সকাল হলেই কর্মযজ্ঞ শুরু হয় সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরে। পাঁচ হাজার শ্রমিক ব্যস্ত হয়ে পড়েন আমদানি-রপ্তানির বিভিন্ন কার্যক্রমে। তবে পদ্ম সেতু উদ্বোধনের পর বন্দরের ব্যবসা-বাণিজ্যের আমূল পরিবর্তন আসবে বলছেন বন্দর কর্তৃপক্ষ ও ব্যবসায়ীরা।
তারা বলছেন, ভারত থেকে পণ্য আমদানির পর রাজধানীতে পৌঁছে যাবে ৫-৬ ঘণ্টায়। এতে কমবে সময়। পদ্মা সেতুতে পাল্টে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্যের অতীত প্রেক্ষাপট। ভোমরা বন্দরে বাড়বে আমদানি-রপ্তানি। এমনকি ভোমরা বন্দরকে ঘিরে মাস্টার প্লান হাতে নিয়েছে সরকার।
জানা গেছে, দেশের তৃতীয় বৃহত্তম স্থলবন্দর হিসেবে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা লাভ করে ভোমরা স্থলবন্দর। প্রতিষ্ঠার ২৬ বছরের বিভিন্ন সময়ে অবকাঠামোগত নানা উন্নয়ন হয়েছে বন্দরটিতে। বর্তমানে বন্দরটি দিয়ে প্রতিদিন চার শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে প্রবেশ করছে বাংলাদেশে। আমদানি ও রপ্তানি কাজে জড়িত রয়েছেন পাঁচ শতাধিক ব্যবসায়ী। ভোমরা বন্দরে প্রতিদিন রাজস্ব আদায় হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা। এই রাজস্ব আদায় বছর শেষে গিয়ে দাঁড়ায় ১১০০ কোটি টাকায়।
ভোমরা বন্দরের আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সানমুন ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী জালালউদ্দীন মোল্লা জানান, পণ্য আমদানির পর এখান থেকে ঢাকা পৌঁছাতে সময় লাগে ১০-১২ ঘণ্টা। ফেরিতে কখনো কখনো আরও বেশি সময় লাগে। কাঁচামাল পচে যায়। এতে নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় ব্যবসায়ীরা। আবার ঠিক সময়ে পৌঁছাতে না পেরে পণ্যের উপযুক্ত দামও পাওয়া সম্ভব হতো না। তবে পদ্মা সেতু উদ্বোধনের পর সেই দুর্ভোগ লাঘব হবে।
আমদানিকারক প্রতিষ্ঠান সানমুন ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আশরাফুর রহমান বলেন, প্রতিদিন বন্দরটি দিয়ে প্রায় ৪০০ পণ্যবাহী ট্রাক ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করে। এরপর এসব পণ্য রাজধানী ঢাকা, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে পৌঁছে যায়। আমাদের সব থেকে বড় সমস্যা ছিল যাতায়াত সমস্যা। ইতোপূর্বে ব্যবসায়ীদের সুবিধার জন্য শহরের বাঁকাল এলাকা থেকে বিনেরপোতা পর্যন্ত ১৮৩ কোটি টাকা ব্যয়ে ১৩ কিমি শহর বাইপাস সড়ক নির্মাণ করেছে সরকার। এবার পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে ফেরি পারাপারের দীর্ঘ দিনের দুর্ভোগ দূর হবে।
ভোমরা স্থলবন্দরের সিএন্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম খান বলেন, ভৌগোলিক কারণে দেশের অন্যান্য বন্দরের তুলনায় ভোমরা স্থল বন্দরের গুরুত্ব অনেক বেশি। এর প্রধান কারণ হচ্ছে, কলকাতা থেকে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব সব থেকে কম। এ কারণে এই বন্দর দিয়ে আমদানি করলে ব্যবসায়ীদের পরিবহন খরচ কম পড়ে, ব্যবসায়ীরা নানা সুবিধা পায়। এ বন্দর দিয়ে প্রতিদিন চারশোর বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করে। প্রতিদিন তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হচ্ছে। বছরে এই রাজস্ব গিয়ে দাঁড়ায় ১১০০ কোটি টাকায়।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর মধ্য দিয়ে ব্যবসা-বাণিজ্যের অবাধ কার্যক্রম শুরু হবে। ব্যবসায়ীদের ভোগান্তি দূর হবে। ভোমরা বন্দরের কিছু উন্নয়ন কাজ বাকি রয়েছে। যেমন- এখন একটি কাস্টমস হাউস প্রয়োজন। সেটি হলে সকল পণ্য আমদানির সুযোগ সৃষ্টি হবে। এতে রাজস্ব আদায় দ্বিগুণ হবে। এছাড়া ভোমরা বন্দরে সিএন্ডএফ এজেন্ট, কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন, শ্রমিক মিলে ২০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান রয়েছে। পদ্ম সেতুর ফলে আরও নতুন নতুন কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
ভোমরা বন্দরের রাজস্ব কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার আমির আল মামুন জানান, প্রতিদিন বন্দরটি দিয়ে চারশোর বেশি পণ্যবাহী ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। বাংলাদেশ থেকে ভারতে যাচ্ছে ৫০-১০০ ট্রাক। রাজস্ব আদায় হচ্ছে তিন থেকে সাড়ে তিন কোটি টাকা।
ভোমরা স্থলবন্দরের উপ পরিচালক মনিরুল ইসলাম বলেন, কলকাতা থেকে বেনাপোল ও ভোমরা বন্দরের মধ্যে ভোমরা বন্দরের দূরত্ব কম হওয়ায় পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রমে বিশাল প্রভাব পড়বে। আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম অনেকাংশে বেড়ে যাবে। বর্তমানে ভোমরা বন্দরে ১৫ একর জমির ওপর কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে আরও ১০ একর জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। তাছাড়া বাংলাদেশ স্থল বন্দর কর্তৃপক্ষ থেকে একটি মাস্টার প্লানও হাতে নেওয়া হয়েছে।