শনিবার, ১২ Jul ২০২৫, ০৮:৫৪ অপরাহ্ন
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি,
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) গঠন করা হয়েছে ১৬ সদস্যের একটি অন্তর্বর্তীকালীন সাধারণ শিক্ষক পরিষদ। মাত্র ৭৫ জন শিক্ষকের মতামত নিয়ে এ কমিটি গঠন করা হয় যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের অফিসিয়াল ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, মোট শিক্ষক সংখ্যা ৪২১ জন। শিক্ষক রাজনীতির সূচনা, আওয়ামী ও ফয়েজ ইস্যুতে সাজাপ্রাপ্ত শিক্ষকের উপস্থিতি নিয়ে শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের মাঝে তীব্র সমালোচনা ও বিতর্কের সৃষ্টি হয়।
শুক্রবার (২৭ জুন) বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আব্দুল কাইয়ুম মাসুদ স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তি হতে সদ্য গঠিত এ শিক্ষক পরিষদ সম্পর্কে জানা যায়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ২৪.০৬.২৫ ইং তারিখে আইকিউএসি সেমিনার রুমে সাধারণ শিক্ষকদের সাথে আলোচনা এবং ২৬.০৬.২০২৫ ইং তারিখে অনলাইনে (জুম মিটিংয়ে) সাধারণ শিক্ষকদের সাথে আলোচনার প্রেক্ষিতে অত্যন্ত জোরালোভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষকদের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে কাজ করার জন্য একটি অন্তবর্তীকালীন “নোবিপ্রবি সাধারণ শিক্ষক পরিষদ” গঠন করার প্রস্তাব আসে। গঠিত কমিটি পরবর্তী শিক্ষক সমিতির নির্বাচন না হওয়া পর্যন্ত নোবিপ্রবি শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্ব করবেন বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। সভায় সাধারণ শিক্ষকদের মতামতের ভিত্তিতে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট (জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নয়) একটি কমিটির অনুমোদন করা হয়।
মনোনয়নের ভিত্তিতে কমিটির গঠনের পর থেকে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হয় শিক্ষার্থীদের নানান সমালোচনা। গঠিত এ কমিটির নিন্দা ও প্রতিবাদ জানায় ফলিত রসায়ন ও কেমিকৌশল বিভাগের শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, যেভাবে শিক্ষক পরিষদ গঠনের প্রস্তাব এসেছে তা আমাদের কে পূর্বের সময়কার শিক্ষক সমিতির কথা স্মরণ করিয়ে দেয়। যেই শিক্ষক সমিতি ছিল সরকারী দলের আজ্ঞাবহ। শিক্ষক সমিতির সভাপতি এবং সেক্রেটারী পদে দলীয় বিবেচনায় মনোনয়ন দেওয়া হত এবং সেই অনুযায়ী সাজানো নির্বাচনের নাটক। আমরা লক্ষ্য করেছি যে, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতি নিষিদ্ধ করা হয়েছে, কিন্তু শিক্ষক পরিষদের নামে শিক্ষক রাজনীতির সূচনা করা হচ্ছে।
অনুসন্ধানে জানা যায়, গত ২৪ (মঙ্গলবার) জুন আইকিউএসিতে অনুষ্ঠিত মিটিংয়ে মাত্র ৩০-৩৫ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন যা মোট সংখ্যার ০৭.১৩ শতাংশ এবং গত ২৬ জুন (বৃহস্পতিবার) অনুষ্ঠিত অনলাইন মিটিংয়ে মাত্র ৭০ জন শিক্ষক উপস্থিত ছিলেন, যা বিশ্ববিদ্যালয়ের মোট শিক্ষকের মাত্র ১৬.৬ শতাংশ। বিজ্ঞপ্তিতে ‘সাধারণ শিক্ষকদের আলোচনা’র কথা বলা হলেও, কতজন শিক্ষক এই কমিটিকে অনুমোদন দিয়েছেন, তা স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়নি।
অন্তর্বর্তীকালীন এই কমিটির অন্যতম বিতর্কিত দিক হলো, জুলাই গণঅভ্যুত্থানে অবদান রাখা শিক্ষককে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া। অন্যদিকে, স্থান পেয়েছে আওয়ামীপন্থী শিক্ষক ইংরেজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো: জনি মিয়া। তিনি ২০২৩-২৪ বছরে আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের সংগঠন নীল দলের সামাজিক বিজ্ঞান ও কলা অনুষদের সদস্য ছিলেন বলে জানা যায়। তিনি বিভিন্ন সময় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আওয়ামীলীগ এবং শেখ হাসিনা নিয়ে বিভিন্ন পোস্ট করেন এবং পত্রিকায় কলাম লিখেন।
