শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ১০:৪২ পূর্বাহ্ন
মোঃ শিহাব উদ্দিন গোপালগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি।
গোপালগঞ্জে এনসিপির সমাবেশে স্থানীয়দের হামলা কে কেন্দ্র করে সেনা-পুলিশের সাথে স্থানীয় মানুষের দফায় দফায় সংঘর্ষ-হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় সদর ও টুঙ্গিপাড়া থানায় নতুন করে আরো ২টি মামলা হয়েছে। এ নিয়ে চারটি হত্যা মামলাসহ মোট দশটি মামলায় মোট ৯৮৪৬জনের বেশি আসামী রয়েছে-কমপক্ষে ৫শতাধিক মানুষকে আটক করা হয়েছে।
তবে পুলিশ বলছে, গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক আয়োজিত এনসিপির সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষ-হামলা ও ভাংচুরের ঘটনায় নতুন দুটি মামলাসহ মোট ১০টি মামলায় ৯ হাজার ৮৪৬জনকে আসামি করা হয়েছে এবং চার শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জানা যায়, এ সংঘর্ষে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালের তথ্য অনুযায়ী হামলাকারীদের মাঝে গুলিবিদ্ধ হয় ২০জন ও নিহত হয় ৫জন।
বুধবার ২৩জুলাই জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জিলার তানিয়া জামান বাদি হয়ে কারাগার ভাংচুরের মামলায় ১৬০জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরো এক হাজার মানুষকে আসামী করে থানায় এ মামলা দায়ের করেন। গ্রেফতারকৃতদের অধিকাংশ মানুষই হচ্ছেন দিনমজুর – রিকশা চালক-ভ্যান চালক। এছাড়াও কারাগার ভাঙচুর মামলায় আসামিদের তালিকায় কিছু আসামিদের নাম পাওয়া যায় যাদের দীর্ঘ দিন যাবৎ এলাকাতে দেখা যায়নি। আওয়য়ামী সরকারের পতনের পর বিগত দিনে গোপালগঞ্জে হত্যা মামলা ও বিভিন্ন মামলা হয়, সে সকল মামলায় সাধারণ মানুষ সহ বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষ হয়রানির শিকার হয়। ঐ সকল মামলাকে অবলম্বন করে বর্তমান প্রেক্ষাপটের মাঠ দাপানো কিছু অসাধু বিএনপি নেতারা মামলা বাণিজ্য করে আরো আতঙ্কিত করেছে সমাজের এক শ্রেণির পেশাজীবী মানুষকে। ফলে সাধারণ মানুষের মধ্যে গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করছে। এদিকে কারফিউ ও ১৪৪ ধারা প্রত্যাহার হওয়ার পর শহরে দোকানপাট খুললেও মানুষের মধ্যে চাপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা বিরাজ করছে।
জেলা কারাগারের ভারপ্রাপ্ত জিলার তানিয়া জামান বাদি হয়ে গোপালগঞ্জ জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারন সম্পাদকসহ ১৬০জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো এক হাজার মানুষকে আসামী করে এ মামলা দায়ের করেছেন। মামলা নং ২১-তারিখ ২৩-০৭-২৫। এ নিয়ে চার থানায় দায়েরকৃত দশ মামলায় পনেরো হাজারেরও বেশি আসামী রয়েছে। এরমধ্যে সেনা ও পুলিশের সাথে সংঘষে নিহত ৫জনের মধ্যে ৪জনের পক্ষে পুলিশ বাদি হয়ে যে চারটি হত্যা মামলা দায়ের করেছে সে মামলাও রয়েছে। এসব মামলায় এ পর্যন্ত ৫শতাধিক মানুষকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে অধিকাংশ মানুষই হচ্ছেন দিনমজুর -রিকশা চালক-ভ্যান চালক। প্রকৃত পক্ষে ঘটনার সাথে জড়িত এমন কাউকেই এখনো পর্যন্ত গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। পুলিশ রাতের বেলা ডিউটিতে বেরিয়ে যাকে পায় তাকে ধরে নিয়ে এসব মামলায় চালান করে বলে জনশ্রুতি রয়েছে। সে কারণে সাধারন মানুষের মধ্যে রাতের বেলা গ্রেফতার আতঙ্ক বিরাজ করে বলেও দাবী করেছে ওই সূত্রটি।
