মঙ্গলবার, ২৪ ডিসেম্বর ২০২৪, ০২:১৩ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি)
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার কৃষক চলতি বোরো মৌসুমে ধান বিক্রি করতে এসে আড়তদার ও ফরিয়া চক্রের প্রতারণার শিকার হচ্ছেন প্রতিনিয়ত সাধারণ কৃষক। ভুক্তভোগী কৃষকদের অভিযোগ ব্যবসায়ী নিয়ম-নীতি লঙ্ঘন করে স্থানীয় ধান/ভুট্টা বাজারে আড়তদার ও ফরিয়া চক্রটি সংঘবদ্ধ হয়ে ৪০ কেজিতে এক মণের পরিবর্তে ৪২ কেজি নির্ধারণ করায় প্রতি মণে ৭০-৮০ টাকা করে ঠকছেন হতদরিদ্র কৃষকেরা। দীর্ঘদিন ধরে ওজনে এমন কারচুপি চললেও উপজেলার প্রায় ৪০-৪৫ হাজার কৃষক এই চক্রের হাতে জিম্মি হয়ে তা নীরবে মেনে নিচ্ছেন ও চোখের জল ফেলছেন প্রতিনিয়ত। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিমলা উপজেলায় ধান ক্রয়ের ৭০-৮০ জন আড়তদার এবং কয়েকশ ফরিয়া রয়েছে। এরা মৌসুমভিত্তিক ধান, ভুট্টা,ডাল,বাদাম,মরিচসহ অন্যান্য মালামাল ক্রয় করে। আড়তদার মালিক সমিতির অধীনে এদের রয়েছে একটি শক্তিশালী চক্র। বিভিন্ন মৌসুমে এই চক্র নিজেদের ইচ্ছামতো উৎপাদিত কৃষি পণ্যের মূল্য ও পরিমাণ নির্ধারণ করে কৃষকদের উৎপাদিত পণ্য কম মূল্যে বিক্রি করতে বাধ্য করছেন ফরিয়া/আড়তরা।
ভুক্তভোগী কৃষক ভুট্টো মিয়া (গয়াবাড়ী ইউনিয়নের) জানান, চলতি বোরো মৌসুমে বাজারে প্রতি মণ (৪০ কেজি) ধান ৯০০-৯৫০ টাকা থাকলেও ডিমলা উপজেলায় ধানের বাজারের আড়তদারের তারা ৪২ কেজিতে এক মণ নির্ধারণ করে তা ৯০০ টাকায় কিনছেন। এতে কৃষকরা মণপ্রতি ধানে ৭০-৮০ টাকা করে ঠকছেন। এতে আপত্তি জানালে ফড়িয়া এবং আড়তদারেরা কৃষকদের কাছ থেকে কেউ ধান কিনছেন না বলে অভিযোগ করে সাধারণ কৃষক।
টেপাখরিবাড়ী ইউনিয়নের চরখরিবাড়ী গ্রামের কৃষক মুক্তার হোসেন জানান, গয়াবাড়ীর (শুটিবাড়ী) হাটে ধান বিক্রি করতে এসে দেখেন ৪০ কেজির স্থালে ৪২ কেজিতে মণ হিসাব করা হচ্ছে। এ সময় তিনি এর প্রতিবাদ জানালে আড়তদার তার ধান কিনতে অস্বীকৃতি জানান, পরে অন্য আড়তে গিয়েও একই নিয়মের কথা জানতে পারেন। পরে ধান ফিরিয়ে নেওয়ার পরিবহণ খরচের কথা চিন্তা করে তিনি ওই নিয়মেই ধান বিক্রি করতে বাধ্য হন।
আরেক হতদরিদ্র কৃষক মিলন শেখ জানান, ৪০ কেজির জায়গায় আড়তদার দুই কেজি ধান বেশি নিচ্ছে। কিন্তু আড়তদার ফড়িয়ারা একজোট হয়ে এই অনিয়ম করায় তারা এ অন্যয় মেনে নিতে বাধ্য হচ্ছেন বলে দুঃখ করেন। ডিমলা উপজেলার আড়ৎদার/ব্যবসায়ীরা ৪২ কেজিতে মন হিসাব করার কথা স্বীকার করে বলেন, আমরা ঠিকই ৪২ কেজিতে মন হিসাব করি। এজন্য অন্যান্য বাজারের তুলনায় এখানে ধানের মূল্যও বেশি। এতে কৃষকদের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। রবিবার সকালে ডিমলা সদর উপজেলার বাবুর হাটে সরেজমিনে ধানের হাট ঘুরে দেখা গেছে, অনেক কৃষক এই পরিমাপের কথা জেনে বিক্রি করতে আনা ধান বাড়িতে ফিরিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। আবার অনেকে আড়ৎদার ও ফড়িয়াদের সঙ্গে দরকষাকষি করছেন।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেকেন্দের আলীর সঙ্গে মুঠোফোনে কথা বললে তিনি বলে, বিষয়টি আমাদের নয়, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষনে কথা বলেন, বলে এড়িয়ে যান।
মোঃ বোরহান উদ্দিন। সহকারী পরিচালক, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষন অধিদপ্তর, নীলফামারী বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মহোদয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জয়শ্রী রানী রায় বলেন, ৪০ কেজির পরিবর্তে কেউ যদি কৃষকদের কাছ থেকে ওজনে ৪২ কেজি নেয় সেটা অন্যায়। বিষয়টি তদন্ত করে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।