পাশাপাশি আওয়ামী পন্থী শিক্ষকদের আরেক সংগঠন স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের সদস্য বর্তমান সিএসটিই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: কামাল উদ্দিনও এ কমিটির সদস্য হয়েছেন। ১০ই জানুয়ারী ২০২৩ সালে স্বাধীনতা শিক্ষক পরিষদের পক্ষ থেকে ১০ জানুয়ারী ২০২৩ সালের স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে শেখ মুজিবের প্রতিকৃতিতে ফুল দিতেও দেখা যায় তাকে। এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের শিক্ষার্থী ফয়েজ আহমদের ইস্যুতে শাস্তি প্রাপ্ত আইন বিভাগের শিক্ষক সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়া ও অনলাইন মিটিংয়ে উপস্থিত ছিলেন বলে জানা যায়। এ নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানা ধরনের সমালোচনা।
শিক্ষকদের একটি বড় এই কমিটিকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং শিক্ষক সমাজের মধ্যে নতুন করে বিভেদ সৃষ্টি করবে বলে বলে মনে করছেন। তাদের মতে, মাত্র ১৬ শতাংশ শিক্ষকের মতামতের ভিত্তিতে গঠিত এই কমিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের সামগ্রিক শিক্ষক সমাজকে কতটুকু প্রতিনিধিত্ব করে তা নিয়ে সন্ধিহান। এর পেছনে বিশেষ কোনো উদ্দেশ্য থাকতে পারে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্ট মহল।
এছাড়াও কমিটির বিষয়ে অবগত না করেই ইইই বিভাগের অধ্যাপক ড. মো: বেল্লাল হোসাইন এর নাম নাম রাখা রয়েছে ১৬ সদস্য বিশিষ্ট এ অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষক পরিষদের কমিটিতে। তিনি বলেন,” আমি অনলাইন মিটিং ছিলাম না৷ সেখানে কি কথা হয়েছে সে সম্পর্কেও কিছু জানি না। মিটিং এর পর আমাকে জানানো হয় যে আমাকে শিক্ষক পরিষদে রাখা হয়েছে।”
এ বিষয়ে সাধারণ শিক্ষক পরিষদের সদস্য ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. আবদুল কাইয়ুম মাসুদ জানান, আমরা শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগে একটি অন্তর্বর্তীকালীন শিক্ষকদের প্রতিনিধিত্বকারী সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠন করেছি। এটি কোনো রাজনৈতিক সংগঠন নয়। শুধুমাত্র শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার জন্য এই সংগঠন কাজ করবে। অনলাইনে করা জুমে প্রায় ৮২ জন শিক্ষক অংশগ্রহন করেছেন।
আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের অংশগ্রহণের বিষয়ে উক্ত শিক্ষক নেতা বলেন, প্রোগ্রামে সকল শিক্ষকের অংশগ্রহনের সুযোগ ছিলো। যেহেতু এটি শিক্ষকদের প্লাটফর্ম, আমরা কাউকে বাধা দিতে পারি না। আইন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক বাদশা মিয়া সাময়িক সময়ের জন্য বহিষ্কার হলেও তিনি একজন শিক্ষক। তাই উনাকেও কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এপ্লাইড ম্যাথ বিভাগের চেয়ারম্যান ও জামায়াত পন্থী শিক্ষক নেতা সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ নিজাম উদ্দিন বলেন, শিক্ষক সমিতি যেহেতু নাই তাই শিক্ষকদের স্বার্থ রক্ষার্থে সাধারণ শিক্ষক পরিষদ গঠন করা হয়েছে। শিক্ষকদের দাবি দাওয়া নিয়ে আমাদের প্রায় সময় প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করতে হয়৷ তখন আমরা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়। তাই শিক্ষকদের সংগঠন হিসেবে শিক্ষক সমিতির নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষক পরিষদ কাজ করে যাবে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।