গোপালগঞ্জ জেলা কারাগার ভাঙচুর মামলায় জেলা সদরের বেশ কিছু ব্যক্তিদের আসামির তালিকায় দেখা গেছে যা নিয়ে এলাকাতে নানা গুঞ্জন সৃষ্টি হয়েছে, ঘটনায় গোপালগঞ্জ জেলা আইন জীবী সমিতির সভাপতি এ্যা. এম এম নাসির আহমেদ, সাধারণ সম্পাদক জুল কদর রহমান , জয়ন্ত কুমার চন্দ্রবর্তী, এম, এম আবুল কালাম আজাদ, আব্দুল্লাহ আশিক জামান উপল, মোহাম্মদ ইনামুল হক ডাবলু, এস এ মনির হিটলার, মুন্সি মো. আতিয়ার রহমান সহ আরো কয়েক জন আইন জীবীদের এ মামলা আসামী করা হয়। এছাড়াও গোপালগঞ্জ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ল্যাব টেকনিশিয়ান মোঃ তরিকুল ইসলামকে। বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষে্যর দেওয়া একটি প্রত্যয়নপত্র সূত্রে জানা যায়, মো.তরিকুল ইসলাম, পিতা-মৃত নান্নু শিকদার ও মাতা রিনা বেগম, গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সোনা কুড় গ্রামের স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি বিভাগে নিয়মিত কর্মরত রয়েছেন এবং ১৬ জুলাই ২০২৫, বুধবার তারিখে বিভাগের হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর রয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে এই তরিকুল ইসলামের বাড়ি সদরের প্রভাবশালী সোনা কুড় এলাকায় হওয়ায় মামলায় তার নাম এসেছে। একই এলাকার বাসিন্দা হওয়ার সুবাদে গোপালগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের সেলিম সিকদার, তিনি জুনিয়র ম্যাকানিক পদে কর্মরত আছেন তাকেও এই মামলার ৩৩ নং আসামি করা হয়েছে। অপর দিকে হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক বলছে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল, গোপালগঞ্জ-এ ২৪.০৫.২০১২ ইং তারিখ হতে কর্মরত আছেন এবং তাহার দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিয়া আসিতেছেন। তিনি ১৬.০৭.২০২৫ ইং তারিখ অত্র হাসপাতালে উপস্থিত থাকিয়া তাহার নিজ দায়িত্ব পালন করিয়াছেন মর্মে একটি প্রত্যয়ন প্রদান করেন। এই মামলায় ১১৪ নং আসামি রহমান শিকদার, পিতা রেজাউল শিকদার, আমাদেরকে মুঠোফোনে জানান, আমি দীর্ঘ ১০ বছর যাবৎ আমি আমার পরিবারসহ গোপালগঞ্জ ছেড়ে ঢাকাতে বসবাস করি । আমি ও আমার পরিবার ঢাকা বসে টেলিভিশনে গোপালগঞ্জের সংঘর্ষের ব্যপারি জানতে পারি। আমাকে কেন মামলার আসামি করা হয়েছে। এ ব্যপারে গোপালগঞ্জ প্রশাসনের নিকট আবেদন করছি তদন্ত সাপেক্ষে আমার বিষয়টি নজরে এনে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হোক।
বুধবার ২৩জুলাই রাতে টুঙ্গিপাড়া থানার ওসি খোরশেদ আলম মামলা দায়েরের কথা স্বীকার করে আমাদের এ প্রতিনিধিকে জানান, ১৬ জুলাই গোপালগঞ্জ পৌর পার্ক এ আয়োজিত এনসিপির সমাবেশে বাধা সৃষ্টি করতে টুঙ্গিপাড়া-গোপালগঞ্জ মহাসড়কের নানা স্থানে টায়ার জ্বালিয়ে ও গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ করে যানবাহন চলাচল ছাড়াও মানুষের চলাচলে বিঘ্ন ঘটায় এবং জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করে স্থানীয় আওয়ামী লীগ-ছাত্রলীগ ও যুবলীগের চিহ্নিত নেতাকর্মীরা। গত এক সপ্তাহ ধরে ব্যপক অনুসন্ধান চালিয়ে জড়িতদের নাম ঠিকানা শনাক্ত ও যাচাই বাছাই করে নিশ্চিত হয়ে মঙ্গলবার ২২ জুলাই রাতে টুঙ্গিপাড়া থানার এসআই মনির হোসেন বাদী হয়ে বিশেষ ক্ষমতা আইনে ৮২জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাত আরো ২শতাধিক জনকে আসামী করে থানায় একটি মামলা দায়ের করেছে।
মামলায় উল্লেখযোগ্য আসামিরা হলো, টুঙ্গিপাড়া পৌর যুবলীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম, পৌর ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি ইফতি জামান পল্লব, উপজেলা ছাত্রলীগে
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।