রবিবার, ১৩ Jul ২০২৫, ১২:৫৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক, ঈশ্বরদী:**
পদ্মা নদীর সাড়াঘাট এলাকায় হাইকোর্টের একটি পুরনো আদেশকে ঢাল বানিয়ে ১৭ বছর ধরে অবৈধ বালু উত্তোলন করছে জাকারিয়া পিন্টু, সুলতান আহমেদ টনি ও ‘বালু দস্যু’ আবু সাঈদ খানের নেতৃত্বাধীন চক্র। তাদের তৎপরতায় নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে হার্ডিং ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের ভিত্তি হুমকির মুখে। অন্যদিকে, নাটোরের লালপুরে বৈধ বালু মহালের ইজারাদাররা প্রতিবন্ধকতার মুখে—প্রতিবছর প্রায় ১০ কোটি টাকা রাজস্ব ক্ষতির শিকার সরকার।
কীভাবে শুরু হয়েছিল এই অবৈধ কার্যক্রম?**
২০০৮ সালে পরিবেশ রক্ষার নামে পদ্মা নদীর ১২টি পয়েন্ট থেকে ১০ লাখ কিউবিক ফুট বালু উত্তোলনের অনুমতি পায় তিন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান:
মেসার্স বিশ্বাস এন্টারপ্রাইজ** (মালিক: সুলতান আলী বিশ্বাস, রূপপুর)
*মেসার্স শাওন এন্টারপ্রাইজ** (মালিক: আবু সাঈদ খান, কুষ্টিয়া)
*মেসার্স আনোয়ারুল হক মাসুম** (মালিক: কামরুন্নাহার, কুষ্টিয়া)।
তবে অনুমতির পরিমাণ ছাড়িয়ে তারা ব্যাপকভাবে নদী খনন শুরু করে। অংশীদারদের মধ্যেকার বিরোধ ও আদালতের মামলা সাময়িকভাবে কাজ বন্ধ করলেও, আওয়ামী লীগ নেতা মাহবুব আলম হানিফের প্রভাবে পুনরায় কার্যক্রম শুরু হয়।
হাইকোর্টের আদেশের অপব্যবহার**
এই চক্র ১৭ বছর আগের হাইড্রোগ্রাফি জরিপের আদেশকে “চিরস্থায়ী লাইসেন্স” হিসেবে ব্যবহার করছে, যদিও পদ্মার গতিপথ ও গভীরতা সম্পূর্ণ বদলে গেছে। স্থানীয়রা অভিযোগ করছেন:
২০০ বালগেট বালুর অনুমতি থাকলেও তারা প্রতিদিন শত শত গেট বালু তুলছে। বিআইডব্লিউটিএ কর্মীরা চোখ বন্ধ করে দায়িত্ব পালন করছেন!”
“যেখানে নদী ছিল, সেখানে এখন ফসলের মাঠ; আর যেখানে বসতবাড়ি ছিল, সেখানে গড়িয়েছে নদী!”
*জাতীয় নিরাপত্তা হুমকির মুখে**
হার্ডিং ব্রিজ ও লালন শাহ সেতু**র ভিত্তি দুর্বল হয়ে পড়েছে।
রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প** (মাত্র ৩-৪ কিলোমিটার দূরে) ভূমিধসের ঝুঁকিতে। – নদীর গতিপথ পরিবর্তনে বাড়ছে **বন্যা ও ভাঙনের আশঙ্কা*
*প্রশাসনের নিষ্ক্রিয়তা ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া**
গত সপ্তাহে গণমাধ্যমে প্রতিবেদন প্রকাশের পর ঈশ্বরদী প্রশাসন ক্ষণিকের জন্য অভিযান চালালেও, ৩ জুলাই থেকে পুনরায় সক্রিয় হয় চক্রটি। অভিযোগ রয়েছে, স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসন ইচ্ছাকৃতভাবে নিষ্ক্রিয়। চক্রটির সদস্যরা:
– বিএনপি-আওয়ামী লীগের প্রভাবশালী নেতাদের সঙ্গে যোগসাজশ করছে।
– সাংবাদিক ও স্থানীয়দের **হুমকি-ধামকি** দিচ্ছে, প্রকাশ্যে **অস্ত্রের মহড়া** দিয়ে ভীত সন্ত্রস্ত রাখছে।
*লালপুরে বৈধ বালু মহালের বিপর্যয়**
নাটোরের লালপুরের **দিয়ার বাহাদুর বালু মহাল** (সরকারি রাজস্ব আয়ের অন্যতম উৎস) ইজারাদাররা চরম ক্ষতির শিকার। গত বছর **রাসেল এন্টারপ্রাইজ** ইজারা নিলেও অবৈধ বালু উত্তোলনের কারণে টাকা জমা দিতে ব্যর্থ হয়ে মামলার শিকার হয়। এবার
মোল্লা এন্টারপ্রাইজ** ১০ কোটি টাকায় ইজারা নিলেও চক্রটি তাদের কার্যক্রমে বাধা দিচ্ছে:
*মাঝি-মাল্লাদের ওপর হামলা** ও মিথ্যা মামলা দেওয়া হচ্ছে।
*স্পিডবোর্ডে অস্ত্রের মহড়া** দিয়ে ব্যবসায়ীদের ভয় দেখানো হচ্ছে।
মোল্লা এন্টারপ্রাইজের মালিক বলেন, *”এভাবে চললে ভবিষ্যতে কেউ ইজারা নেবে না। প্রশাসনকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে!”*
এলাকাবাসীর দাবি: অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ করে **ড্রেজার ও যন্ত্রপাতি জব্দ** করা হোক।
জাকারিয়া পিন্টু, আবু সাঈদ, টনি বিশ্বাস ও সহযোগীদের বিরুদ্ধে **কঠোর আইনি ব্যবস্থা** নেওয়া হোক।
হার্ডিং ব্রিজ, লালন শাহ সেতু ও রূপপুর প্রকল্পের **জরুরি সুরক্ষা** নিশ্চিত করা হোক।
*নতুন হাইড্রোগ্রাফি জরিপ** চালিয়ে নদীর গতিপথ পুনর্নির্ধারণ করা হোক।
স্থানীয়দের আর্তনাদ
স্থানীয় রফিকুল ইসলাম বলেন, *”নদী যাবে, সেতু যাবে, তারপর আমাদের ঘরবাড়ি… চোখের সামনে সব ধ্বংস হচ্ছে, কিন্তু প্রতিবাদ করলেই হামলার ভয়!”*
**পরিবেশবিদ ও প্রকৌশলীদের সতর্কতা
*”এখনই ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বড় ধরনের বিপর্যয় অবশ্যম্ভাবী।”*
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।