সোমবার, ১৪ Jul ২০২৫, ০৩:৩৪ পূর্বাহ্ন
ডিমলা (নীলফামারী) প্রতিনিধি:
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার গয়াবাড়ি ইউনিয়নের শুটিবাড়ি গ্রামের হতদরিদ্র যুবক বকুল (৩০) এক মর্মান্তিক সড়ক দুর্ঘটনায় তাঁর ডান পা হারিয়েছেন। একই দুর্ঘটনায় তাঁর বাম পায়ের হাড় তিন জায়গায় ভেঙে যাওয়ায় অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে রড স্থাপন করা হয়েছে। দুর্ঘটনার পর থেকে তিনি সম্পূর্ণ কর্মক্ষমতা হারিয়ে বিছানায় শয্যাশায়ী। এই করুণ পরিস্থিতিতে তাঁর পাশে দাঁড়িয়েছেন ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইমরানুজ্জামান।
পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি বেকার হয়ে পড়ায় বকুলের চিকিৎসা প্রায় থেমে যাওয়ার পথে ছিল। এমন অবস্থায়, রবিবার (১৩ জুলাই) ইউএনও ইমরানুজ্জামান বকুলের অবস্থা লোকমুখে শুনে তাঁর বাবা সবুর মিয়াকে ডেকে পাঠান। তাঁর মাধ্যমে অসুস্থ বকুলের শারীরিক অবস্থার খোঁজখবর নেন এবং তাৎক্ষণিকভাবে সরকারি তহবিল থেকে ৫ হাজার টাকা চিকিৎসা সহায়তা প্রদান করেন। একই সাথে, তিনি ভবিষ্যতে আরও চিকিৎসা সহায়তার আশ্বাস দিয়েছেন। ইউএনও ইমরানুজ্জামানের এই মানবিক সহায়তা বকুলের পরিবারে কিছুটা আশার আলো দেখিয়েছে।
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, দুর্ঘটনার পর থেকে দিনমজুর বাবা সবুজ মিয়া বকুলের চিকিৎসার খরচ জোগাতে জমিজমা, গবাদি পশু বিক্রি করে এবং ধারদেনা করে প্রায় ৩ লাখ ৫০ হাজার টাকা ব্যয় করেছেন। কিন্তু চিকিৎসা এখনো শেষ হয়নি। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী, বকুলের কাটা পায়ে কৃত্রিম পা (প্রস্থেটিক লিম্ব) সংযোজন অত্যাবশ্যক, যার ব্যয় অত্যন্ত বেশি। এই ব্যয়ভার বহনের মতো সামর্থ্য তাঁদের নেই।
বকুলের মা কাঁদতে কাঁদতে বলেন, “স্যার (ইউএনও) না এলে কেউ খোঁজ নিত না। চিকিৎসার খরচ কীভাবে জোগাড় করব, সেই চিন্তায় দিশাহারা হয়ে আছি।”
ইউএনও ইমরানুজ্জামান বলেন, “এই ধরনের অসহায় ও মানবিক বিপর্যয়ে থাকা মানুষের পাশে দাঁড়ানো শুধু প্রশাসনিক দায়িত্ব নয়, এটি মানবিক কর্তব্য। আমরা চাই, বকুল যেন স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে পারে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে সম্ভাব্য সব ধরনের সহায়তা করা হবে।”
বকুলের পরিবারের প্রতি সহানুভূতি ও সহায়তা প্রদান করায় স্থানীয়রা ইউএনও’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছে। তারা জানান, দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই ইউএনও ইমরানুজ্জামান বিভিন্ন মানবিক উদ্যোগ নিয়ে এলাকাবাসীর আস্থা অর্জন করেছেন।
এদিকে, বকুলের পরিবার সমাজের বিত্তবান ব্যক্তি, জনপ্রতিনিধি ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের প্রতি আকুল আবেদন জানিয়েছে— “আমাদের ছেলেটার জীবন যেন থেমে না যায়। তাকে নতুন করে হাঁটতে শেখানোর জন্য আমরা সকলের সহায়তা চাই।”
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।