ধ হয়ে যায় লেখাপড়া। পিঠাপিঠি চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতেই ১৫ টি বছর চলে গেল তার। সচরাচর কোনো কিশোরীর লেখাপড়ার ইচ্ছেশক্তি আর এত বছর থাকেনা। কিন্তু মারুফা আক্তার দেখিয়ে দিয়েছেন কীভাবে জয় করা যায় ইচ্ছাশক্তি দিয়ে। তিনি এবার নিজের মেয়ের সঙ্গেই এইচএসসি পরীক্ষা দিচ্ছেন।
মারুফা আক্তারের বাবার বাড়ি নীলফামারী ডিমলার নাউতারা গ্রামে। বিয়ে হয় একই উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের পুন্যারঝার গ্রামে। স্বামী সাইদুল ইসলাম পেশায় একজন মাছ ব্যবসায়ী। দুই ছেলে দুই মেয়ের মধ্যে মেয়ে শাহী সিদ্দিকা বড়। দ্বিতীয় ছেলে দশম শ্রেণী, তৃতীয় মেয়ে অষ্টম শ্রেণী ও ছোট মেয়ে পঞ্চম শ্রেনীতে অধ্যায়নরত।
নতুন করে পড়াশোনা শুরুর বিষয়ে জানতে চাইলে মারুফা আক্তার জানান, ২০০৩ সালে এসএসসি পরীক্ষার্থী ছিলেন। পড়াশোনার প্রতি তাঁর কঠিন আগ্রহ ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগেই বিয়ে হয়ে যায় তার তখন তিনি দশম শ্রেণীর ছাত্রী। বিয়ের পর চার ছেলেমেয়েকে মানুষ করতে নিজের পড়ার কথা ভাবার সময়ই হয়নি। পরে নিজের অদম্য ইচ্ছা ও স্বামী ও সন্তানদের অনুপ্রেরণায় নবম শ্রেণি থেকে শুরু করতে হলো তার লেখাপড়া। ভর্তি হন ছোটখাতা ফাজিল মাদ্রাসায়। সেবার মেয়েও নবম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এরপর ২০২০ সালে মেয়ের সাথে এস এস সি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে উত্তীর্ণ হন তিনি। এই বয়সে এসেও কেন পড়াশোনা করতে চাইলেন, জানতে চাইলে মারুফা বলেন, সমাজের আর দশটা মানুষের মতো আমিও একজন শিক্ষিত মানুষ হিসেবে যাতে নিজের পরিচয় দিতে পারি। এ জন্যই কষ্ট করে পড়াশোনাটা আবার শুরু করেছি। ইচ্ছে আছে এইচএসসি পাশ করে দেশের ভালো কোন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার।
মারুফা আক্তারের স্বামী সাইদুল ইসলাম বলেন, আমি তার ইচ্ছেটার মর্যাদা দিয়েছি। সে যতদূর পড়াশোনা করতে পারে, আমি চালিয়ে যেতে সহযোগিতা করবো।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।