রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন
রফিকুল ইসলাম মামুন, সাংবাদিক ও সমাজকর্মি।
সিলেট সদর উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল ০৭নং মোগলগাঁও ইউনিয়নের ০১নং ওয়ার্ডের আমানতপুর নামক গ্রামের পিতাঃ মরহুম হাছির আলী, মাতাঃ মরহুমা আপ্তাবান বিবির ঔরসে জন্ম গ্রহণ করেন বর্তমান সময়ের আলোড়ন সৃষ্টিকারি, মিষ্টিভাষা, সুললিত কন্ঠের অধিকারি, সত্য প্রচারে নির্ভীক, দ্বীনের দায়ি, হযরত মাওলানা মর্তুজা আলী (দাঃবাঃ) আমানতপুরী।
দারিদ্র্যতার সাথে যুদ্ধ করা পরিবারে জন্ম গ্রহণ করা এই দ্বীনের দায়ি ছোটবেলায় পিতাকে হারিয়ে এতিম হয়ে যান, মাতা আপ্তাবান বিবি উনার চারজন পুত্র সন্তানদের নিয়ে অনেক ত্যাগ তীতিক্ষা পরিশ্রম করে সংসার চালিয়ে যান।
মাওলানা মর্তুজা আলী আমানতপুরী তিনির বাড়ির সাথে থাকা আমানতপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার জীবন শুরু করেন, পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতিও ছিলো তার অধীর আগ্রহ, তিনি এবং উনার চাচাতো ভাই আব্দুল মন্নান লাইলু ছিলেন একসময়কার কৃতি ফুটবলার সিলেট সদরের ঐতিহ্যবাহি কিশোর সংঘ ক্লাবের কৃতি খেলোয়াড়।
প্রাথমিক শিক্ষা জীবনের গন্ডি পেরিয়ে তিনি ভর্তি হন পার্শ্ববর্তী ছাতক উপজেলার ঐতিহ্যবাহি দ্বীনি বিদ্যাপীঠ গোবিননগর ফজলিয়া আলিয়া মাদরাসায়, সেখানের পড়া শেষ করে ভর্তি হন সিলেটের খ্যাতিমান বিদ্যাপীঠ ঐতিহ্যবাহি সৎপুর কামিল মাদরাসায় এবং সেখান থেকে হাদীস বিভাগে সর্বোচ্ছ ডিগ্রি লাভ করেন।
কিছুদিন যেতে না যেতে সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলার কামাল বাজার আলিয়া মাদরাসার আরবী বিভাগের প্রভাষক হিসাবে চাকুরিতে যোগদান করেন, এবং অনেক সুনামের সাথে তিনি শিক্ষকতা চালিয়ে যেতে থাকেন।
মাঝেমধ্যে বিভিন্ন মাহফিলের দাওয়াত পান এবং সে গুলোতে গিয়ে সুললিত কন্ঠে বয়ান পেশ করেন এতে দিনদিন উনার খ্যাতি বৃদ্ধি পেতে থাকে, কামাল বাজার আলিয়া মাদরাসার অধ্যক্ষের সাথে কি একটি ঘটনা নিয়ে মনমালিন্য দেখা দেয়াতে উনি চাকুরি ছেড়ে দেয়ার সিদ্বান্ত গ্রহণ করেন, অনেক মহল থেকে চাকুরি ছেড়ে না দিতে অনুরোধ করা হলে উনি পরিষ্কার ভাষায় বলেন রিজিকের মালিক চাকুরি নয়, রিজিকের মালিক আমার আল্লাহ সুবহানাহু তায়ালা।
চাকুরি ছেড়ে দিয়ে বাড়িতে চলে আসেন অবসর সময় টুকু কাটিয়ে দিতে ছোট্ট পিপিলিকার সাথে খেলা করতেন, তখনকার সময়ে দশ টাকার রুজি বিস্কুট এনে তা ছড়িয়ে ছিটিয়ে দিয়ে পিঁপিঁলিকাদের জড়ো করতেন।
