মেহেদী হাসান
নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) শহীদ মুগ্ধ মেডিকেল সেন্টারে কর্মরত ডেপুটি চীফ মেডিকেল অফিসার ডা. ইসমত আরা পারভীন তানিয়ার বিরুদ্ধে চাকরীর প্রলোভন দেখিয়ে টাকা আত্মসাতের বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেয়ার কথা বলেন মো. আরাফাতুল ইসলামকে নামের একজন চাকরি প্রার্থীর স্বজনকে। "লিখিত পরীক্ষায় পাশ করতে বলেন, ভাইভায় আমরা টিকিয়ে দিব।" এই রকম আশ্বাস দেয়ার অভিযোগ উঠেছে ডাক্তার তানিয়ার বিরুদ্ধে।
জানা যায়, মো: আরাফাতুল ইসলাম নামের এক চাকরিপ্রার্থী লাইব্রেরি এসিস্ট্যান্ট, সেমিনার- লাইব্রেরি এটেন্ডডেন্ট, কার্য সহকারীসহ তিনটি পদের জন্য আবেদন করেন। এই তিনটি পদের যেকোনো ১ টি পদে তাকে নিয়োগ দেয়ার শর্তে ডা. ইসমত আরা পারভীন তানিয়া চাকরিপ্রার্থী ও তার পরিবারের কাছ থেকে ৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন। পরবর্তীতে জুলাই আন্দোলনের মুখে আওয়ামী সরকারের পতন হলে তিনি ওই নির্ধারিত পদে নিয়োগ দিতে ব্যর্থ হন এবং পরবর্তীতে ওই ৫ লাখ টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।
নিরুপায় হয়ে ভুক্তভোগী আরাফাত গত ২৭ অক্টোবর বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার বরাবর অভিযোগ পত্র জমা দেন। অভিযোগ পত্রে তিনি জানান, চাকরি দেওয়ার কথা বলে সিনিয়র মেডিকেল অফিসার ডাঃ ইসমত আরা পারভীন তানিয়া তাকে প্রলোভন দেখান। এরপর ডাঃ ইসমত আরা পারভীন তানিয়া আবেদনের ৩ পদের যেকোনো ১ পদে চাকরি দিবে বলে তার কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা নেন। কিন্তু পরবর্তীতে তিনি নিয়োগ দিতে পারেন নি এবং টাকা ফেরত দিতে অস্বীকার করেন।
চাকরি প্রার্থীর স্বজন ও অভিযুক্ত ডা. তানিয়ার কথোপকথনের একটি অডিও ফাঁস হয়ে যায়। ফাসঁ হওয়া একটি অডিওতে তানিয়াকে বলতে শোনা যায়, ‘আমি কি না চেষ্টা করে আছি নাকি? চেষ্টা না করে কি এভাবে বলতেছি। আমার হাসবেন্ডের লাখ লাখ টাকা আটকে আছে। আমি কারে গিয়ে বলব বলেন? আমার হাসবেন্ড নিজেই বিরক্ত। কি করব, কোথা থেকে শুরু করব- আমরা কিছুই বুঝতেছি না। আপনি এটা ওয়াদা রাখেন, যতদিন আমি বেচে আছি, আমি কবরে যাওয়ার আগে হলেও আপনার ব্যবস্থা করে যাব। আপনি অন্তত এটা আমার বিষয়ে নিশ্চিত থাকেন। এখন আল্লাহ কপালের নসিব খারাপ দিছে, আপনাদের একটু ধৈর্য্য ধরতে হবে বুঝছেন। আপনি ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ধৈর্য ধরেন ইনশাআল্লাহ। দেখি আওয়ামী লীগ থাক বা না থাক, ওরে শুধু রিটেনটা টিকতে বলেন। সে কয়েকদিন আগে একটা পরীক্ষা দিছে, রিটেনেও টিকে নাই!"
ডা. তানিয়াকে আরো বলতে শুনা যায়, "কখনো আমি এইসব কাজ করি না। জাহিদ (জাহিদ হাসান শুভ, ছাত্রলীগ নেতা) আমাকে চাপাচাপি করছে বলে। না হয় এইসব ফালতু কাজ আমি করি না। এইসব কাজ করতে আমার বিরক্ত লাগে। নিরুপায় হলে আমরা কিভাবে সমাধান করব? ওনারা নেতা মানুষ, ওনারা কেউ নেই দেশে। ওনাকে কিভাবে আমি খুজে বের করব? সামনে সার্কুলার হবে পরীক্ষা হবে আমরা টিকাই দিব। এই ধরণের বালের ছাত্র কেন? এই ফালতু ছাত্ররা কেমনে পরীক্ষা দিবে? রিটেন টিকাই দেওয়ার দায়িত্ব কি আমাদের? রিটেন টিকুক, ভাইবা আমরা করাই দিব। সেটা যেই সরকারই হোক। আগে রিটেন দিতে বলেন। রিটেনে টিকলে তারপর ভাইবা। পৃথিবীর কোথায় আছে রিটেন টিকাই দিতে হবে গাধার বাচ্চাদের? রিটেন টিকতে বলেন। রিটেন টিকার মতো ছেলে না হলে কেমনে পাস করাই দিব?আমি আপনাকে কথা দিচ্ছি, ওকে বলেন রিটেন এ টিকতে। ভাইবাতে আমি ব্যবস্থা করে দিব। অনেক সময় রিটেন টিকলেও ভাইবাতে আউট করে দেয়। আমরা তাও চেষ্টা করে দেখব।"
এ বিষয়ে ডা. ইসমত আরা পারভীন তানিয়ার সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায় নি। পরবর্তীতে সরাসরি দেখা করতে মেডিকেল সেন্টারে গিয়েও ডা. তানিয়াকে পাওয়া যায় নি। জানা যায় ডা তানিয়া কোনো কারণে ছুটিতে আছেন।
ভুক্তভোগীর অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার তামজিদ হোসাইন চৌধুরী বলেন, "ডা. তানিয়ার বিরুদ্ধে একটি অভিযোগ পেয়েছি। অভিযোগ প্রমান সাপেক্ষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেয়া হবে।"
নিউজ রুমঃ News.dainikparibarton@gmail.com অথবা News@dainikparibarton.com
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2025 dainikparibarton.com