অনলাইন ডেস্কঃ
বিবিসির বরাতে জানানো হয়েছে,
জ্ঞানবাপী মসজিদের নীচে ব্যাসজীর ভূগর্ভস্থ কক্ষ বলে যেটি পরিচিত, সেখানে হিন্দুদের পূজা করার অনুমতি দিয়ে বারাণসীর জেলা আদালত বলেছিল প্রশাসনকে এক সপ্তাহের মধ্যে পূজার বন্দোবস্ত করতে হবে।
কিন্তু নির্দেশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই বুধবার গভীর রাতে পূজা শুরু করার সব ব্যবস্থা করা হয়। কীভাবে অতি দ্রুত পূজার বন্দোবস্ত করা হয়েছিল, তা বিস্তারিত জানতে পেরেছে বিবিসি।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির ট্রাস্ট ও স্থানীয় প্রশাসনের কর্মকর্তারা বলছেন দায়িত্বটা বেশ কঠিনই ছিল।
[caption id="attachment_44506" align="aligncenter" width="300"] হিন্দুদের পুজোর ব্যবস্থা করার জন্য সাত দিন সময় দিলেও কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই তার বন্দোবস্ত করে প্রশাসন[/caption]
প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষটি থেকে যেসব মূর্তি পাওয়া গেছে, শুধু সেগুলোই পূজা করার কথা ছিল।তাই প্রশাসনের প্রথম কাজ ছিল কোষাগারে রাখা নির্দিষ্ট ওই মূর্তিগুলি চিহ্নিত করে সেগুলিকে বার করে আনা।প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যে সার্ভে চালিয়েছিল, সেই প্রতিবেদনে ব্যবহৃত নির্দিষ্ট ওই মূর্তিগুলির ছবি দেখে সেগুলিকে চিহ্নিত করা হয়।
[caption id="attachment_44507" align="aligncenter" width="300"] শুক্রবার, দোসরা ফেব্রুয়ারি মসজিদের দিকে চলেছেন নামাজিরা[/caption]
ছবি দেখে মূর্তিগুলি সনাক্ত করতে দুই থেকে তিন ঘণ্টা সময় লেগেছিল।
আটটি মূর্তি চিহ্নিত করে কোষাগার থেকে ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে নিয়ে যায় প্রশাসন।থেকে ৩০ হাজার ভক্ত থাকেন সবসময়ে। তাদের সরানোর বন্দোবস্ত করতেও প্রশাসনের বেশ কিছুটা সময় লেগে যায়।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দির কর্তৃপক্ষ এবং নিকটবর্তী চেতগঞ্জ থানার কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে বারাণসীর জেলা ম্যাজিস্ট্রেট এবং পুলিশ কমিশনার সিদ্ধান্ত নেন যে মন্দির ও মসজিদে মাঝে যে লোহার বেড়া রয়েছে, সেটা কেটে রাতের বেলাতেই পূজার ব্যবস্থা করা হবে।
জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, লোহার ব্যারিকেড কেটে সেখানে লোহার গেট বসানো হয়েছে।
ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে অন্ধকার থাকায় সেখানে আলোর ব্যবস্থাও করা হয়েছিল। দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায় ঘরটি বেশ স্যাঁতস্যাঁতেও ছিল বলে জানাচ্ছেন প্রশাসনের কর্মকর্তারা।
আবার দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পরে সেখানে ফের পুজো শুরু করার ধর্মীয় রীতি কী, সে ব্যাপারে কয়েকজন বিশেষজ্ঞের পরামর্শও নেয় প্রশাসন।
প্রশাসন সূত্রে খবর, কাশী মন্দিরের পুরোহিত ওমপ্রকাশ মিশ্র পূজা শুরু করেন।
বারাণসী প্রশাসন বলছে, যখন ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে যখন প্রবেশ করে পূজা করানো হয়, তখন সেখানে সোমনাথ ব্যাসের পরিবার অথবা এই মামলার আবেদনকারীদের কেউই সেখানে উপস্থিত ছিলেন না।কক্ষটির কোনও দরজা ছিল না
বারাণসী প্রশাসনের মতে, ভূগর্ভস্থ কক্ষটির কোনও দরজা ছিল না, তাই ভেতরে ঢুকতে কোনও সমস্যাই হয় নি।
