অনলাইন ডেস্কঃ করোনাভাইরাস পরীক্ষা ও পরামর্শের জন্য আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরগুলোতে কল করেও কাঙ্খিত সেবা না পাওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ জ্বর, সর্দি-কাশি নিয়ে হাসপাতালে গেলে কর্তৃপক্ষ বলছে রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান- আইইডিসিআরে যান। আর আইইডিসিআরে গেলে তারা বলছেন হটলাইনে ফোন দেন। হটলাইনে অনেক চেষ্টা করে ফোন গেলেও তারা রোগীকে জানান, করোনার উপসর্গ বা লক্ষণ নেই।
এ অবস্থায় সাধারণ রোগীদের চরম ভোগান্তি নিয়ে চিকিৎসা ছাড়াই বাড়ি ফিরে যেতে হচ্ছে। জ্বর, শ্বাসকষ্ট, বুকে ব্যাথা, নিউমোনিয়া- এমন রোগ হলে কোন হাসপাতাল চিকিৎসা দিচ্ছেনা বলেও অভিযোগ করেছেন তারা।
এমনই একজন ভুক্তভোগী মো. খোকন। গত শুক্রবার যান আইইডিসিআরে। খোকনের মামা জ্বর ও কাশি নিয়ে ভর্তি ছিলেন বক্ষব্যাধী হাসপাতালে। তার অভিযোগ, তিনদিন চিকিৎসা দেয়ার পর গুরুতর অবস্থা দেখে রোগীর চিকিৎসা বন্ধ করে দেন সেখানকার ডাক্তাররা।
একজন নার্স এসে বলেন, করোনার উপসর্গ আছে। আইইডিসিআরে ফোন দেন। তারপর অনেকবার ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেনি। এক পর্যায়ে বক্ষব্যাধি হাসপাতাল থেকে তাকে রিলিজ করে দেয়া হয়।
আইইডিসিআরে আসলে এখানে সহযোগিতা করার মতো কেউ নেই। তার মতো আরো ১০-১২ জন বসে আছেন গেটের সামনে। দারোয়ান জানিয়েছেন, এখানে রোগী দেখা হয়না, হাসপাতালে চলে যান।
বেলাল হোসেন নামের আরেকজন বলেন, আইইডিসিআরের যেসব হটলাইন নম্বর আছে তাতে ফোন দিলেও কেউ রিসিভ করেনি। তাই বাধ্য হয়ে এখানে চলে এসেছি।
কলের সংখ্যা অত্যাধিক হওয়ায় যার মধ্যে কিছুটা করোনা উপসর্গ আছে সেই ব্যক্তি সেবা পাচ্ছেন না। এ বিষয়টা কে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে আইইডিসিআর কর্তৃপক্ষ জানায়, কোভিড-১৯ এর প্রাদুর্ভাবের আগে প্রতিদিন তিন থেকে চার হাজারের মতো কল আসে। আর মার্চের প্রথম দুই সপ্তাহে এই নম্বরগুলোতে কল এসেছে গড়ে ৩০ হাজার। এরপর থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ পেতে প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০ হাজারের বেশি কল আসছে। গত দুই সপ্তাহে এগুলো সমন্বয় করে মানুষকে সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন তারা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে, স্বাস্থ্য অধিদফতরের কন্ট্রোলরুমের সহকারী পরিচালক ডাক্তার আয়েশা আক্তার বলেন, প্রথমে আমাদের হটলাইন নম্বর ছিল ৪টি। তারপর আমরা চৌদ্দটি নম্বর দিয়েছি, পরে সব মিলিয়ে আমাদের হটলাইন নম্বর হয় ১৭টি। এর মধ্যে আমাদের হান্টিং নম্বর ১৬২৬৩ চালু করা আছে।
তিনি বলেন, যখনই কেউ ফোন করেছেন, তাকে কী করতে হবে আইইডিসিআর বা স্বাস্থ্য অধিদফতর থেকে বলে দেয়া হচ্ছে। যারা বিদেশ ফেরত তারা বাসায় থেকে চিকিৎসা নিতে পারেন। যদি কেউ সংক্রমিত হয়ে থাকেন সে ক্ষেত্রে হাসপাতলে আসবেন না এবং নমুনা টেস্ট করার জন্য বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। আমরা গিয়ে নমুনা টেস্ট করে নিয়ে আসবো।
আইইডিসিআরের বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা এ এস এম আলমগীর বলেন, অনেকে ফোন করে আমাদের করা তালিকায় নাম লেখান। আমরা যখন বাসায় যাই তখন অনেকে নমুনা দিতে রাজি হন না। এরকম অসংখ্য ঘটনা গত দুই দিনে আমরা পেয়েছি। অভিযোগ তো মানুষ করতেই পারে। এটা নিয়ে আমাদের কথা বলার কিছু নেই। আমরা সাধ্যমত সেবা দেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছি।
এ বিষয়ে আইইডিসিআরের পরিচালক মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা বলেন, আমাদের হটলাইনগুলো শুধুমাত্র করোনাভাইরাসের লক্ষণ উপসর্গ যাদের আছে সেসব রোগীর সেবা প্রদানের জন্য খোলা হয়েছে। কিন্তু অনেক সময় আমরা লক্ষ্য করছি করোনাভাইরাসের কোনো উপসর্গ নেই এমন অনেক অপ্রয়োজনীয় কল আমাদের হটলাইনে আসছে। যার ফলে অনেকে হয়তো আমাদের লাইনটা ব্যস্ত পাচ্ছেন। তাই শুধুমাত্র এই রোগের উপসর্গ ছাড়া অযথা হটলাইনে কল না দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
বিশ্বব্যাপী প্রাণঘাতী কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়ার পর সাধারণ মানুষের মধ্যে বেড়েছে আতঙ্ক। জ্বর, ঠান্ডা, কাশি হলেও স্বাস্থ্য অধিদফতরের স্বাস্থ্য বাতায়ন নম্বর ১৬২৬৩ তে ফোন করে প্রয়োজনীয় সেবা গ্রহণের জন্য বলা হয়। পরবর্তীতে ফোন কলের সংখ্যা বাড়ায় এবং সরকারের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর) সর্বমোট ১৭টি হটলাইন নম্বরে সেবা দেয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
আইইডিসিআর-এর হটলাইন নম্বর
০১৫৫০০৬৪৯০১, ০১৫৫০০৬৪৯০২, ০১৫৫০০৬৪৯০৩, ০১৫৫০০৬৪৯০৪, ০১৫৫০০৬৪৯০৫, ০১৪০১১৮৪৫৫১, ০১৪০১১৮৪৫৫৪, ০১৪০১১৮৪৫৫৫, ০১৪০১১৮৪৫৫৬, ০১৪০১১৮৪৫৫৯, ০১৪০১১৮৪৫৬০, ০১৪০১১৮৪৫৬৩, ০১৪০১১৮৪৫৬৮, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯৩৭১১০০১১।
নিউজ রুমঃ News.dainikparibarton@gmail.com অথবা News@dainikparibarton.com
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2025 dainikparibarton.com