বৃহস্পতিবার, ১২ ডিসেম্বর ২০২৪, ০১:৪১ অপরাহ্ন
………প্রেমিকের শ্রদ্ধাঞ্জলি……….
হে প্রিয়া! ফাগুন বেলা, শোভিত শিমুল-পলাশের বন, কোকিলের কুহুতান। আজ বসন্তের এমনি এক উদাসী ক্ষণে বিচ্ছেদ নামের বেদনা বিধুর বিদায় লগ্নে আমি উপনীত হয়েছি। দীর্ঘদিন বাঁশবাগানের পাশে গোধূলীর পরে চুপিসারে মিলনের পরে নিয়মের বাধ্যবাধকতা আর পরিবারের তাগিদে তোমার বিদায় যেনো এক অসহনীয় যন্ত্রণার নির্মম বাস্তবতা। তাইতো বিদায়ের করুণ সুরে আমার অন্তর আজ অব্যক্ত বেদনা আর ব্যর্থতায় ভারাক্রান্ত। আমার হৃদয়-মন আজ বিষণ্নতায় আচ্ছন্ন, আমার চোখ আজ অশ্রু ছলছল। তাইতো আজ বারবার বলতে ইচ্ছে করছে-
“প্রিয়া আমার প্রিয়া,
শুনো মনোযোগ দিয়া;
আমার সাথে খেলছো তুমি সর্বনাশা খেলা,
অন্যের সাথে বিয়ে হলে বুঝবে এর জ্বালা।
প্রিয়া আমার প্রিয়া,
জানি তোমার পরিবার করছে বাড়াবাড়ি,
এ কারণে সিদ্ধান্ত নাও অতি তাড়াতাড়ি।
প্রিয়া আমার প্রিয়া,
দিও না আমায় কষ্ট,
তোমার-আমার সুন্দর ভবিষ্যৎ হয়ে যাবে নষ্ট।
বিশ্বাস থেকে হয় ভালোবাসার জন্ম,
প্রিয়া তুমি বুঝলে না ভালোবাসার মর্ম।
২। হে বিদায়ী সাথী! মহাসমুদ্রের গোটা জলের ইতিহাসসমৃদ্ধ স্রোতের উচ্ছাস যেমন কঠিন তটের উপর সবেগে মূর্ছিত করে বারবার তটে এসে নিজেকে নি:শেষে দান করে এ বিশ্বকে সবুজ শ্যামল রঙে রাঙিয়ে দেয়, ঠিক তেমনি শীতের শেষে এক অপরাহ্নে দু:খ ভারাক্রান্ত ব্যথাতুর হৃদয়ে আমিও তোমাকে বিদায় জানাতে এসেছি। তুমি ছিলে আমার বেকার জীবনে মহানব্রত, ন্যায়পরায়ণতা এবং উদ্দীপনার চরম আদর্শ। তুমি ছিলে আমার বেকার জীবনে আলোর দিশারী। আমি শুধু এটুকু বলতে পারি তোমার সান্নিধ্যে আমি আমার বেকার জীবনে কখনো কোনো কিছুর অভাব বোধ করিনি। তুমি থাকবে আমার অন্তরের মনিকোঠায়, আমার কাছে রেখে যাওয়া তোমার কোমল স্পর্শের চুড়াপটে। তুমি দীর্ঘজীবী হও এবং সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হও। তোমার নতুন জীবনের জন্য রইলো আমার তরফ থেকে হেমন্তের শীতল বাতাসের আর্দ্রতায় বসন্তের ফুলেল শুভেচ্ছা।
৩। হে অভিমানী! তোমাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখতে দেখতে স্বপ্নটাকেই আমি যেনো কবে স্বপ্ন করে ফেললাম। এ স্বপ্ন তাই আর বাস্তবে পাবার ইচ্ছে হয় না। কিছু কিছু জিনিষ হয়তো স্বপ্নেই সুন্দর বলে। ভালো থাকবে হয়তোবা নিশ্চিত জানি না। আমি ভালো আছি জেনে নাও। জানালার ঠিক পাশেই সদ্য আমগাছে মুকুল দেয়া দৃশ্যটায় চোখ পড়লেই দেখি হালকা সবুজাভ মুকুলগুলো খুব দ্রুতই সোনালী হয়ে গেছে। সময়টা একটু তাড়াতাড়িই চলে যাচ্ছে মনে হয়। শীতকালটাও শেষ হয়ে বসন্ত এসে গেছে কয়েকটা দিন হলো। তবুও শেষরাতে কম্বলটা গায়ে দিতেই হয়। হালকা বৃষ্টিতে শীতশীত করলে গোসল করবো নাকি করবো না ভাবতে ভাবতেই বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যে হয়ে যায়। গোসল আর করা হয় না। সময় কতো দ্রুত চলে যায়। প্রায় ভাবি হুট করে তোমার প্রেমে পড়ার সময়টাও খুব দ্রুত ছিলো। অথচ, ব্যস্ততার দোহাই দিয়ে ভুলতে চাইবার সময়টা কেনো জানি বের করতেই পারছি না। মাঝে মাঝে আনমনে কল্পনায় তাই তোমাকে প্রশ্ন করি- “আচ্ছা তুমি কি জানো, তুমি এ ছেলেটার চোখে প্রথম ও শেষ অভিমানী”।
