শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ০২:০১ অপরাহ্ন
জামান মৃধা, ডিমলা,নীলফামারী প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় জাল সনদে নিয়োগ হওয়ায় সাতজন বেসরকারি স্কুল-কলেজ শিক্ষকের নিয়োগ বাতিল করা হয়েছে। এছাড়া জমা দিতে হবে বেতন বাবদ নেয়া টাকা। তাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে একজন কলেজ ও ছয়জন স্কুলের শিক্ষক রয়েছেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ডিমলায় যে ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সাতজন শিক্ষকের জাল সনদের প্রমাণ পাওয়া গেছে এর মধ্যে ছয়জন শিক্ষক সরকারি বেতন তুলেছেন। বাকি একজন শিক্ষক এমপিওভুক্ত না হওয়ায় সরকারি কোন আর্থিক সুবিধা পাননি।
এমপিও না হওয়া ওই একজন শিক্ষক হলেন- উপজেলার জটুয়াখাতা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. আলমগীর হোসেন। জাল সনদে এমপিও ভুক্ত হওয়া ওই ছয়জন শিক্ষক বিভিন্ন অঙ্কে বেতনভাতা বাবদ সরকারি তহবিল থেকে অর্ধকোটি টাকার ঊর্ধ্বে উত্তোলন করেছেন।
এরমধ্যে সোনাখুলি চাপানি সৈকত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কৃষি) মো. আশরাফ হোসেন ১১ লাখ ১২ হাজার ৪৮৭, জটুয়াখাতা দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক ( ইসলাম ধর্ম) মো. সাইফুর রহমান ২ লাখ ৮ হাজার, খগাখড়িবাড়ী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (কম্পিউটার) নাজিফা আলম ৮ লাখ ৪৫ হাজার ৭৫০, তিস্তা কলেজের প্রভাষক (কম্পিউটার) মো. আব্দুর রাজ্জাক ১২ লাখ ৭৪ হাজার ৭৯৩, বালাপাড়া বহুমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক (কম্পিউটার) মো. আনারুল ১১ লাখ ২৯ হাজার ৭৯৮, কাকড়া সাইফুন সাইড নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সরকারি শিক্ষক (সমাজ-বিজ্ঞান) মো. সাইফুল ইসলাম ১৬ লাখ ২০ হাজার ২৪৮ টাকা উত্তোলন করেছেন।
মন্ত্রণালয় সূত্রে আরও জানা গেছে, জাল সনদে নিয়োগ পাওয়া এসব বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের এসব শিক্ষক-কর্মচারীকে চাকরিচ্যুত করার নির্দেশ দিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। একই সঙ্গে জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা করতেও চিঠি দিয়েছে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরকে।
চিঠিতে ওই জাল সনদধারীদের বিরুদ্ধে সাত ধরনের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে অবৈধভাবে গ্রহণ করা বেতন সরকারি কোষাগারে জমা দেয়া। যারা অবসরে গেছেন তাদের অবসর সুবিধা বাতিল করা। স্বেচ্ছায় অবসরে যাওয়া শিক্ষক-কর্মচারীদের আপত্তির টাকা প্রধান শিক্ষক বা অধ্যক্ষের মাধ্যমে আদায় করা। জাল সনদধারীদের নিয়োগ কার্যক্রমের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ প্রভৃতি।
শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদপ্তরের (ডিআইএ) যাচাই-বাছাই করে সারাদেশে ৬৭৮ জন জাল সনদধারী শিক্ষক-কর্মচারী চিহ্নিত করা হয়েছে। এরপর এবছরের ৮ই ফেব্রুয়ারি সনদ প্রদানকারী দপ্তরের প্রধান প্রতিনিধির সমন্বয়ে অভিযুক্ত শিক্ষক কর্মচারীদের সনদের সত্যতা যাচাই-বাছাই পূর্বক ৬৭৮ জনের জাল সনদে তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৬৭৮ জন জাল সনদধারীর মধ্যে ডিমলা উপজেলায় সাতজন শিক্ষক। তার মধ্যে ছয়জন শিক্ষক সরকারের ৬১ লাখ ৯১ হাজার ৭৬ টাকা অবৈধভাবে বেতন ভাতা ভোগ করেছেন।
জাল সনদ নয় বলে দাবি করেছেন অভিযোগ ওঠা কয়েকজন শিক্ষক। এ আদেশের বিরুদ্ধে আদালতে তারা মামলা করার কথা জানান। সনদ আসল বলে দাবি করে দক্ষিণ কাকড়া সাইফুন সাইড নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক সাইফুল ইসলাম বলেন, এখনো মন্ত্রণালয়ের চিঠি পাইনি। চিঠি পেলে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আপিল করব অথবা আদালতের আশ্রয় নেব। আমি এখনো বিদ্যালয়ে নিয়মিত পাঠদান করাচ্ছি।
তিস্তা ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ সৈয়দ আলী বলেন, আমাদের কলেজে একজন প্রভাষক (কম্পিউটার) মো. আব্দুর রাজ্জাক জাল সনদ হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে বলে মৌখিকভাবে জেনেছি। এ বিষয়ে কাগজপত্র হাতে পেলে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা মতো ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলা শিক্ষা শিক্ষা অফিসার মো. হাফিজুর রহমান বলেন, নীলফামারীতে জাল সনদধারী শিক্ষকদের অফিস আদেশ এখনো পাইনি। আদেশের পর নির্দেশনা মোতাবেক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।