রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৭ অপরাহ্ন
ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধিঃ
ঠাকুরগাঁওয়ের মাদারগঞ্জ এলাকার মামুন রশিদ। পেশায় ছিলেন একজন নার্সারী ব্যবসায়ী। তিনি নার্সারি ব্যবসা করার পাশাপাশি তিনি বাড়তি উপার্জনের জন্য বাড়িতে গরু পালন করতেন। কিন্তু গরু কিনে আনার কিছুদিন পর বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যেত। এভাবে কিছুদিন পর পর গরু মারা যাওয়ায় মামুন রশিদ গরু পালন নিয়ে হতাশায় পড়ে যান।
এ সময় বাড়ি থেকে গরুর রোগ জীবাণু দূর করার জন্য ঠাকুরগাঁও বেতার কেন্দ্র আরফিন ভাই এর পরামর্শ অনুযায়ী বাড়িতে ৪ টি ভেড়া নিয়ে আসেন। এর কিছুদিন পর একটা স্ত্রী ভেড়া কিনে আনার পর শুরু হয় দুই ভেড়ার সুখের সংসার। দিন বাড়ার সাথে সাথে ভেড়া বাচ্চা দিতে থাকে আর ৪ বছরেই মধ্যেই মামুন রশিদ এর বাড়িতে তৈরি হয় ভেড়ার খামার।
এখন মামুন রশিদ খামারে ভেড়ার সংখ্যা ৩২ টিরও বেশি। এই ভেড়া বিক্রি করেই এখন চলছে মামুন রশিদ এর পরিবার। পাশাপাশি প্রতি বছর সঞ্চয়ও হচ্ছে ভালো অঙ্কের টাকা।
মামুন রশিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ভেড়া পালনের জন্য যেমন বেশি পুঁজির প্রয়োজন হয় না, তেমনি বেশি খরচও হয় না। তাই অল্প পুঁজিতে ভেড়া পালনে অনেক লাভ পাওয়া যায়।
মামুন রশিদ জানান, সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে ভেড়ার ঘরের দরজা খুলে দিলে দলবদ্ধভাবে তারা মাদারগঞ্জ বাজারসহ রাস্তা বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। বাজার, আবরজনা ডাস্টবিন ও রাস্তায় ফেলে দেয়া মানুষের খাবারের উচ্ছিষ্ঠ খেয়ে থাকে। সারা দিন এভাবে তারা নিজেদের খাবার নিজেরা খেয়ে সন্ধ্যায় আবার দল বেঁধে বাড়িতে চলে আসে। সন্ধ্যায় বাড়িতে এলে সামান্য ভুসি ও আটার সাথে পানি মিশিয়ে দিলে খেয়ে ঘরে শুয়ে থাকে। আবার সকাল বেলা একই কায়দায় খাবারের সন্ধানে বেরিয়ে পড়ে।
ভেড়া মুক্তভাবে পালন করাতে যেমন কোনো সমস্যা হয় না, তেমন কোনো রোগবালাইও হয় না। রোগবালাই থেকে মুক্তির জন্য প্রতি তিন মাস পর পর চারটি ভ্যাকসিন দিলেই চলে। একটি স্ত্রী ভেড়া জন্মগ্রহণের ১৪ মাস পর বাচ্চা দেয়। প্রথমবার একটি কিংবা দু’টি বাচ্চা দিলেও বয়স বাড়ার সাথে সাথে এক সাথে চারটি বাচ্চাও দিয়ে থাকে। একটি ভেড়া জন্মের পর থেকে পাঁচ বছর পর্যন্ত ১৩-১৫ বার বাচ্চা দিয়ে থাকে।
বর্তমানে মামুন রশিদ খামারে দেশীয় জাতের ভেড়া আছে। তবে তিন প্রকার ভেড়ার মধ্যে গারর জাতের ভেড়ায় লাভ অনেক বেশি।
মুক্তভাবে ভেড়া পালনের ক্ষেত্রে গ্রামের মানুষ কিংবা এলাকাবাসীর দ্বারা তেমন কোনো সমস্যা না হলেও ভেড়ার আসল শত্রু হলো কুকুর। ভেড়াকে কুকুর একবারেই সহ্য করতে পারে না। তাই রাস্তা ঘাটে প্রায়ই ভেড়াকে কুকুরে কামড়িয়ে থাকে।
ভেড়ার গোশতে এলার্জি সংক্রান্ত তেমন কোনো সমস্যা না থাকার কারণে দিন দিন ভেড়ার চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে। বলা হয়ে থাকে ভেড়ার গোশত খেলে মানব শরীরে বাত ব্যথা থাকে না। বর্তমান বাজারে ভেড়ার বেশ চাহিদা থাকায় মামুন রশিদ কে ভেড়া বিক্রির জন্য বাজারে যেতে হয় না। বাড়িতে এসে লোকজন ভেড়া কিনে নিয়ে যান। প্রতি কোরবানির আগে ভেড়ার অগ্রীম অর্ডার দিয়ে রাখেন। ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী একটি ভেড়া ৮/৯ হাজার টাকায় বিক্রি করা যায়। তার প্রতি মাসে আয় দশ হাজার টাকা,বছরে মামুন রশিদ উন্মুক্ত ভেড়ার খামার থেকে ভেড়া বিক্রি হয় এক লাখ ২০ হাজার।
মামুন রশিদ উন্মুক্ত ভেড়ার খামার দেখে অনুপ্রেরণা পেয়ে এলাকার অনেকেই ভেড়া পালন শুরু করেছেন। সরকারি- বেসরকারি সংগঠন থেকে ভেড়া পালনের জন্য চিকিৎসা, পরামর্শ ও অর্থিক সাহায্য করা হলে এলাকাবাসী ভেড়া পালনে আরো উৎসাহী হবেন বলে মনে করেন দীর্ঘদিন ভেড়া পালনে অভিজ্ঞ মামুন রশিদ।
মামুন রশিদ আরো জানান সরকার জুদি কিছু অনুদান দেয় তাহলে আরো বড় করে পালন করতে পারতাম এবং ভেরার খামারে দুই তিনটা ছেলে রাখতাম, সে বেতন দিয়ে তার পরিবার চলতে পারত। ভেরা পালন করে আল্লাহ আমাকে সুখের পথ দেখাইছে। আমি এখন ভেরা পালন করে সাবলম্বী এগুলো ভেরা বিক্রি করে দেশি গরুর খামার দিব আশা করেছি। আমার ৫ টি ভেরা ছিল এখন বর্তমানো ৩২ টি ভেরা আছে।
এ বিষয়ে ঠাকুরগাঁও উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সুত্রে বলেন, ভেরা পালন করে মোটামুটিভাবে সফল হয়েছেন মামুন রশিদ । কিন্তু তিনি আমাদের কাছে কোন পরামর্শ নেন নাই। পরামর্শ নিলে আমরা নিয়মিত তার ওই ভেরার খামার পরিদর্শনের পাশাপাশি প্রয়োজনীয় ওষুধ ও সব ধরনের পরামর্শ দিব। এখন অনেকেই ভেরার খামার গড়ে তুলতে পরামর্শের জন্য আমাদের কাছে আসছেন। তাদেরকে সব ধরনের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।