শনিবার, ১২ Jul ২০২৫, ০৮:৪২ অপরাহ্ন
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) সকল প্রকার ছাত্র-শিক্ষক রাজনীতি নিষিদ্ধ সত্বেও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অংশগ্রহণে সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠন করার অভিযোগ উঠেছে। কট্টর আওয়ামীপন্থী এবং বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দুই বছরের বহিষ্কৃত আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়াসহ চিহ্নিত আওয়ামীপন্থী অনেক শিক্ষক নেতা সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠনের প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করেন বলে জানা যায়৷
গতকাল শুক্রবার (২৭ জুন) সাধারণ শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে একটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে বিষয়টি জানানাো হয়। বার্তা প্রেরক ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদ কাইয়ুমের সাক্ষরিত ঐ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, গত ২৪.০৬.২৫ ইং তারিখে আইকিউএসি সেমিনার রুমে সাধারণ শিক্ষকদের সাথে আলোচনা এবং ২৬.০৬.২০২৫ ইং তারিখে অনলাইনে (জুম মিটিংয়ে) সাধারণ শিক্ষকদের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত জোরালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি অন্তবর্তীকালীন “নোবিপ্রবি সাধারণ শিক্ষক পরিষদ” গঠন করার প্রস্তাব আসে। গঠিত কমিটি পরবর্তী শিক্ষক সমিতির নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নোবিপ্রবি শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সাধারণ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট (জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়) একটি কমিটির অনুমোদন করা হয়।
অভিযোগ উঠেছে, ভবিষ্যতে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন ছক কষেছেন বিএনপি-জামাত পন্থী শিক্ষকরা। এতে নিজেদের ভোটের পাল্লা ভারি করতে শিক্ষার্থীদের সাথে অন্যায় করা এবং বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পাওয়া আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদেরও কাছে টানছেন তারা। এরই অংশ হিসেবে সাধারণ শিক্ষকদের নাম করে গুটিকয়েক শিক্ষক নিয়ে করা মিটিং এ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় দেখা যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমদের ইস্যু এবং পর্দা নিয়ে হেনস্তার অভিযোগে শাস্তি প্রাপ্ত আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়াকে। এছাড়াও ১৬ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিতে স্বৈরাচার সরকারের আমলে আওয়ামীপন্থী নীল দলের পদধারী নেতাকেও রাখা হয়।
অনুসন্ধানে জানা যায়, সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠনের উদ্দেশ্যে গত ২৪ জুন বিশ্ববিদ্যালয়ের আইকিউএসি রুমে মাত্র ২৫-৩০ জন শিক্ষক নিয়ে একটি আলোচনা সভা করা হয়। পরবর্তীতে মাত্র প্রায় ৮০ জন শিক্ষক গত ২৬.০৬.২৫ (বৃহস্পতিবার) অনলাইনে (জুম প্ল্যাটফর্ম) অনুষ্ঠিত মিটিয়ে উপস্থিত ছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্যানুযায়ী, বিশ্ববিদ্যালয়ে মোট ৪২১ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন। প্রশ্ন উঠেছে মাত্র ২০ শতাংশ শিক্ষক নিয়ে শিক্ষক সমিতির বিকল্প হিসেবে নোবিপ্রবির পুরো শিক্ষক সমাজের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন তৈরি করা আদৌ কতটুকু যুক্তিসঙ্গত।
এ বিষয়ে প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করা নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন সহকারী অধ্যাপক জানান, শিক্ষক সমিতির বিকল্প হিসেবে যে শিক্ষক সংগঠন দাড় করানো হচ্ছে তা আরো গঠনতান্ত্রিক হওয়া উচিত ছিলো। ১৬ সদস্যবিশিষ্ট একটি কমিটি আগে থেকেই প্রস্তুত করে এভাবে ঘোষণা করা কোনো নিয়মের মধ্যে পড়তে পারে না। শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী সংগঠন অবশ্যই অধিকাংশ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতেই হওয়া উচিত।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তি প্রদান করা সাধারণ শিক্ষক পরিষদের সদস্য বিএনপি পন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যাপক ড. মাসুদ কাইয়ুম বলেন, আমরা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে একটি অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠন করেছি। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। শুধুমাত্র শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সংগঠন কাজ করবে। অনলাইনে করা জুমে প্রায় ৮২ জন শিক্ষক অংশগ্রহন করেছেন।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অংশগ্রহণের বিষয়ে উক্ত শিক্ষক নেতা বলেন, প্রোগ্রামে সকল শিক্ষকের অংশগ্রহনের সুযোগ ছিলো। যেহেতু এটি শিক্ষকদের প্লাটফর্ম, আমরা কাউকে বাধা দিতে পারি না। আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়া সাময়িক সময়ের জন্য বহিষ্কার হলেও তিনি একজন শিক্ষক। তাই উনাকেও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এপ্লাইড ম্যাথ বিভাগের চেয়ারম্যান ও জামায়াত পন্থী শিক্ষক নেতা সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, শিক্ষক সমিতি যেহেতু নাই তাই শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমাদের প্রায় সময় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে হয়৷ তখন আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাই শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষক পরিষদ কাজ করে যাবে।
এ বিষয়ে নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের জন্য প্রশাসনের দরজা সবসময় খোলা। তারা যে কোনো সময় তাদের দাবি-দাওয়া প্রশাসনের কাছে পেশ করতে পারে। এক্ষেত্রে কেউ চাইলে ব্যক্তি হিসেবে চাইলে তুলে ধরতে পারে আবার সম্মিলিতভাবেও তুলে ধরতে পারে। সাধারণ শিক্ষক পরিষদ যেহেতু প্রশাসনের অংশ নয় তাই এ বিষয়ে আমার কোনো মন্তব্য নেই।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।