রেজাউল করিম সবুজ,
বিশেষ প্রতিনিধি:
দূর থেকে দেখে মনে হতে পারে মাচায় ঝুলছে লাউ-কুমড়া। কিন্তু কাছে গিয়ে একটু ভালো করে দেখলে দেখা যাবে এগুলো লাউ বা কুমড়া নয়। ঘেরের রাস্তায় মাচায় জাল দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে ঝুলছে সবুজ-কালচে ডোরাকাটা রসালো তরমুজ। প্রথমবারের মতো বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল নদী ও সুন্দরবন বেষ্টিত শ্যামনগর কুলটুকরি গ্রামে লবণাক্ত জমিতে অসময়ে উৎপাদিত তরমুজ চাষ করে সাড়া ফেলেছেন কয়েক জন কৃষক। তরমুজের মৌসুম শেষ হয়েছে আরও আগেই। তবে অসময়ে ভাসমান বেডে মাচা তৈরি করে ফলটি চাষে সাফল্যের দেখা পেয়েছে। কৃষি বিভাগের সহায়তায় অসময়ে তরমুজ চাষ করে প্রথমবারেই সাফল্য পেয়েছেন কৃষকেরা। কম খরচে বেশি ফলন ও দাম ভালো পাওয়ায় লাভবান হচ্ছেন তাঁরা। এতে অনেক কৃষকই এই ঘেরের ভেরিতে তরমুজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। শ্যামনগর উপজেলার কুলটুকরি এলাকার তরমুজচাষি সুমন কুমার মন্ডল বলেন, আমি প্রতিবছর মাছ চাষের পাশাপাশি ঘেরে ভেরিতে বেগুন, ঢ্যাঁড়স, মিষ্টিকুমড়াসহ অন্যান্য শাকসবজির চাষ করি। এই বছর প্রথম মে মাসের শেষের দিকে উপজেলা কৃষি অফিস ও উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মহিউদ্দিন স্যারের পরামর্শ নিয়ে ৫ বিঘা মৎস্য ঘেরের পাড়ে ৫০০ টি তরমুজের চারা রোপন করেছি। গাছে রোগবালাইও নেই, ফলনও ভালো হয়েছে। তরমুজ ৮-৯ গ্রাম পর্যন্ত হয়েছে। কৃষি গবেষণা বিভাগ ও শ্যামনগর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, স্বাভাবিক তরমুজের মৌসুম শেষ হয়েছে আগেই। তবে এবার অসময়ে শ্যামনগর উপজেলার প্রায় ৬ হেক্টর জমিতে ১১ জন কৃষক মাচান পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের সুস্বাদু তরমুজের আবাদ করেছেন। কৃষকদের বীজ সরবরাহ থেকে শুরু করে সার্বিক সহযোগিতা করা হচ্ছে। প্রথমবারের মতো তরমুজ চাষ করা কুলটুকরি এলাকার কৃষকরা বলেন আমরা আগামীতে আরও বেশি বেশি তরমুজ চাষ করতে চাই কারণ আমাদের এলাকায় নোনা পানি জন্য কোন কিছু ভাল ভাবে হয় না। তরমুজগুলোর রং ও স্বাদ ভালো। সুমন কুমার বলেন অনেকে আমার দেখে তরমুজ চাষের পরামর্শ নিচ্ছেন আমিও দিচ্ছি। ২৯ জুলাই সরেজমিনে উপজলার কুলটুকরি, সিরাজপুর, বক্ষণশাসন এলাকায় কয়েকটি ঘেরে দেখা যায়, কয়েকজন চাষী তার ক্ষেতে পরিচর্যায় ব্যস্ত আছে। পাশে বাঁশ ও বানের জাল দিয়ে তৈরি করা মাচায় নেটের ব্যাগে অসংখ্য ছোট বড় তরমুজ ঝুলে আছে। তরমুজগুলোর রং কোনোটির গায়ে ডোরাকাটা দাগ, কোনোটি আবার কালচে ভূরুলিয়া ইউনিয়নের ২০ বিঘা মৎস্যঘেরের ওপর মাচা তৈরি করে অসময়ে বারি তরমুজ- তাঁদের ঘেরের মধ্যে মাচায় জাল দিয়ে মোড়ানো ব্যাগের ভেতরে ঝুলছে সবুজ-ডোরাকাটা রসাল তরমুজ। তরমুজচাষিদের ভাষ্য, সরেজমিন কৃষি গবেষণা বিভাগের সহযোগিতায় তরমুজের বীজসহ বিভিন্ন উপকরণ পেয়েছেন তাঁরা। বারি তরমুজ-২–এর ভেতরের অংশের রং হলুদ। দেখতে যেমন সুন্দর, খেতেও সুস্বাদু। আবাদে খরচ কম। বাজারদরও বেশ চড়া থাকায় খুশি তাঁরা। উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা মোঃ মহিউদ্দীন গাজী বলেন, উপজেলায় ১১ জন কৃষক এবার মৎস্য ঘেরের পাড়ে প্রথমবারের মতো অসময়ে তরমুজের আবাদ করে সফল হয়েছেন। ‘দক্ষিণাঞ্চলে অনেক ডোবা-নালা আছে। ডোবা-নালা ও ঘেরের পাড়ে বা রাস্তায় মাছ ও সবজি তরমুজের সমন্বিত চাষে এলাকার কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে তারা লাভবানও হতে পারেন। রোপণের আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যেই তরমুজ বিক্রি করা যায়। কৃষি গবেষণায় উদ্ভাবিত এ তরমুজ চাষের জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে সভা-সেমিনারসহ বিভিন্নভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। বীজ বপনের আড়াই থেকে ৩ মাসের মধ্যেই এ তরমুজ বিক্রির উপযোগী হয়ে ওঠে। এ তরমুজ চাষে কোনো সার প্রয়োগ করতে হয় না। এ তরমুজ বিষমুক্ত হওয়ায় পুষ্টিগুণ বেড়ে যায়। অসময়ের এ নতুন জাতের তরমুজ চাষে চাষিরাও সফলতা অর্জন করতে পারবেন। তারা ভালো দামে বিক্রি করে লাভবান হতে পারবেন
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com