পরিবর্তন ডেস্কঃ লালমনিরহাটে চাল নিয়ে শুরু হয়েছে ব্যবসায়ীদের চালবাজি। ৭দিনের ব্যবধানে লাফিয়ে লাফিয়ে প্রতিকেজিতে বাড়ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা করে।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল হতে চালের বাজার নিয়ন্ত্রনে মাঠে কাজ করবে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত।
জানা গেছে, হঠাৎ করে লালমনিরহাটের বিভিন্ন হাট বাজার ও শহরের বাজার বিভিন্ন দোকান গুলোতে চালের দাম লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়ছে।
৭দিনের ব্যবধানে সকল প্রকার চাল কেজিতে ৭টাকা হতে ১০ টাকা খুচরা মূল্য বেড়েছে। অনেক জায়গায় ১০ থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত মুল্য বৃদ্ধির খবর শোনা গেছে। কিন্তু সেই হিসেবে ধানের দাম বাড়েনি।
এখনো লালমনিরহাটের হাট বাজারে ভালোমানের ধান ৮শত হতে ৯১০ টাকা মনে বিক্রি হচ্ছে। সরকার সরকারিভাবে ধান কিনছে এক হাজার ৪০ টাকা মন দরে। চাউল কিনছে প্রতিকেজি ৩৬ টাকা দরে।
এবছর ধানের মৌসুমে জেলায় লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রায় দুই লাখ মেঃটন ধান বেশি উৎপাদন হয়ে ছিল। কৃষক সাড়ে ৪শত হতে সাড়ে ৫শত টাকায় বাজারে ধান বিক্রি করেছে। তাতে কৃষকের ধান চাষের উৎপাদন খরচ উঠেনি।
বর্তমানে কৃষকের ঘরে ধান নেই। সব ধান মিল, চালাত মালিক ও মজুরদারদের গোডাউনে রয়েছে। একটি কালোবাজারি চাল ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট কৃষকের ঘরে ধান না থাকার সুযোগে হঠাৎ বাজারের ধানের দাম বেড়ে দিয়েছে। এছাড়াও মিল মালিক ও চালের মহাজনরা করোনাভাইরাসের সুযোগে চালের বাজারে দাম বাড়িয়ে দিয়েছে।
জেলা খাদ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, জেলায় ৭টি সরকারি গোডাউনে প্রায় ১৪ হাজার ২০ মেঃটন চাল মজুদ রয়েছে। ধান মজুদ রয়েছে ৩ হাজর ৪৫৬ মেঃ টন। এই ধান সরকারি ভাবে ভাঙ্গানোর জন্য মিলভাড়া করা হয়েছে। এ থেকে প্রায় ২হাজার ২৯৬ মেঃটন চাল পাওয়া যাবে। দেশে এই মূহুর্তে চালের কোন সংকট নেই।
দরিদ্র জনগোষ্ঠির খাদ্য নিরপপত্তা নিশ্চিত করতে জেলায় মার্চ ও এপ্রিল মাসে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচি চলছে। সেখানে ৫৯ হাজার ৪৬৪ জন দরিদ্র মানুষকে ১০ টাকা দরে প্রতিমাসে ৩০ কেজি করে চাল দেয়া হবে। এতে প্রতিমাসে চাল প্রয়োজন ১৭শত ৮৪ মেঃটন।
লালমনিরহাটের বিভিন্ন হাট বাজার ঘুরে দেখা গেছে, একই চালের দাম একেক বাজারের কেজি প্রতি বিভিন্ন বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শহরের নবাবেরহাট বাজারের চালের খুচরা বিক্রেতারা ৭দিন আগে স্বর্ণা চাল প্রতিকেজি বিক্রি করেছে ৩০ টাকা, বর্তমানে বিক্রি করছে, ৩৮ টাকা, আটাশ চাল পূর্বের বাজার ছিল ৩৪ টাকা, বর্তমান বিক্রি হচ্ছে ৪৪ থেকে ৪৬ টাকা, পায়জন চাল পূর্বে ছিল ৩৪ টাকা, ৭দিনের ব্যবধানে বিক্রি হচ্ছে ৪৮ টাকা।
খুচরা ব্যবসায়ীরা জানান, তারা বেশি দামে মহাজনদের কাছ থেকে চাউল কিনছে। স্থানীয় বাজারের কেজিতে খুচরামূল্যে কেনা থেকে দুই টাকা বেশি দামে বিক্রি করছে।
চালের মহাজনদের দাবি তারা চাউলের মোকাম হতে বেশি দামে কিনে আনতে হচ্ছে। তারপর সামান্য লাভে তারা খুচরা পাইকারদের কাছে বিক্রি করছে। চালের দাম লাফিয়ে বাড়ার কোন তথ্য তারা দিতে পারছেনা।
লালমনিরহাট জেলার চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি মোঃ সিরাজুল হক জানান, ব্যবসায়ী নেতাদের সাথে জেলা প্রশাসকের বৈঠক হয়েছে। সেখানে সর্বসম্মতিতে চালেল বাজার নিয়ন্ত্রনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
আজ শুক্রবার হতে বাজারে বাজারে ভ্রাম্যমান আদালতের ম্যাজিষ্ট্রেটগণ ঘুরবেন। এই ট্রাষ্টফোর্সসে ব্যবসায়ী প্রতিনিধিও রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৯ মার্চ) বিকাল ৪টায় জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে সম্মেলন কক্ষে জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে নিত্যপণ্য দ্রব্যমূল্য বাজার মনিটরিং কমিটির সভায় হঠাৎ করে চালের মুল্য বৃদ্ধির আলোচনা উঠে।
সভায় চালসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যমূলের দাম বাড়ায় উদবেক প্রকাশ করা হয়।
এসময় জেলার শীর্ষ চাল ব্যবসায়ীগণ ও জেলা চেম্বার অফ কমার্স এন্ড ইন্ডাষ্ট্রিজের সভাপতি উপস্থিত ছিলেন। সেখানে সিদ্ধান্ত হয়। চাউল ও নিত্যপণ্য দ্রব্যের বাজার নিয়ন্ত্রনে শুক্রবার হতে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্ব ট্রাস্ট ফোর্স বাজারে ভ্রম্যমান আদালত পরিচালনা করবে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর জানান, নিত্যদ্রব্য পন্য বাজার মনিটরিং কমিটির মিটিংয়ে সকলের মতামতের ভিত্তিতে বাজার নিয়ন্ত্রনে ট্রাস্ট ফোর্স গঠন ও ভ্রাম্যমান আদালত পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়।
শুক্রবার (২১ মার্চ) সকাল হতে মাঠে কাজ করবে নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে ভ্রাম্যমান আদালত।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com