শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৫২ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্কঃ এ রোগটির নাম ওৎৎরঃধনষব নড়বিষ ংুহফৎড়সব (ওইঝ) বা সহজ বাংলায় যাকে বলে মানসিক অস্থিরতাজনিত আমাশয় রোগ। জেনারেল প্র্যাকটিশনার থেকে শুরু করে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছে পরিপাকতন্ত্রের এ সমস্যা নিয়ে প্রচুর রোগী আসেন। পরিপাকতন্ত্রের এ বিশেষ রোগ নিয়ে গবেষণার কোনো অন্ত নেই। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ রোগের কোনো স্বীকৃত কারণ পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার প্রায় ৯-১২ শতাংশ এ রোগে আক্রান্ত। পুরুষ বা মহিলা যে কেউই এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনুপাত ১০:১১। এ রোগের কোনো নির্দিষ্ট বয়সসীমা নেই। যে কোনো বয়সেই যে কেউ এ রোগে আক্রান্ত হতে পারেন।
কারণ : আইবিএস রোগের নির্দিষ্ট কোনো কারণ জানা না গেলেও বিজ্ঞানীরা বেশ কটি ব্যাপারকে এ রোগের জন্য দায়ী বলে মনে করেন। যেমন- মানসিক কারণ, পরিপাকতন্ত্রের পরিবর্তিত চলাচল, পরিপাকতন্ত্রের প্রসারণসংক্রান্ত জটিলতা ইত্যাদি। এসব কারণের মধ্যে ৫০ শতাংশ রোগীই মানসিক সমস্যায় ভোগেন। যেমন- উত্তেজনা, দুশ্চিন্তা, অবসাদগ্রস্ততা, ভয় পাওয়া, মানসিক বিপর্যস্ততা ইত্যাদি। পরিপাকতন্ত্রের পরিবর্তিত আচরণ আরেকটি উলেস্নখযোগ্য কারণ।
উপসর্গ : এ রোগে যেসব উপসর্গ দেখা দেয় তাদের আমরা দুটি ভাগে ভাগ করতে পারি। একটি হলো পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা অন্যটি হলো অন্যান্য শারীরিক সমস্যা। পরিপাকতন্ত্রের সমস্যাগুলো হলো তলপেটে ব্যথা, যা টয়লেটে যাওয়ার পর কমে যায়, পেট ফুলে ওঠা। আইবিএস রোগীরা দুই ধরনের সমস্যা নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারেন। এক ধরনের রোগী আসেন ডায়রিয়াজনিত এবং অন্য ধরনের রোগী আসেন কোষ্ঠকাঠিন্যজনিত সমস্যা নিয়ে। আবার অনেক রোগী আসেন যাদের এ দুই ধরনের সমস্যাই থাকে। যেসব রোগী ডায়রিয়াজনিত সমস্যা নিয়ে আসেন তারা প্রায়ই ঘনঘন টয়লেটে যাওয়া, পরিষ্কারভাবে পায়খানা না হওয়া, আম যাওয়া ইত্যাদি উপসর্গের কথা বলেন। আর তারা কোষ্ঠকাঠিন্য, পায়খানার রাস্তায় ব্যথা ও পেটে ব্যথা এসব সমস্যায় ভোগেন। আইবিএসের অনেক রোগী অনেক সময় মলদ্বারের বিভিন্ন জটিল রোগে ভোগেন। আইবিএসের বেশির ভাগ মহিলা ও পুরুষ রোগী আবার এনাল ফিশার রোগে ভোগেন। অনেকে পাইলস রোগে আক্রান্ত হন। এনাল ফিশার বা পাইলস রোগে আক্রান্ত হলে পায়খানার রাস্তা দিয়ে রক্ত যেতে পারে। পায়খানার রাস্তা ফুলে উঠতে পারে, পায়খানার পর জ্বালা-যন্ত্রণা বা ব্যথা করতে পারে অথবা পায়খানার রাস্তা বের হয়ে আসতে পারে। উপসর্গের ক্ষেত্রে অত্যন্ত উলেস্নখযোগ্য যে, রোগীর বিশেষ ধরনের খাবার খাওয়ার পর রোগের উপসর্গ প্রকটভাবে দেখা দেয়। বেশ কিছু খাবার রয়েছে যেমন- গরুর দুধ, গোশত, চিংড়ি মাছ, তেল বা মসলা জাতীয় খাবার। এসব খাবার খেলে রোগীর পেটব্যথা ও পাতলা পায়খানা দেখা দেয়।
