সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৫:৪৯ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা নীলফামারী প্রতিনিধি):-
নীলফামারী ডিমলা উপজেলার ঝুনাগাছ চাপানি ইউনিয়নের প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ছাতুনামা এলাকায় এখন বাণিজ্যিক ভাবে তৈরি হচ্ছে জৈব সার। কৃষকেরা জমিতে জৈব সার ব্যবহার করায় একদিকে মাটির গুণাগুনও বাড়ছে অন্যদিকে চাষিরা পাচ্ছেন ভালো ফলনও। ভুট্টা, আলু, বাদাম, গম, সবজি, ধানসহ বিভিন্ন ফসলে কৃষকরা জৈব সার ব্যবহার করছেন। চাহিদা থাকায় দেশের বিভিন্ন স্থানেও যাচ্ছে এ কোম্পানির জৈব সার ।
জানা যায়, প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড কোম্পানির তৈরি করা জৈব সার নীলফামারী জেলায় বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। আধুনিক পদ্ধতি ও পরিবেশ বান্ধব উপায়ে দশটি উপাদানে তৈরী হচ্ছে এই জৈব সার। উপাদানগুলো গোবর, পোল্ট্রি বিষ্ঠা, কাঠের গুড়া, পেশমার্ড, তামাক ডাস্ট, ছাই, কোকোডাস্ট, সয়াডাস্ট, ট্রাইকোডার্মা,মোলাসেস প্রতিটি উপাদান বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নির্দিষ্ট পরিমাণ মিশিয়ে তৈরি হয় উৎকৃষ্ট মানের প্যারাগন জৈব সার। এই জৈব সার প্রস্তুত ও প্যাকেট জাত করতে সময় প্রয়োজন ৪৫ দিন। এছাড়া পরিবেশের সুরক্ষা এবং গন্ধ দূরীকরণের জন্য কারখানা ও আশপাশ এলাকায় নিয়মিত ভাবে ফিনাইল, স্যাভলন ও ব্লিচিং পাউডার স্প্রে করা হয়।
সংশ্লিষ্টরা জানান, যে কোনো জাতের ধান উৎপাদনের জন্য প্রতি শতকে এক কেজি, রবিশস্য ও সবজির জন্য শতকে দুই থেকে পাঁচ কেজি জৈব সার প্রয়োজন হলেও একই জমিতে রাসায়নিক সার ব্যবহার করতে হয় কয়েকগুণ বেশী। প্রথম অবস্থায় এসব জমিতে জৈব সারের পাশাপাশি রাসায়নিক সার সামান্য প্রয়োজন হলেও ৪ থেকে ৫ বছর পর রাসায়নিক সারের আর প্রয়োজন পারবেনা। তখন জমিতে এই জৈব সার ব্যবহার করলেই চলবে। কৃষকের এতে খরচও কমে এবং জমির উর্বরা শক্তিও বাড়ে। এছাড়াও প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড’র “প্যারাগন জৈব সার” স্থানীয় কৃষকদের দৈনন্দিন কষ্ট নিরসণে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
উপজেলার খালিশা চাপানি ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামের কৃষক শামীম আহমেদ জানান, এ বছর তিস্তা নদী বেষ্টিত চরাঞ্চলে তার ৩০ শতক জমিতে শুধু রাসায়নিক সার এবং ৩০ শতক জমিতে ”প্যারাগন জৈব সার” ও সামান্য রাসায়নিক সার ব্যবহার করে ভুট্টা উৎপাদন করেেছন। যে জমিতে প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড’র জৈব সার ব্যবহার করা হয়েছিলো সেই জমির ফসল অনেক ভালো হয়েছে। খরচও রাসায়নিক সারের জমির অর্ধেক হয়েছে। একই গ্রামের আরেক কৃষক পরিমল চন্দ্র রায় জানান, এই মৌসুমে ১ একর জমিতে রাসায়নিক সারের পাশাপাশি প্যারাগন জৈব সার ব্যবহার করে ভালো ফলন পেয়েছি। আমাকে দেখে এ গ্রামের আরো অনেক কৃষক জৈব সার ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড জৈব সার তৈরির কারখানাটি প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের ছাতুনামা এলাকায় আড়াই একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত। কারখানায় তৈরি হয়েছে স্থানীয় যুবকদের কর্মসংস্থান। যেখানে কাজ করেন কয়েক শতাধিক বেকার যুবক। জৈব সার কারখানাটির পুরোপুরি উৎপাদন শুরু হলে নতুন কর্মসংস্থান হবে আরো অনেক বেকার যুবকের। প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড কোম্পানির দৈনিক উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১০ টন। এখন প্রতিদিন ৩ টন করে সার উৎপাদন হচ্ছে। সার তৈরির এমন উদ্যোগে আশার সঞ্চার হয়েছে স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে।
এ জেলায় বৃহৎ আকারে প্রথম কোন জৈব সার উৎপাদন কেন্দ্র গড়ে ওঠায় খুশি স্থানীয় বাসিন্দারাও। তারা মনে করেন, প্রয়োজনের সময় সার নিয়ে যে সংকট দেখা যেত, সেটা আর থাকবে না। এখন কিছু মানুষের কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে। চাহিদা অনুসারে পরিধি বাড়ালে আরও অনেক বেকার যুবকের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে।
প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড কোম্পানির অর্গানিক ফার্টিলাইজার অফিসার সাব্বির হোসাইন বলেন, জৈব সার ব্যবহার উপযোগী কিনা পরীক্ষায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরে নমুনা পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়া গেলে পুরোদমে সার বাজারজাত করা হবে।
তিনি আরো বলেন, পরীক্ষামূলক ভাবে স্থানীয় কৃষকেরা আমাদের কোম্পানির জৈব সার নিয়ে প্রয়োগ করছেন ফসলি জমিতে। আশানুরুপ ফলাফলও পাচ্ছেন তারা। সরকার সুদৃষ্টি দিলে প্রকল্পটি কৃষক পর্যায়ে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে বলেও জানান তিনি।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) সেকেন্দার আলী জানান, কৃষক পর্যায়ে জৈব সারের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। প্যারাগন এগ্রো লিমিটেড কোম্পানির উৎপাদিত জৈব সার নিয়ে অনেক কৃষক উপকৃত হয়েছে বলেও জেনেছেন তারা। সরকারি অনুমোদন পেলে কৃষি উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে পারবে বলে মনে করেন তিনি।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।