রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:০১ পূর্বাহ্ন
বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ সমগ্র বাঙালি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ এবং স্বাধীনতার মন্ত্রে উজ্জীবিত করে, কোনো ধরনের আপোসের পথে না গিয়ে বঙ্গবন্ধুর আহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশের স্বাধীনতা অর্জনে ৩০ লাখ মানুষ জীবন উৎসর্গ করে, যা বিশ্ব ইতিহাসে নজীরবিহীন। শ্রেষ্ঠ ভাষণের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে, নেতৃত্বের সর্বোচ্চ দেশাত্ববোধ, সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে স্থির এবং লক্ষ্য অর্জনে স্পষ্ট দিকনির্দেশনা। বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণের মূল লক্ষ্য ছিল পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ ঔপনিবেশিক শাসন-শোষণ ও নিয়ন্ত্রণ থেকে বাঙালির জাতীয় মুক্তি।এ ভাষণের অপর একটি বৈশিষ্ট্য হচ্ছে,সময়ের পরিসীমায় গণ্ডিবদ্ধ না থেকে তা হয় কালোত্তীর্ণ ও প্রেরণাদায়ী।স্বাধীনতা বাঙালির শ্রেষ্ঠ অর্জন। তবে এ স্বাধীনতা একদিনে অর্জিত হয়নি। মহান ভাষা আন্দোলন থেকে স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ অর্জনের এই দীর্ঘ বন্ধুর পথে বঙ্গবন্ধুর অপরিসীম সাহস, সীমাহীন ত্যাগ-তীতিক্ষা, বলিষ্ঠ নেতৃত্ব এবং সঠিক দিকনির্দেশনা জাতিকে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌছেদেয়। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ স্বাধীনতার মহান স্থপতি বাঙালি জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীণ পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর রক্তচক্ষু উপেক্ষা করে অসীম সাহসিকতার সাথে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে লাখো জনতার উদ্দেশ্যে বজ্রকণ্ঠে যে ঐতিহাসিক ভাষণ প্রদান করেন তা ছিল মূলত বাঙালি জাতির মুক্তির সনদ।বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ভাষণ একটি জনগোষ্ঠীর মুক্তির কালজয়ী এক মহাকাব্য। এ ভাষণে তাঁর তেজস্বিতা ও সম্মোহনী ক্ষমতা প্রকাশ পেয়েছে। এ ভাষণ পাল্টে দিয়েছে একটি দেশের মানচিত্র, জাতীয় পতাকা ও জাতীয় সংগীত। এ ভাষণ মানুষকে স্বাধীনতাকামী করে তোলে। এভাষণ ছিল বহুমাত্রিকতায় বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। শুধু বাঙালির জন্যই নয়, বিশ্বমানবতার জন্যও অবিস্মরণীয়, অনুকরণীয় এক মহামূল্যবান দলিল। ইউনেস্কোর সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তে এটিই স্বীকৃত হয়েছে। গণতন্ত্র, উচ্চ মানবিকতা, ত্যাগ ও দেশপ্রেমের উজ্জ্বল আদর্শ, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ন্যায়ের সংগ্রাম,জাতিভেদ-বৈষম্য ও জাতি-নিপীড়নের বিরুদ্ধে বিশ্বমানবতার মুক্তির সংগ্রামে যুগে যুগে এ ভাষণ অনুপ্রেরণা জোগাবে।বঙ্গবন্ধুর জীবন এবং কর্ম গ্রামের ‘মাথা গরম’ ছেলে থেকে বিশ্ববরেণ্য নেতার স্বীকৃতি অর্জন, ৭ মার্চের ভাষণ এবং বাংলাদেশের সংগ্রামে নেতৃত্ব যেকোনো বিচারে অসাধারণ ঘটনা। কিন্তু তাঁর জীবন এবং কর্ম ও ভাষণটি বিচার করলে এ যে রূপকথাকেও হার মানায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের ভাষণের পেছনের মানুষটির গড়ে-ওঠা গল্পকেও হার মানায়। তাঁর এই ভাষণের যুগান্তকারী ভূমিকা কেবল অবিশ্বাস্য নয়; চমকপ্রদও বটে। তাই এই মানুষ ও তাঁর ভাষণ—এ দুই-ই ইতিহাসে কালজয়ী দৃষ্টান্ত হয়ে আছে। আর যা গল্প ও বাস্তবকে হার মানায়, তা হয়ে ওঠে কিংবদন্তি বা কিংবদন্তিতুল্য।বঙ্গবন্ধু তাঁর ভাষণের মাধ্যমে তিনি একটি জাতিকে সশস্ত্র বাঙালি জাতিতে রূপান্তর করেছিলেন।আমি ক্ষুদ্র কলাম লেখক কবির নেওয়াজ রাজ মনে করি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্বাধীনতার বীজ তিনিই বপন করেছিলেন। এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম। ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোলো। তোমাদের যা কিছু আছে, তাই নিয়ে শত্রুর মোকাবিলায় প্রস্তুত থাকো।বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামে ৭ই মার্চ এক অবিস্মরণীয় দিন। আমরা যারা স্বাধীনতার পরে জন্মগ্রহণ করেছি এ ভাষণটি সরাসরি দেখতে বা শুনতে পারিনি। কিন্তু আজও যখন এই ভাষণ শুনি,আমি ও আমরা উজ্জীবিত হই। নব উদ্যমে এগিয়ে চলার প্রেরণা পাই।
লেখকঃ কবির নেওয়াজ রাজ
সম্পাদক,মানুষের কল্যাণে প্রতিদিন।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।