শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৮:৪৫ অপরাহ্ন
জামান মৃধা, ডিমলা (নীলফামারী)
”মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য, একটু সহানুভূতি কি মানুষ পেতে পারে না ও বন্ধু……’। বিছানায় শুয়ে থাকা অসুস্থ রিয়াদের দিকে তাকালে মানবতার কথা বলা ভূপেন হাজারিকার এ কালজয়ী গানের উক্তিটির কথা মনে পরে।
আব্বা আমার নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে, আমি আর সহ্য করতে পারছি না। তোমরা আমাকে যেভাবেই হোক অর্থ যোগাড় করে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচাও। আমি বাঁচতে চাই বাবা! আমি স্কুলে যেতে চাই! আমার বন্ধুদের সাথে খেলতে চাই! কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো বলছিলো মাত্র ৮ বছর বয়সেই জটিল ও কঠিন রোগে আক্রান্ত নীলফামারীর ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের বারোবিশা গ্রামের হতদরিদ্র ভ্যান চালক শরিফুল ইসলাম ও গৃহিনী আজিজা বেগম দম্পতির একমাত্র ছেলে রিয়াদ (৮)। সে ছাতনাই ১নং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণির মেধাবী ছাত্র।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ছেলেটির সারা শরীরে ব্যথার কারণে দিন রাত বিছানায় শুয়ে শুধু চিৎকার করছে আর বাঁচার আকুতি জানাচ্ছে। চোখ দুটো হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। দুইটি বাল্বের একটির রক্তনালী বন্ধ থাকায় সারা শরীর কালো বর্ণ ধারণ করেছে। নাদুসনুদুস রিয়াদের শরীর শুকিয়ে কঙ্কালসার হয়ে গেছে। হাঁটাচলার শক্তিটুকুও আস্তে আস্তে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছে। এখন কোন কিছু খেতে পারে না। ছয় মাস যাবৎ মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছে। ইতোমধ্যে সম্পদ যা ছিল সব বিক্রি করে প্রায় ৪/৫ লাখ টাকা খরচ করে ছেলের চিকিৎসা করিয়েছেন তার বাবা। বর্তমানে বাড়ির দুই শতাংশ জায়গাটুকুই তার শেষ সম্বল। ছেলের চিকিৎসার জন্য অনেক অর্থের প্রয়োজন। কিন্ত দরিদ্র পিতার পক্ষে চিকিৎসার ব্যয়ভার বহন করা আর সম্ভব হচ্ছেনা। তাহলে কি অর্থের অভাবে মেধাবী ছাত্র রিয়াদের জীবন প্রদীপ নিভে যাবে?
পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, ২০২০ সালের জুলাই মাসে হঠাৎ করে রিয়াদের শ্বাস প্রশ্বাসের সমস্যা হলে দ্রুত ডিমলা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক ডাঃ মো. কামরুজ্জামানকে দেখানো হয়। তিনি দ্রুত বিশেষজ্ঞ ডাক্তারকে দেখানোর পরামর্শ দেন। এরপর রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ আবু আহমেদ মুর্তজাকে দেখালে তিনি ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালে নিয়ে যেতে পরামর্শ দেন। সেখানে হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডাঃ মো. নুরুল আক্তার হাসানের তত্ত্বাবধানে পরীক্ষা-নিরীক্ষায় ধরা পড়ে রিয়াদের হার্টে ছিদ্র, দুইটি বাল্বের একটি অকেজো এছাড়া হার্টের রক্তনালী শুকিয়ে গেছে। তারা বলেন রিয়াদকে দ্রুত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ দুইটি জটিল অপারেশন করাতে হবে। খরচ হবে প্রায় ১২ লাখ টাকার ঊর্ধ্বে। যার ব্যয়ভার এই দরিদ্র পরিবারের পক্ষে বহন করা সম্ভব নয়।
