খবর অনলাইন
দেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে। বিপুলসংখ্যক রোগীর চিকিৎসা দিতে গিয়ে হাসপাতালগুলোর হিমশিম অবস্থা। এমন পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের উদ্যোগী ভূমিকা জরুরি হলেও বাস্তবতা বলছে ভিন্ন কথা। সংকটকালে বাড়তি কাজ দূরের কথা, তিনি ঠিকমতো মন্ত্রণালয়েই যান না। গত সাত মাসে মাত্র ৪৩ দিন অফিস করেছেন গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়ের এই শীর্ষ কর্তা। মন্ত্রীর এমন উদাসীনতায় মন্ত্রণালয়ের কাজকর্মেও দেখা দিয়েছে স্থবিরতা। বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নে পিছিয়ে পড়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
যদিও করোনাকাল থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় নিয়ে অভিযোগের শেষ নেই। সামনে আসছে একের পর এক অনিয়ম এবং অব্যবস্থাপনা। এরপরও অফিসমুখী হননি মন্ত্রী জাহিদ মালেক। এই দীর্ঘ সময়ে অফিস না করলেও ব্যক্তিগত ব্যবসা-বাণিজ্য ও এলাকার রাজনীতিতে তৎপরতার কমতি ছিল না। দেশজুড়ে ডেঙ্গু আতঙ্কের এই সময়ে সপরিবারে ১০ দিন অবকাশ কাটিয়ে এসেছেন মালয়েশিয়া থেকে।হিসাব করে দেখা যায়, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত ২০৬ দিনের মধ্যে সরকারি কর্মদিবস ছিল ১৩১ দিন। অনুসন্ধানে জানা গেছে, এই দীর্ঘ সময়ে মাত্র ৪৩ দিন সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অফিস করেছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে আরেকটি অফিস আছে মন্ত্রীর জন্য। সাত মাসে একবারও সেখানে যাননি তিনি।গত এক মাস ধরে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ে আতঙ্ক রয়েছে সারা দেশ। প্রতিদিন লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যা। হাসপাতালে তিল ধারণের ঠাঁই নেই। মারা যাচ্ছে মানুষ। তবে এর মধ্যেও গত ১২ জুলাই পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অবকাশ যাপনে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন স্বাস্থ্য মন্ত্রী। ১০ দিন কাটিয়ে গত ২২ তারিখে তিনি দেশে ফেরেন। ডেঙ্গুর এমন ভয়াবহতার মধ্যে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বিদেশে প্রমোদ ভ্রমণে ব্যাপক সমালোচনা হয় মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে। এর আগেও ২০১৯ সালে সারা দেশে যখন ডেঙ্গুর ভয়াবহ প্রাদুর্ভাব, ঠিক তখনো তিনি প্রমোদ ভ্রমণে গিয়েছিলেন বিদেশে।
অনেক কর্মকর্তাই বলছেন, ডেঙ্গুর এমন মুহূর্তে স্বাস্থ্যমন্ত্রী দায়িত্বশীলতার পরিচয় দেননি। এর আগেও তিনি একই কাজ করছেন। অথচ তিনি তৎপর হলে ডেঙ্গু আক্রান্তদের কষ্ট কিছুটা হলেও লাঘব হতো। হাসপাতালগুলো পরিদর্শন করে নির্দেশনা দিলে অন্তত চিকিৎসায় কিছুটা গতি আসত।
এদিকে মন্ত্রীর উদাসীনতার প্রভাব পড়েছে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক কর্মকাণ্ডে। পিছিয়ে পড়েছে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের গতি। গত (২০২২-২৩) অর্থবছরের ১১ মাসের হিসাবে (জুন-মে) স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের বিভিন্ন প্রকল্প এবং উন্নয়ন কর্মকাণ্ড বাস্তবায়নের হার ছিল মাত্র ৩৮ ভাগ। স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের বাস্তবায়নের হার ৩৬ ভাগ। এডিপি বাস্তবায়নে পিছিয়ে থাকা মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে স্বাস্থ্য রয়েছে তৃতীয় অবস্থানে। তবে অর্থবছর শেষে স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন দেখানো হয়েছে ৬৮ ভাগ। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের এডিপি বাস্তবায়নের হার ৬৯ ভাগ। যদিও অনেক মন্ত্রণালয় এবং বিভাগে ৮০ থেকে ৯৮ ভাগ পর্যন্ত এডিপি বাস্তবায়ন হয়েছে।
কর্মকর্তারা জানান, মন্ত্রী ঠিকমতো অফিস না করায় মন্ত্রণালয়ের নানা উন্নয়মূলক কাজ এবং সিদ্ধান্ত থমকে যাচ্ছে। ডজন ডজন ফাইল আটকে থাকছে। ভার্চুয়াল মাধ্যমে বিভিন্ন সিদ্ধান্ত দিলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই তা সম্ভব নয়। কারণ বিভিন্ন বিষয়ে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত নিতে হয়, স্বাক্ষর করতে হয় নানা ফাইলে। তবে মন্ত্রী না থাকায় এতে সৃষ্টি হয় দীর্ঘসূত্রতার। যার প্রভাব পড়ছে মন্ত্রণালয়ের সামগ্রিক উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে।
বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের মহাসচিব ডা. এহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল এ বিষয়ে কালবেলাকে বলেন, ‘দেশের স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে এখন একটা সংকটকাল চলছ। এই সময় মন্ত্রীর এমন ভূমিকা দুর্ভাগ্যজনক। এর আগেও যখন দেশে ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব হয়েছিল তখনো তিনি দেশের বাইরে গিয়েছিলেন। তবে একজন মন্ত্রী কখন দেশের বাইরে যাবেন, কখন অফিস করবেন—তা নিয়ে কথা না বলাই ভালো।’
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেককে বেশ কয়েকবার ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। এরপর হোয়াটসঅ্যাপে কল করলেও রিসিভ করেননি। পরে তার হোয়াটসঅ্যাপে বার্তা দেওয়া হলেও উত্তর দেননি।
এ ছাড়া স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধানকে মন্ত্রীর সঙ্গে যোগাযোগ করিয়ে দেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়। তবে তিনি কিছু জানাননি। পরে জনসংযোগ কর্মকর্তাকে লিখিত প্রশ্ন পাঠানো হলেও জবাব পাওয়া যায়নি।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com