মো: রবি উদ্দিন,
শ্রীমঙ্গল প্রতিনিধিঃ
শ্রীমঙ্গলের স্থানীয় এক প্রভাবশালীর বিরুদ্ধে চট্টগ্রামের ব্যবসায়ীর জমি দখলের খবর পাওয়া গেছে। শ্রীঙ্গলের নিউ মার্কেট এর সত্বাধিকারী আবিদুর রহমান চৌধুরী সোহেল এর বিরুদ্ধে জমি দখলের এই অভিযোগ করেছেন চট্টগ্রামের পাহাড়তলী উপজেলার জামদু মিয়ার ছেলে ব্যবসায়ী মো. সেলিম মিয়া। তিনি জানান প্রায় এক বছর পূর্বে রাতের আধারে জীপ বোঝাই করে লোকজন নিয়ে এসে চোকিদারকে মারপিট তার কেনা ৮৬ শতাংশ জমি দখল করেন।
মঙ্গলবার (১লা অক্টোবর) শ্রীমঙ্গল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ অভিযোগ করেন।
সেলিম মিয়া বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল ভ্রমন করার সুবাদে শ্রীমঙ্গলের সৌন্দর্য ভালোলাগা থেকে এখানে পর্যটনখাতে বিনিয়োগ করতে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসের ২৯ তারিখে মোহাজিরাবাদ মৌজায় জান্নাতুল ফেরদৌস মসজিদের রাস্তার পাশে - জসিম উদ্দিন গংদিগের কাছ থেকে রেজিষ্ট্রি দলিলে ১শ’২৩ শতাংশ জমি ক্রয় করি, যার দলিল নং-৭০১৮/২৩। জমি ক্রয়ের পূর্বে আমার পাশের জমির মালিক শ্রীমঙ্গল নিউ মার্কেট এর ব্যবসায়ী আবিদুর রহমান চৌধুরীর সাথে আলোচনা করি। এসময় তিনি কোন আপত্তি না করলেও জমি কেনার পর তিনি প্রথমে ২টি দাগে ৮৬ শতাংশ জমি দাবি করেন ও পরে দখল করে নেন। কোটি টাকা বিনিয়গে কেনা এই জমি উদ্ধারে জেলা পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন জায়গায় ধরনা দেন। সর্বশেষ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর শ্রীমঙ্গল পৌরসভায় সেনা ক্যাম্প স্থাপন হলে সেখানে অভিযোগ দায়ের করি। সেনা ক্যাম্প কর্তৃক অভিযোগটি আমলে নিয়ে শুনানীর জন্য পরদিন ১৪ আগষ্ট উভয় পক্ষকে ডেকে পাঠান। পরদিন উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে শ্রীমঙ্গল পৌরসভার সার্ভেয়ারকে দুই পক্ষের কাগজপত্র পর্যালোচনা করে দেখার দায়িত্ব দেন। শুনানীর এক পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা তৎকালিন শ্রীমঙ্গল উপজেলা চেয়ারম্যান ভানু লাল রায় এর সাথে মোবাইল ফোনে কথা বলেন। পরে কাগজপত্র যাচাই ও ভানু লাল রায় বক্তব্য শুনে সেনা কর্মকর্তা জমির দখল ছেড়ে দেয়ার জন্য আবিদুর রহমান সোহেলকে নির্দেশ দেন। তবে আবিদুর রহমান চৌধুরী জমির দখল ছেড়ে দিতে অস্বীকৃতি জানান। এরপর সেনাবাহিনী থেকে জমির মালিকানা যাচাই করার জন্য উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) অফিসে অভিযোগটি প্রেরণ করেন। এর ধারাবহিকতায় এসি ল্যান্ড অফিস থেকে উভয় পক্ষকে এসিল্যান্ড অফিসে ডেকে পাঠানো হলে আর্মি অফিসারগণ এবং উভয় পক্ষ এসি ল্যান্ড অফিসে হাজির হলে এসিল্যান্ড সাহেব সবার উপস্থিতিতে বলেন- সকল কাজগপত্র যাচাই বাছাই করে বলেন, নামজারী খতিয়ান, অনলাইন খাজনা, দলিল দাগ সবকিছু পর্যালোচনা করে দেখা যায় এই জমিটির মালিক মো. সেলিম মিয়া। এসময় আবিদুর রহমান সোহেলকে বিভিন্ন মামলার অজুহাত দিয়ে সেখান থেকে চলে যায়’।