শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:০১ অপরাহ্ন
বিশেষ প্রতিনিধি: সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার অর্থাৎ মাসে ৪/৫ দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত থাকা, অতিরিক্ত অ’র্থের বিনিময়েে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলক কোচিং করানো, শিক্ষার্থীদের শারীরিক শা’স্তি প্রদান, শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে অ’সদাচরণ এবং স্বে’চ্ছাচারিতাসহ নানা অ’নিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেছে কুমিল্লার হোমনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম এর বিরুদ্ধে।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, গত ১৫ নভেম্বর,২০২২ খ্রি. তারিখে উক্ত প্রধান শিক্ষক হোমনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে যোগদানের পর থেকে এভাবেই অনিয়মিতভাবে অফিস করে আসছেন, বে’পরোয়াভাবে করে যাচ্ছেন সকল অ’নিয়ম ও দু’র্নীতি।
রোববার ( ২৪ সেপ্টেম্বর,২০২৩ খ্রি.) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম তার অফিসে নেই। তার বিদ্যালয়ে অনুপস্থিতির কারণ জানতে চাইলে, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা জানান, ‘স্যার শুধু সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার স্কুলে আসেন, সপ্তাহের অন্য দিনগুলোতে আসেন না।’
মঙ্গলবার(২৬ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ খ্রি.) তারিখে হোমনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, পূর্বনির্ধারিত সময়সূচি মোতাবেক অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম তার ব্যক্তিগত গাড়িতে করে ( ঢাকা মেট্রো-চ, ১২-০৯০৩) বিদ্যালয়ে এসে উপস্থিত হয়েছেন। তিনি এভাবেই প্রতি মঙ্গলবার কুমিল্লা থেকে ব্যক্তিগত গাড়িতে করে বিদ্যালয়ে আসেন।
কোচিং এর বিষয়ে শিক্ষার্থীদের কাছে জানতে চাইলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক শিক্ষার্থী জানান, ‘ আমরা কোচিং করতে চাই না। প্রধান শিক্ষক তাজুল ইসলাম স্যার এই কোচিং ৮ম -১০ম শ্রেণির ছাত্রদের জন্য বাধ্যতামূলক করে দিয়েছেন। কোচিং বাবদ প্রত্যেক ছাত্রের কাছ থেকে ১হাজার -১ হাজার ২ শ’ টাকা করে নেওয়া হচ্ছে। আর কেউ কোচিং না করলে তাকে ২ হাজার টাকা দিতে হবে বলেও জানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এই অতিরিক্ত টাকা দিতে আমাদের অভিভাবকদের ওপর অতিরিক্ত চাপ পড়ছে। এছাড়া সকাল ৮ টা থেকে কোচিং শুরু করার কারণে আমরা অনেকেই সকালে নাস্তা করে স্কুলে আসতে পারি না। আমরা অত্যন্ত টায়ার্ড হয়ে যাই। কিন্তু আমরা স্যারের ভয়ে কোনোকিছু বলার সাহস পাই না।’
কোচিং এর বিষয়ে একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘আমরা কোচিং করাতে চাইনি। হেড স্যারের নির্দেশে আমরা কোচিং করাতে বাধ্য হয়েছি।’
আপনারা বিধি মোতাবেক শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে বাধ্যতামূলক কোচিং করাতে পারেন কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে শিক্ষকরা বলেন, ‘না, এটি করা যায় না। কিন্তু হেড স্যারের নির্দেশ তো আমরা অমান্য করতে পারি না।’
প্রধান শিক্ষকের আচার-আচরণ সম্পর্কে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক শিক্ষক – শিক্ষার্থী জানান, ‘স্যারের আচার-আচরণ ভালো না। তিনি শিক্ষার্থীদের অনেক সময় বেত্রাঘাত করেন এবং ছাত্র ও শিক্ষকদের সাথে রূঢ় আচরণ করেন। এছাড়া স্যারের সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা বলা যায় না।’
হোমনা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম এর কাছে বাধ্যতামূলক কোচিং করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি তা স্বীকার করে বলেন, ‘শিক্ষার মানোন্নয়ন এবং শিক্ষার্থীরা যাতে মাদকাসক্ত হতে না পারে সেজন্যই কোচিং এর ব্যবস্থা করেছি।’
আপনি সপ্তাহে একদিন ( প্রতি মঙ্গলবার) বিদ্যালয়ে আসেন আর বাকি দিনগুলোতে আসেন না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি সঠিক উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘ মাঝে মাঝে বিভিন্ন অনুষ্ঠানগুলোতেও আমি বিদ্যালয়ে আসি।’
অভিযোগ রয়েছে আপনি শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের সাথে রূ’ঢ় আচরণ করেন এবং অনেক সময় শিক্ষার্থীদের মা’রধর করেন। এ বিষয়ে আপনার বক্তব্য কী- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি রূ’ঢ় আচরণের কথা অস্বীকার করে বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছুটা মা’রধর করা লাগে।’
আপনি কোচিং করিয়ে শিক্ষার্থীদের নিকট থেকে মাথাপিছু ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২ শ’ টাকা করে নিচ্ছেন সেই টাকা কি সরকারি ফাণ্ডে জমা করেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, ‘যেসব শিক্ষক কোচিং করান তাদের মাঝে বিতরণ করা হয়। আর আমি তো সবার কাছ থেকে ১ হাজার টাকা নেই না, যারা অক্ষম তাদের কাছ থেকে ৫শ’ টাকাও নেই।’
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন শিক্ষক বলেন, ‘কোচিং এর টাকা হেড স্যারও নেন।’
সাক্ষাৎকারের এক পর্যায়ে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মো. তাজুল ইসলাম এই প্রতিবেদককে অ’বৈধ আর্থিক সুবিধা প্রদানের প্রস্তাব করে সংবাদটি পত্রিকায় প্রকাশ না করারও অনুরোধ জানান।
অভিযোগের বিষয়ে জেলা শিক্ষা অফিসার মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘ উনি নিয়ম-নীতির বাইরে কিছুই করতে পারবেন না। এরকম কিছু হয়ে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।