বুধবার, ১৩ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৪ অপরাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ
দীর্ঘ ৭০ বছর ভারতের দখলে থাকার পর ঠাকুরগাঁও জেলার বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জগদল ও বেউরঝাড়ি সীমান্তবর্তী ৯১ বিঘা বাংলাদেশি জমি অবশেষে উদ্ধার করেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। সোমবার (৮ এপ্রিল) দুপুরে ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবি এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানায়। উদ্ধার করা জমিতে সাদা পতাকা (নিশানা) টানিয়ে দিয়েছে বিজিবি।
বিজিবি তথ্য মতে, ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন (৫০ বিজিবি) এর সুচারু পরিকল্পনা এবং সময়োপযোগী উদ্যোগে বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তর এর প্রতিনিধি দলের সাথে প্রয়োজনীয় যোগাযোগ ও সমন্বয় সাধন করে তারা।
সেই হিসাবে অধীনস্থ জগদল এবং বেউরঝাড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ সীমান্ত এলাকায় বাংলাদেশ-ভারতের সার্ভে বিভাগের যৌথ জরিপের মাধ্যমে ভারতের দখলে থাকা জগদল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় ১৫ বিঘা জমি এবং বেউরঝাড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় প্রায় ৭৬ বিঘা জমি (মোট ৯১ বিঘা) উদ্ধার করা হয়। বাংলাদেশের অনুকূলে প্রাপ্ত জমির মধ্যে ৭৭ বিঘা আবাদি জমি, ১১ বিঘা চা বাগান ও ৩ বিঘা নদীর চর রয়েছে।
জানা গেছে, ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়ন স্ট্রিপ ম্যাপ পর্যালোচনা করে নিশ্চিত ছিল জমিগুলো বাংলাদেশের। বিজিবির আহ্বানে বিজিবি-বিএসএফের মধ্যে অনুষ্ঠিত পতাকা বৈঠকে জমিগুলো বাংলাদেশের বলে বিজিবির পক্ষ হতে জোরালো দাবি উপস্থাপন করা হয়। বিজিবির পক্ষ থেকে আরও বলা হয় যে বিষয়টি নিষ্পত্তির জন্য সার্ভেয়ারের মাধ্যমে যৌথ জরিপের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে।
উল্লিখিত ঘটনার প্রেক্ষিতে গত ৬ ও ৭ মার্চ বাংলাদেশ ভূমি রেকর্ড ও জরিপ অধিদপ্তরের সহকারী জরিপ ও চার্জ অফিসার এবং ভারতীয় সার্ভে বিভাগের সহকারী চার্জ অফিসার এর সমন্বয়ে বিজিবি-বিএসএফের উপস্থিতিতে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়নের অধীনস্থ জগদল এবং বেউরঝাড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় সীমানা নির্ধারণের লক্ষ্যে যৌথ জরিপ ও পরিদর্শন অনুষ্ঠিত হয়। সেই কার্যক্রমের অংশ হিসেবে গত ৬ মার্চ জগদল বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রায় ১৫ বিঘা ভারতের দখলে থাকা জমি বাংলাদেশের অনুকূলে পাওয়া যায় এবং অপরদিকে প্রায় ৭ দশমিক ৫ বিঘা বাংলাদেশের দখলে থাকা জমি ভারত পায়। এরপর গত ৭ মার্চ বেউরঝাড়ি বিওপির দায়িত্বপূর্ণ এলাকায় জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করে প্রায় ৭৬ বিঘা ভারতের দখলে থাকা জমি বাংলাদেশের অনুকূলে পাওয়া যায়। অপরদিকে প্রায় ১৬ বিঘা বাংলাদেশের দখলে থাকা জমি ভারত পায়। উল্লেখ্য, উক্ত জরিপে বাংলাদেশের প্রাপ্ত জমির পরিমাণ ৯১ বিঘা এবং ভারতের প্রাপ্ত জমির পরিমাণ ২৩ দশমিক ৫ বিঘা।
বাংলাদেশ ও ভারতের সার্ভে বিভাগের যৌথ জরিপের মাধ্যমে প্রাপ্ত বাংলাদেশী জমিগুলো স্থানীয় প্রশাসনের মাধ্যমে প্রকৃত মালিকের নিকট হস্তান্তরের লক্ষ্যে ঠাকুরগাঁও ব্যাটালিয়নের (৫০ বিজিবি) পক্ষ হতে ঠাকুরগাঁও জেলা প্রশাসনের সাথে প্রয়োজনীয় সমন্বয় করা হয়েছে।
বালিয়াডাঙ্গী উপজেলার জগদল সীমান্তবর্তী এলাকার মো. আনসারুল ইসলাম (৭০) বলেন, “আমি ছোটকাল থেকেই দেখে আসতেছি এই জমিটি ভারতের অধীনে এবং ভারতের লোকজন এই জমি চাষ করে আসতেছে। কিছুদিন আগেই জমিতে একজন বাংলাদেশে যাওয়ার কারণে তাকে গুলি করে মারা হয়। প্রায় ৭০ বছর পর আমরা জমিটা ফিরে পেয়েছি। এতে আমাদের মধ্যে অনেক বেশি আনন্দ উৎসাহ বিরাজ করতেছে।”
ঠাকুরগাঁও ৫০ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল মো. তানজীর আহম্মদ বলেন, “আমরা প্রাথমিকভাবে বুঝতে পারি যে এই জমিগুলো বাংলাদেশের। তারই পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ভারতের সাথে কথা বলি এবং এই ভূমি জরিপ করার জন্য জানাই। তাদের আমরা অনুরোধ করি তারা যেন প্রকৃতপক্ষেই জমির মাপের কাজটি করে। বাংলাদেশ বিজিবি এবং বিএসএফের যৌথ জরিপের মাধ্যমে আমরা এই জমিটি পেয়েছি।”
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।