নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
দায়িত্ব গ্রহণের পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও নিজ বিভাগের অচলাবস্থা ও বিভিন্ন সমস্যার কোন সমাধান করতে পারেননি বলে অভিযোগ উঠেছে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের চেয়ারম্যান ও নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল হক এর বিরুদ্ধে। এতে বিভাগের শিক্ষার্থীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে।
জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ২০২৪ সালের ১১ নভেম্বর অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি (বিএমবি) বিভাগের চেয়ারম্যান এর দায়িত্ব প্রদান করা হয় অধ্যাপক ড. রেজুয়ানুল হককে। কিন্তু দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে এই পর্যন্ত বিভাগের কোন ক্লাস নেওয়া দূরে থাক, নিজ বিভাগে আসা-যাওয়াও কদাচিৎ করেন বলে জানিয়েছে বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী। এছাড়া কোন কাগজপত্রে সাক্ষর নিতেও দীর্ঘ সময় ধরে উপ-উপাচার্যের অফিসে করতে হয় অপেক্ষা, মাঝেমধ্যে তা পেরিয়ে যায় দিন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বিভাগে বর্তমান সাতটি ব্যাচে প্রায় দুই শতাধিক শিক্ষার্থীর বিপরীতে শিক্ষক রয়েছেন আটজন। এর মধ্যে শিক্ষা ছুটিতে রয়েছেন তিনজন শিক্ষক। বাকি পাঁচজন শিক্ষক থাকলেও কার্যত ক্লাস নেন চারজন শিক্ষক। এতে শিক্ষার্থীরা বঞ্চিত হচ্ছে তাদের মানসম্মত শিক্ষা থেকে। এছাড়া বিভাগের ক্লাসরুম রয়েছে মাত্র দুইটি। দুইটি ব্যাচের ক্লাস চলাকালীন সময় অন্য ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বাইরে অপেক্ষা করতে হয়। বর্তমানে খুব ছোট একটি ল্যাব রুম থাকলেও সেখানের অধিকাংশ কেমিক্যাল মেয়াদোত্তীর্ণ। যা শিক্ষার্থীদের ব্যবহারিক জ্ঞানে সৃষ্টি করছে প্রতিবন্ধকতা। এসব সমস্যার কারণে বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের ফিল্ড ট্যুরও অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে।
এদিকে সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪২ জন শিক্ষক নিয়োগের জন্য নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয়। যেখানে বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের জন্য মাত্র একজন প্রভাষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। যা বিভাগের শিক্ষার্থীদের মনের আশা পূরণ করেনি বলে অভিযোগ। শিক্ষার্থীরা বলছেন, উপ-উপাচার্য চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার এসব সমস্যার সমাধান নিয়ে স্বপ্ন দেখালে কার্যত তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। অথচ আইন বিভাগসহ অন্যান্য নবীন বিভাগে পর্যাপ্ত ক্লাসরুম ও শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হলেও বিএমবি বিভাগের হয়নি কোন অগ্রগতি।
বিভাগের একাধিক শিক্ষার্থী জানিয়েছেন, আগের চেয়ে কিছু বিষয়ে স্বচ্ছতা ও আন্তরিকতা আসলেও মূল সমস্যা এখনো রয়ে গিয়েছে। ক্লাসরুম ও শিক্ষকের সংকট রয়ে গিয়েছে। ইতিমধ্যে ক্লাসে পর্যাপ্ত মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টের ব্যবস্থা করা হয়েছে৷ নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, “আমাদের বিভাগে আগে যেসব বিষয়ে সংকট ছিলো এখনো তা রয়ে গিয়েছে। এক বা দুইজন শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলো স্যারেরা। কিন্তু পরে শুনেছি একজন প্রভাষক নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। বলতে গেলে আহামরি কোন অগ্রগতির পদক্ষেপ বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নেয়নি।”
আরেক শিক্ষার্থী জানায়, “উপ-উপাচার্য স্যার মাঝেমাঝে বিভাগে আসেন তবে এই পর্যন্ত কোন ক্লাস নেননি তিনি। যার কারণে আগের চারজন শিক্ষকই রয়েছেন শুধু ক্লাস নিতে। আর শিক্ষকই যদি না থাকে ক্লাসরুম দিয়ে কি হবে! গুরুত্বপূর্ণ একটি বিভাগ হওয়া স্বত্ত্বেও প্রশাসন বারবার আমাদের বঞ্চিত করেছেন। যার প্রমাণ সম্প্রতি প্রকাশিত মাত্র একজন শিক্ষক নিয়োগ।”
শিক্ষক নিয়োগের বিষয়ে জানতে চাইলে বিএমবি বিভাগের প্রধান ও বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য বলেন,
আমাদের শিক্ষক নিয়োগের সরকারি অনুমতি নেই। তাই ইউজিসি আমাদেরকে শিক্ষক দিচ্ছিল না তখন আমরা অন্য একটি পদের বিপরীতে একজন শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করেছি। আমাকে প্রশাসনিক কাজে বেশির ভাগ সময়েই ব্যস্ত থাকতে হয়, ফলে বিভাগে সময় দিতে পারিনা। তাই শিক্ষক নিয়োগ হলেই তখন আমরা নতুন করে চেয়ারম্যান নিয়োগ দিবো। শিক্ষক নিয়োগের জন্য আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও বিভাগের কারিকুলাম নিয়ে আমরা কাজ করতেছি।”
ল্যাব ও ক্লাসরুমের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, “একাডেমিক ভবন-০৩ এ ল্যাব ও ক্লাসরুম স্থাপনের জন্যে আমরা কয়েকটি রুম তৈরি করতেছি। পাশাপাশি ল্যাব তৈরির ফান্ডিং কালেকশনের জন্যেও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।"
নিউজ রুমঃ News.dainikparibarton@gmail.com অথবা News@dainikparibarton.com
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com