রিয়াদের বাবা কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, আমার ছেলেকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল। এখন আর কোন স্বপ্ন নেই। আমার ছেলেটা বাঁচলেই আমি খুশি। অর্থের অভাবে আমি তার চিকিৎসা করাতে পারছি না। এ সময় তার দুই চোখ দিয়ে শুধু অশ্রু ঝরছিল। আমি বাঁচতে চাই। পৃথিবীর আলো-বাতাসে আমি আমার সন্তানকে নিয়ে বেঁচে থাকতে চাই। শিশু সন্তানের জীবন রক্ষায় চিকিৎসার সহায়তার জন্য এভাবেই করুণ আকুতি জানিয়েছেন রিয়াদের দরিদ্র পিতা শরিফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, রিয়াদ পড়াশোনায় ভালো ছিল। স্কুলের পাশাপাশি সকালে সে মাদ্রাসায় যেত। অত্যান্ত হাস্যজ্জল ও কর্মচঞ্চল এবং দুরন্ত প্রকৃতির ছেলে ছিল রিয়াদ। আমার একমাত্র ছেলেটি এখন অসুস্থ হয়ে পড়ে আছে। রিয়াদকে সুস্থ করতে আত্মীয়-স্বজনের নিকট হাত পেতেছি। সবাই সাধ্যমত সহায়তা করেছে।
তিনি আরও বলেন, এখানকার ডাক্তারেরা বলেছে দেশে অপারেশন করালে বাঁচার নিশ্চয়তা কম। তাই রিয়াদকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ভারতের নারায়ণা হাসপাতালের ডাক্তার দেবী শেঠীর কাছে চিকিৎসা করাতে চাই। আমি তো দরিদ্র মানুষ! ভ্যান চালক! রিয়াদের দুইটি জটিল অপারেশন করাতে এতে প্রায় ১১/১২ লাখ টাকা খরচ হবে বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক। কিন্তু এত টাকা খরচ করার মত সামর্থ্য আমার নাই। তাই আমি সমাজের দানশীল বিত্তবানদের প্রতি আকুল আবেদন করছি আর্থিক সহায়তা করার জন্য। আমার একমাত্র ছেলেটাকে বাঁচানোর জন্য।
অসুস্থ রিয়াদের মা আজিজা বেগম আবেগ আপ্লুত কন্ঠে বলেন, মোর একেনাই ছাওয়া। মোর জাদুটা লেখাপড়া শিখিবে, চাকুরী করিবে, মোর সংসারের হাল ধরিবে। কিন্ত মোর সোগ স্বপ্ন ভাঙ্গি যায়ছে। অনেক আদরের একেনা ছাওয়া মোর পাইশার ও চিকিৎসার অভাবে চোখের সামনে মারা যাইবে মা হয়া মুই ক্যামনে সহ্য করিম।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক রবিউল ইসলাম বলেন, ছেলেটি অনেক মেধাবী ছাত্র ছিল। কিন্ত অসুস্থ হওয়ায় আর্থিক সংকটের কারণে চিকিৎসা না হওয়ায় স্কুলে আসতে পারছে না। আমি আমার প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে যতটুকু পারি সহযোগিতা করবো।
পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ খান বলেন, রিয়াদকে চিকিৎসা করতে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্তু তার অভাবের সংসারে এত অর্থের যোগান দেওয়া সম্ভব নয়। তাই তার চিকিৎসার জন্য দেশের সহৃদয় ব্যাক্তি ও বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।
রিয়াদ দীর্ঘদিন ন্যাশনাল হার্ট ফাউন্ডেশন হাসপাতালের সহকারি অধ্যাপক ডাক্তার মোহাম্মদ নুরুল আক্তার হাসানের তত্ত্বাবধানে ছিলেন।
ডাঃ নুরুল আক্তার হাসান বলেন, এই অপারেশন অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। রোগীকে বাঁচাতে হলে দ্রুত সময়ের মধ্যে অপারেশন করাতে হবে।
ডিমলা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রাসেল মিয়া বলেন, শিশুটির অসুস্থতার কথা তিনি শুনেছেন। শিশুটি যাতে প্রয়োজনীয় চিকিৎসা পায়, সে ব্যাপারে প্রশাসনের পক্ষ থেকে যতটুকু সম্ভব সহযোগিতা করা হবে।
চিকিৎসার জন্য আর্থিক সহায়তা করতে-বিকাশ নম্বর (ব্যক্তিগত) (১) ০১৭৭৩৯৯০২৪৫ এবং নগদ ও বিকাশ (২) ০১৭৭৭৯৪৬১৪৭ নম্বরে সাহায্য পাঠাতে অনুরোধ করেছেন অসুস্থ রিয়াদের পরিবার।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।