রাতের আাধাঁরে নিজ বিছানা থেকে পলায়ন করে নির্জন স্থানে গিয়ে মহান রবের ইবাদতিতে মশগুল হতেন, এরপর বাংলাদেশের অন্যতম আধ্যাত্মিক সম্রাট, ওলিকুল শিরোমণি, মরহুম আল্লামা আব্দুল লতিফ চৌধুরী ফুলতলি ছাহেব কিবলা (রহঃ) এর ডাকে সাড়া দিয়ে তিনির সানিধ্যে চলে যান, এবং সেখান থেকে ইলমে তাসাউফের জ্ঞান অর্জন করে থাকেন।
বর্তমানে ওলিকুল শিরোমণি আল্লামা ইমাদ উদ্দিন চৌধুরী ফুলতলির নির্দেশ মোতাবেক বিভিন্ন জায়গায় খানকা পরিচালনা করে থাকেন, এবং সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলার নিশ্চিন্তপুর মহিলা মাদরাসার প্রিন্সিপাল হিসাবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন।
মাওলানা মর্তুজা আলী আমানতপুরী সাংসারিক জীবনে পদার্পণ করেন কামাল বাজারের পার্শ্ববর্তী ধরগাঁও হাফিজিয়া মাদরাসার সুপার ফরহাদপুর গ্রামের হাফিজ শফিকুর রহমানের একমাত্র কন্যা মরহুমা ফাতেমা বেগম স্বপ্নার সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন, তাদের তিনজন পুত্র সন্তান রহিয়াছেন, নাঈম মোস্তফা, ফাহিম মোস্তফা, মুনাঈম মোস্তফা, ওরা সবাই লেখাপড়ায় রয়েছেন।
রসিকতাপূর্ণ জীবনের অধিকারি মাওলানা মর্তুজা আলী আমানতপুরী আধ্যাত্মিক জগতের বিশাল এক গানের ভাণ্ডার, তিনি নিজেও অনেক ধর্মীয় ভাব ধারার গানের রচয়িতা, ছন্দেবন্ধে বয়ান পেশ করে থাকেন, বিশাল উদার মনের অধিকারি, প্রিয় মাওলানা নিরবে নিভৃতে অনেক দান খয়রাত করে থাকেন, আত্মীয়দের পেলে
খুববেশি খুশি হন এবং সমাদর করে থাকেন।
অমায়িক ব্যাবহারের চরিত্রের অধিকারি ছোটবড় সকলের সাথে ভেদাভেদ ভুলে মিলেমিশে থাকাটাকে পছন্দ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন।
বর্তমান সময়ে সিলেটের প্রতিটি অঞ্চলের দ্বীনি মাহফিল গুলোতে উনার সুললিত কন্ঠের, ছন্দেবন্ধের বয়ান শুনা যায়, হাজার হাজার মানুষ ঝড়ো হয় উনার মধুমিশ্রিত যাদুময় বয়ান শুনতে, আমি অধম উনাকে খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য অর্জন করেছি, আমরা একই পরিবারের সদস্য, উনি আমার চাচাতো ভাই।
সিলেট সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়নের রত্নগর্ভা সন্তান, বিশিষ্ট আলেমেদ্বীন, যার সুনাম দেশ বিদেশে ছড়িয়ে পড়েছে, উনার হাজার হাজার ভক্তবৃন্দ রহিয়াছেন, যাকে সবাই আমানতপুরী হুজুর বলে সম্বোধন করে থাকেন, তিনিই হযরত মাওলানা মর্তুজা আলী(দাঃবাঃ) আমানতপুরী, সরল সঠিক পথের অভিযাত্রী, দ্বীন প্রচারের একজন সঠিক দায়ি, মহান আল্লাহ তায়ালা তারই দ্বীনের দায়িকে সুস্থতার সহিত নেক হায়াত দান করুন, আমিন।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।