ফিরআউন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ ছিল মুসা (আ.)-এর দুনিয়াতে আগমণকে প্রতিহত করতে। এ উদ্দেশ্যে সে ‘বনী ইসরাঈল’-এর অসংখ্য ছেলে সন্তানকে হত্যা করেছিল, যার বর্ণনা পবিত্র কুরআনে রয়েছে। ঠিক তদ্রুপ, ইয়াযিদ ও তার সহযোগিরা নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশকে দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন করতে চেয়েছিল। ফিরআউনের কবল থেকে যেমনিভাবে আল্লাহ পাক মুসা (আ.) কে রক্ষা করেছিলেন, তেমনিভাবে হযরত যয়নুল আবিদীন (রা.) কে জীবিত রেখে আল্লাহ পাক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশকে দুনিয়াতে রক্ষা করেছিলেন। যদি ইয়াযিদ তার দুরভিসন্ধিতে সফল হয়ে যেত তবে ইমাম মাহদির (আ.) দুনিয়াতে আগমন সম্ভব হত না; কারণ ইমাম মাহদি (আ.) দুনিয়াতে আগমণ করবেন হযরত ফাতিমাতুয যুহরা (রা.)-এর সন্তানদের মধ্য থেকে। নিম্ন বর্ণিত হাদীস থেকে তা স্পষ্ট প্রমানিত হয়-
عَنْ أُمِّ سَلَمَةَ قَالَتْ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ - صلى الله عليه وسلم- يَقُولُ الْمَهْدِىُّ مِنْ عِتْرَتِى مِنْ وَلَدِ فَاطِمَةَ ( أبو داود)
অনুবাদ: হযরত উম্মে সালামা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি, মাহদি আমার পরিবার থেকে ফাতিমা (রা.)-এর সন্তানদের মধ্য থেকে আসবেন। (আবু দাউদ)
উল্লেখ্য, কাফিরদের একান্ত ইচ্ছা ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বংশ দুনিয়া থেকে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাক।রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর পুত্র হযরত ইবরাহীম এর ইন্তিকালের পর তারা রাসূলুল্লাহ (সা.) কে নি:সন্তান আখ্যা দিয়ে আত্ম প্রসাদ লাভ করত। আল্লাহ পাক তাদের এ অপপ্রচারকে নাকচ করে দিয়ে সূরা কাওসার অবতীর্ণ করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর শত্রুদের নি:সন্তান হওয়ার ঘোষণা প্রদান করেন।
ইমাম হুসাইন (রা.) সহ আহলে বাইতের সদস্যগণকে যারা কতল করেছে এবং যে এর নির্দেশ দিয়েছে এবং যারা এ কাজের প্রতি সন্তুষ্ট তাদের মধ্যে ছিল আবু জেহেলের প্রতি ভালোবাসা। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ইয়াযিদের সম্মুখে যখন হুসাইন (রা.) এর মস্তক রাখা হয়েছিল সে বলেছিল- আজ আমি বদরের প্রতিশোধ নিয়েছি। (দেখুন তাফসীরে মাযহারী, সূরা ইব্রাহীমের ২৮ নং আয়াতের তাফসীর, আল বেদায়া ওয়ান নেহায়া, খণ্ড: ৮, পৃষ্ঠা: ১৮২)
পক্ষান্তরে ইমাম হুসাইন (রা.) ও তাঁর সঙ্গী-সাথীদের মধ্যে ছিল রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর বিরত্বের প্রতিফলন। তিনি এ বিরত্ব প্রদর্শন করেছিলেন কারবালার মাঠে। প্রমাণ স্বরূপ ইবনে হাজার আসকালানী (র.)-এর ‘আত-তাহযীবুত তাহযীব’ কিতাব থেকে একটি হাদীস নিম্নে উল্লেখ করা হল-
وقال إبراهيم بن علي الرافعي عن أبيه عن جدته زينب بنت أبي رافع أتت فاطمة بابنيها إلى رسول الله صلى الله عليه وسلم في شكواه الذي توفي فيه فقالت لرسول الله هذان ابناك فورثهما شيئا قال أما حسن فإن له هيبتي وسؤددي وأما حسين فإن له جرأتي وجودي.
অনুবাদ : যয়নব বিনতে আবু রাফে’ হতে বর্ণিত, হযরত ফাতিমা (রা.) তাঁর দুই ছেলে (হযরত হাসান ও হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহুমা)কে নিয়ে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর কাছে তাঁর ইন্তিকালের আগের অসুস্থতার সময় আসলেন এবং বললেন, এ দু’জন হচ্ছে আপনার সন্তান। এদেরকে উত্তরাধিকার হিসেবে কোন কিছু দিন। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জবাবে বললেন হাসান এর জন্য রয়েছে আমার মত (অন্যের অন্তরে) ভীতি সঞ্চারকারী গুণ আর হুসাইন এর আছে আমার বিরত্ব ও দানশীলতা। (আত-তাহযীবুত তাহযীব)
উল্লেখ্য, ইমাম বুখারী (র.) সহ দুনিয়ার সকল মুহাদ্দিস ও আসমায়ে রিজাল গ্রন্থকারগণ সাহাবায়ে কিরামের ফযিলত ও জীবনী অধ্যায়ে হযরত হাসান (রা.) ও হুসাইন (রা.) এর নাম উল্লেখ করেছেন।
[লেখকের 'আহলে বাইআত-ই হচ্ছেন তরিকতপন্থীদের শাইখুশ শুয়ুখ' গ্রন্থ থেকে নেয়া]
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com