পরীক্ষা-নিরীক্ষা : আইবিএস রোগ নিরূপণের জন্য বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। যেমন- রক্ত পরীক্ষা, মলদ্বারে বিশেষ ধরনের যন্ত্রের মাধ্যমে পরীক্ষা, বিশেষ এক্স-রে করা যেতে পারে। কলোনস্কোপি, সিগময়ডোস্কোপি অবশ্যই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের মাধ্যমে করানো উচিত। কারণ অনেক সময় মলদ্বার ও বৃহদন্ত্রের ক্যান্সার রোগীরাও একই ধরনের উপসর্গ নিয়ে ডাক্তারের কাছে আসতে পারেন। বিশেষ ধরনের পরীক্ষার মধ্যে রয়েছে থাইরয়েড হরমোন, মল, দুধ সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা ইত্যাদি। আইবিএস রোগে চিকিৎসার অন্যতম ধাপ হলো রোগীকে আশ্বস্ত করা। বেশির ভাগ রোগীই মনে করেন তাদের ক্যান্সার হয়েছে। এ ব্যাপারে তারা অত্যন্ত উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েন। ফলে তাদের রোগের উপসর্গ আরো প্রকট হয়ে ওঠে। প্রত্যেক রোগীকে অবশ্যই যথেষ্ট সময় দিতে হবে। ধৈর্যসহ তাদের সব সমস্যার কথা শুনতে হবে, প্রয়োজনীয় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে। তাদের বুঝতে হবে যে, এটা দেহের কোনো অঙ্গের রোগ নয়, এটা অনেকটা মানসিক অস্থিরতা ও অন্ত্রের উল্টাপাল্টা আচরণের ফল। যেসব রোগী এসব উপদেশের পরও আশ্বস্ত না হন কেবল তাদের চিকিৎসা প্রয়োজন হয়। প্রত্যেক রোগীর খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাত্রা সম্পর্কে ইতিহাস নিতে হবে। এসব রোগীর খাদ্যে আঁশযুক্ত খাবার বেশি করে খেতে বলতে হবে, যেন কোষ্ঠকাঠিন্য কমে আসে। অন্যদিকে যেসব রোগীর ডায়রিয়াজনিত আইবিএস থাকে তাদের খাদ্যের তালিকা থেকে অতিরিক্ত শর্করা জাতীয় খাবার, ফল, চা ইত্যাদি কম করে খেতে বলতে হবে। এ ছাড়াও যেসব খাবার খেলে যাদের সমস্যা হয়, তা খাদ্য তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে। অনেক রোগীর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, দুধ বা দুধ জাতীয় খাবার বাদ দিলে তারা বেশ ভালো থাকেন। যেসব রোগীকে তার রোগ সম্পর্কে পুরোপুরি বুঝিয়ে বলা এবং আশ্বস্ত করার পরও উপসর্গ পুরোপুরি না যায়, কেবল তাদের ক্ষেত্রে ওষুধ ব্যবহার করা হয়। এসব ওষুধের বেশির ভাগই তলপেটের ব্যথানাশক এবং অবসাদ, হতাশা দূর করার ওষুধ। যেসব রোগীর খুব ঘন ঘন বাথরুমে যেতে হয় বা পায়খানা এলে ধরে রাখতে পারেন না কেবল তাদের ক্ষেত্রে ডায়রিয়া প্রতিরোধকারী ওষুধ প্রয়োগ করতে হবে। কোষ্ঠকাঠিন্য ধরনের আইবিএস রোগীদের ক্ষেত্রে আঁশজাতীয় খাবারের পাশাপাশি ইসবগুলের ভুসি খাওয়ার জন্য উপদেশ দেয়া হয়। অনেক রোগী, যার আইবিএসের পাশাপাশি মলদ্বারে বিভিন্ন সমস্যা যেমন এনাল ফিশার বা পাইলস বা মলদ্বার বের হয়ে আসা রোগে আক্রান্ত হয় তাদের অবশ্যই বৃহদন্ত্র ও মলদ্বারের বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ক্ষেত্রে বাংলাদেশেই সব ধরনের উন্নত চিকিৎসার প্রচলন রয়েছে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।