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ‘প্রতিপক্ষের অব্যাহত হুমকির মুখে ১লা সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল থানা ও ২ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজার সেনা ক্যাম্পে লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগ করার খবর জানতে পেরে আবিদুর রহমান সোহেল ক্ষিপ্ত হয়ে আমার ও আমার ব্যবসায়িক অংশিদারদের নানা ভাবে হয়রানী শুরু করে। এর অংশ হিসেবে আবিদুর রহমান চৌধুরী মিথ্যা অভিযোগ করে আমার বিরুদ্ধে ৪ সেপ্টেম্বর একই দিনে মৌলভীবাজার আদালতে পৃথক ২টি মামলা দায়ের করেন’।
মো. সেলিম মিয়া অভিযোগ করেন, ‘পুলিশ-শ্রীমঙ্গল থানায় ১ তারিখে আমার দায়ের কৃত অভিযোগের বিষয়ে কোন তদন্ত না হলেও ৪ সেপ্টেম্বর তারিখে আমার প্রতিপক্ষের আদালতে মামলার জেরে দ্রুত তদন্ত শুরু করেন। প্রতিপক্ষের দায়ের করা মামলার প্রেক্ষিতে আদালত থেকে সরেজমিন তদন্ত করে ৯অক্টোবরের মধ্যে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য শ্রীমঙ্গল থানা পুলিশকে নির্দেশ দেয়া হয়। এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শ্রীমঙ্গল থানার এসআই মো. কামরুল হোসাইন ভুমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর আবেদন করেন।
সংবাদ সম্মেলনে সেলিম মিয়া বলেন, ‘শ্রীমঙ্গল থানার এসআই মো. কামরুল হোসাইন ভুমির প্রকৃত মালিকানা যাচাই করে প্রতিবেদন দেয়ার জন্য ১৭ সেপ্টেম্বর শ্রীমঙ্গল উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভুমি) বরাবর আবেদন করেন। সেমতে উপজেলা ভুমি অফিস যথাযত প্রক্রিয়ায় ভুমির মালিকানা সংক্রান্ত প্রতিবেদন থানায় জমা দেয়ার পর তদন্ত কর্মকর্তা সেই প্রতিবেদনের আলোকে ৯অক্টোবরের এর মধ্যে আদালতে প্রতিবেদন জমা দেয়ার কথা। কিন্তু ভুমি অফিসের ‘মালিকানা যাচাই প্রতিবেদন’ প্রেরনের পুর্বেই তদন্ত কর্মকর্তা অদৃশ্য কারণে ২০ সেপ্টেম্বর একটি মনগড়া প্রতিবেদন আদলতে প্রেরণ করেন। প্রতিবেদনের কোথাও ভুমির মালিকানা যাচাই ও জরিপ করার কথা বলা হয়নি’।
তিনি বলেন, ‘এনিয়ে আমি ২৪ সেপ্টেম্বর উপজেলা ভুমি অফিসে যোগাযোগ করলে ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমাকে পুলিশের আবেদনের প্রেক্ষিতে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে জায়গা সার্ভে করার নিমিত্তে উপস্থিত থাকতে বলেন। তবে ২৯ সেপ্টেম্বর সকালে ভুমি অফিসের সার্ভেয়ার আমাকে জানিয়ে দেন- তাদের না জানিয়ে তদন্তকারী কর্মকর্তা প্রতিবেদন আদালতে পাঠিয়ে দিয়েছে।
সেলিম মিয়া- শ্রীমঙ্গলে পর্যটন খাতে বিনিয়োগ করে বিপুল আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ার কথা জানিয়ে আবিদুর রহমানের দখলকৃত জমি উদ্ধারে স্থানীয় প্রশাসনসহ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে যোগাযোগ করা হলে, অভিযুক্ত আবিদুর রহমান জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘
আমি ২৫ দাগের মালিক এবং সেলিম মিয়া ৬৪ দাগের মালিক এনিয়ে ট্রাইবুনালে মামলা চলছে’ বলে তিনি জানান।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com