৪। হে অস্পর্শিনী! বুকের ভিতরের কষ্টটা আজ আবার চাগাড় দিয়ে উঠেছে। ইচ্ছে করছে ছিঁড়ে খাই নিজের হৃদপিন্ড। কষ্টপোড়া আস্তরণে নিজের মুখটা দেখে নিজেই আৎকে উঠি। কি বিভৎস এই বেঁচে থাকা। আহা! ঘেন্না ধরে গেছে। আমার চোখের সামনে লাল-নীল বেদনার পর্দা। আজ হঠাৎ করেই খুব বেশি একা হয়ে বেঁচে আছি প্রিয়া। আজ মনে হচ্ছে, কতো কী যেনো জানার ছিলো! কতো কী যেনো বলার ছিলো! কতো দূর যেনো যাওয়ার ছিলো! কতো বই যেনো পড়ার ছিলো! কতো রাত যেনো জাগার ছিলো! কতো স্বপ্ন যেনো দেখার ছিলো! কতো গান যেনো শোনার ছিলো! কতো বর্ষায় যেনো ভেজার ছিলো! কতো শিশির বিন্দু যেনো আঙুলে ছোঁয়ার ছিলো! সমুদ্রের জলে পা ডুবিয়ে হাঁটার ছিলো! মস্ত বড় গোল চাঁদটা আকাশে রেখে নদীর পাড়ে বসার ছিলো! দু:খের রঙে উঠোনে একটি মুখ আঁকার ছিলো! কতো দর্শন, কতো তত্ত্ব বুঝার ছিলো! মাঠের ধারে বটবৃক্ষের নিচে মন্থর দুপুরে চোখ বুঁজে শোয়ার ছিলো! লাল পাহাড়ের চূড়ায় ওঠার ছিলো! ছেলেবেলার হারানো পথ খোঁজার ছিলো! কোনো এক বেদনার কথা ভেবে নির্জনে কাঁদার ছিলো! কৈশরের প্রচ্ছন্ন প্রেমের আগোছালে চুলে হাত বুলানোর ছিলো! দীর্ঘশ্বাসের মুখ দেখার অভিলাষ ছিলো! দূরান্তের ভাসমান আঁচল বুকে জড়ানোর ছিলো! ভরা জোয়ারে না-পাওয়াগুলো কাগজের নৌকোয় ভাসানোর ছিলো! এমন আরো কতো ইচ্ছে ছিলো, বাসনা ছিলো, আকাঙ্খা ছিলো! কিন্তু ঠিক এ মুহূর্তে চোখের পলকে সবকিছু অবান্তর, অপ্রয়োজনীয়, অসার, তুচ্ছ হয়ে গেলো। এখন আমার সমস্ত স্পৃহা, অভিরুচি, ইপ্সা, বাঞ্ছা, প্রবৃত্তি একটিমাত্র বাক্যে মিলিত হয়েছে, “অস্পর্শিনী তুমি ভালো থেকো”।
৫। হে মায়াবিনী! ভালোবাসা আমাকে স্বার্থপর করেছে। তোমাকে ছাড়া আমার অস্তিত্ব নেই। আমি প্রায় সবকিছুই ভুলে যাই, কিন্তু তোমাকে আবার দেখার কথা ভুলতে পারি না। হাত বাড়িয়ে তোমাকে পেলে প্রতিবার কী যে অনুভূতি হয় তা আমি বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হয়, আমি আমার ঘরেই আছি আর তুমি আমার পাশে। খুব বেশি কিছু ঘটনা নয়। কিন্তু আমরা সবসময় আনন্দে থেকেছি। ভালোবাসা সবকিছু দাবি করে। সে দাবি মেনেই তোমার জন্য আমি এবং আমার জন্য তুমি। তুমি অবশ্য জানবে না, তুমি চিরকাল কী আশ্চর্যরকম সুন্দরী। এও জানবে না যে, কী চমৎকার বিপজ্জনক রমণীয়তা তোমার অর্জিত, যা তুমি যোগ করেছো তোমার লাবণ্যে। আর তার শিখা জেগে থাকবে আমার হৃদয়ে। সুখ তোমার মধ্যেই আছে। শুধু হৃদয়ের আগলটুকু খুলে দাও, আরো বড় হয়ে ওঠো।
৬। হে ছদ্মবেশীনী! কোনো এক গোধূলী লগ্নে হয়তো দিন শেষের ক্লান্তি ঘিরবে তোমাকে! হয়তো অলস হাঁটবে বাগানে! স্পর্শ করবে ফুল, পত্রগুচ্ছ! হয়তো আনমনে আঙুলে জড়াবে তোমার চুল! হয়তো দেখবে নীল প্রজাপতি, হলুদ ফড়িং, কৃষ্ণ ভ্রমর, সাদা বক, আগুন লাগা আকাশ, সবুজ ঘাস, নিষ্পাপ শিশু, গোয়ালে ফেরা গরুর পাল, খেলা ফুরানো শূন্য মাঠ, অফিস ছুটি অবিন্যস্ত শ্রান্ত মানুষ, কালো দিগন্তে উড়ে যাওয়া বাদুড়! হয়তো শুনবে বেলা অন্তের পাখির ডাক, দুরন্ত কিশোরের হাসি, ভেঁজা হাসের বুলি, মুয়াজ্জিনের আহ্বাণ, মন্দিরে ঘন্টাধ্বনি, ঘরে ঘরে বালক-বালিকাদের পড়তে বসা
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।