আদালতের নির্দেশে ওই কক্ষটিতে যে সার্ভে করা হয়েছিল ২০২২ সালে, তখন এই ঘরটিতেই সবথেকে বেশি পরীক্ষা – নিরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ওই সার্ভের সময়েই মসজিদের ওজুখানায় একটি শিবলিঙ্গ থাকার দাবি করেছিল হিন্দুরা।
এরপরে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ যখন সাম্প্রতিক সমীক্ষা করে, তখন তারা এই কক্ষটি থেকে জমে থাকা মাটি সরিয়ে রেখেছিল। প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, আগে এই কক্ষটির দুটি চাবি ছিল।
‘ব্যাসজীর’ ভূগর্ভস্থ কক্ষ নামে পরিচিত ওই ঘরটির একটি চাবি ছিল সোমনাথ ব্যাসের কাছে এবং অন্যটি থাকত জেলা প্রশাসনের কাছে।
সোমনাথ ব্যাস বছরে একবার করে রামায়ণ পাঠের আয়োজন করাতেন প্রশাসনের কাছ থেকে আলাদা করে অনুমতি নিয়ে।
সোমনাথ ব্যাসের মৃত্যুর পর সেটা বন্ধ হয়ে যায় আর চাবিও খুঁজে পাওয়া যায় নি। একটা সময়ে কক্ষটির কাঠের দরজাটি ভেঙে যায়।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই কক্ষটি ৩৫ থেকে ৪০ ফুট লম্বা এবং ২৫ থেকে ৩০ ফুট চওড়া।
এতে পাঁচটি ছোট কুঠুরি রয়েছে। একটি কুঠুরিতে মাটি ভর্তি রয়েছে আর বাকি তিনটি খোলাই থাকে।
পঞ্চম কুঠুরিটি একটা দেওয়াল তুলে বন্ধ করা রয়েছে। এএসআই মনে করে যে সেটির ভেতরে একটি কুয়া আছে।কোন কোন মূর্তির পূজা কীভাবে হল?
ভূগর্ভস্থ কক্ষটি থেকে উদ্ধার হওয়া মোট আটটি মূর্তি পূজা করা হয়। ওই মূর্তিগুলি এতদিন সরকারি কোষাগারে রাখা ছিল।
মূর্তিগুলির মধ্যে রয়েছে শিবলিঙ্গের দুটি অংশ, ভগবান বিষ্ণুর একটি মূর্তি, দুটি মূর্তি ভগবান হনুমানের, একটি গণেশের মূর্তি, ‘রাম’ লেখা একটি ছোট পাথর এবং গঙ্গা-র একটি ‘মকর’।
প্রশাসনের দাবি, সব মূর্তিগুলিই ভাঙ্গা, কোনোটাই আস্ত ছিল না।
কাশী বিশ্বনাথ মন্দিরের ট্রাস্টের প্রধান কার্যনির্বাহী অফিসার বিশ্ব ভূষণ মিশ্র বিবিসিকে জানিয়েছেন যে বিশ্বনাথ মন্দিরে যেভাবে পুজো অনুষ্ঠান হয়, সেই একই রীতি মেনেই ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতেও পুজো করছে তাদের ট্রাস্ট।
সেখানে মঙ্গলারতি করা হচ্ছে রাত আড়াইটা থেকে ভোর সাড়ে তিনটে পর্যন্ত। এরপর সকাল ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত ভোগ আরতি। বিকেল চারটের সময় আরেকটা আরতি হয়।
সপ্তর্ষি আরতি সন্ধ্যা সাতটা থেকে আটটার মধ্যে এবং শেষ আরতি রাত ১০টা থেকে ১১.৩০ মিনিট পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী মন্দিরে ‘রাগ-ভোগ’ নামক রীতিরও আয়োজন করতে হবে।মাত্র একজন পুরোহিতের প্রবেশাধিকার
ওই ভূগর্ভস্থ কক্ষটিতে কেবলমাত্র একজন পুরোহিতের প্রবেশাধিকার রয়েছে বলে জানিয়েছে প্রশাসন।
প্রাথমিকভাবে ঘরটি পরিষ্কার করা এবং আলো ইত্যাদির ব্যবস্থা করতে কয়েকজন সেখানে ঢুকেছিলেন, কিন্তু রাতে মূর্তি স্থাপনের পর একবার আরতি করা হয়। আর শুক্রবারও একজন মাত্র পুরোহিতই ভেতরে গিয়ে পূজা করছেন।
লোহার ব্যারিকেড কেটে যে প্রবেশ পথ বানানো হয়েছে, তা ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ আরতির সময় খোলা হচ্ছে আর রাতে আবারও আরতির পরে সাড়ে দশটায় বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে।
ভক্তরা যদি দর্শন করতে চান, তা হলে তাদের বাইরে থেকেই দেখতে হবে, ভেতরে কেউ প্রবেশ করতে পারবেন না।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com