লালমনিরহাট প্রতিনিধি।।
উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে তিস্তা নদীর পানি বেড়ে যাওয়ায় লালমনিরহাটের চরাঞ্চলের মানুুষজন পানিবন্দি হওয়ার একদিন পরেই কমতে শুরু করেছে পানি। পানি কমে যাওয়ায় তিস্তা নদীতে নতুুুন করে দেখা দিয়েছে ভাঙ্গন। সেই সাথে বেড়েছে সেখানকার লোকজনের ভোগান্তি। একদিকে করোনার ভয়াল থাবা অন্যদিকে নদী ভাঙ্গনের ভয় কাজ চরাঞ্চলের মানুষদের মধ্যে।
বর্তমানে তিস্তার পানি বিপদসীমার নীচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন। এদিকে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ৪৪ জলকপাট (গেট) এখনও খুলে রাখা হয়েছে।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হঠাৎ করে তিস্তার পানি বিপদসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হওয়ায় জেলার ৫টি উপজেলার প্রায় ৫ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পরে। পানিবন্দি হওয়ার একদিন পরই বাড়ী থেকে নামতে শুরু করে পানি। পানিবন্দি পরিবারগুলো বাড়ী থেকে পানি চলে যাওয়ার সাথে সাথে পলি জমে কদমাক্তে পরিণত হয়েছে। ফলে ভোগান্তি বেড়েই চলেছে। এদিকে পানি কমে যাওয়ার তিস্তা নদীর গতিপথ পরিবর্তন হয়ে কিছু জায়গায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। আর ভাঙ্গন আতঙ্কে রয়েছে নদীপাড়ের লোকজন।
শনিবার (১০ জুলাই) দুপুরে লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার মহিষখোচা ইউনিয়নের বন্যাকবলিত আরাজিছালাপাক, চৌরাহা, কুটিরপাড় ও দক্ষিনবালপাড়া গ্রাম ঘুরে দেখাগেছে, বাড়ী থেকে পানি বের হলেও পলি পড়ে যাওয়ায় ভোগান্তি বেড়ছে তাদের। এদিকে চৌরাহা এলাকায় আবারও ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন ঠেকাতে পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদার জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে নদীতে ফেলতে শুরু করেছেন। ইতিমধ্যে গ্রামটির অধিকাংশ বাড়ী নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। দ্রুত গ্রামটি রক্ষার দাবী জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারগুলো।
চৌরাহা গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল গাফফার জানান, গত কয়েক দিনে চোখের সামনে ২৫টি পরিবারের বাড়ীঘর অন্যত্র সরিয়ে নিয়েছেন। হুমকির মুখে রয়েছে ওয়াবদা বাঁধটিও।
এদিকে মহিষখোচা ইউনিয়নের কুটিরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখাগেছে, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত প্রায় এক কিলোমিটার বালুর বাঁধটি তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। নাম প্রকাশ না করার স্বার্থে একাধিক এলাকাবাসী দাবী করেন "অপরিকল্পিত বালুর বাঁধটির নাম দিয়েছেন তারা "রাজনৈতিক বাঁধ"। কারণ হিসেবে তারা উল্লেখ করেন, বাঁধের কথা বলে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকা বরাদ্দ নিয়ে বেশীরভাগ বরাদ্দ আত্মসাত করা হয়। কাজের কাজ কিছুই হয় না। তাই তারা এ বাঁধটিকে রাজনৈতিক বাঁধ হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন।
ইউপি সদস্য মতিয়ার রহমান মতি বলেন, আকস্মিক বন্যায় চরাঞ্চলে ৩টি ওয়ার্ডের প্রায় ৩ শতাধিক পরিবার পানিবন্দি হয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তারা মূল ভুখন্ড থেকে একটি বিচ্ছিন্ন দ্বীপে বসবাস করায় কেউ তাদের খোঁজখবর রাখেন না।
মহিষখোচা ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মোসাদ্দেক হোসেন চৌধুরী বলেন, পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে চৌরাহা এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ডের লোকজন সেখানে জিও ব্যাগে বালু ভরাট করে ভাঙ্গন রোধের চেষ্টা চালাচ্ছে।
গোকুন্ডা ইউপি চেয়ারম্যান গোলাম মোস্তফা স্বপন বলেন, ‘তিস্তার পানি কমে যাওয়ার সাথে সাথে কিছু এলাকায় ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। ভাঙ্গন রোধ কাজও চলছে বলে তিনি দাবী করেন।
আদিতমারী উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) মুহাম্মদ মনসুর উদ্দিন বলেন, সরকারীভাবে পানিবন্দি পরিবারগুলো সার্বক্ষণিক খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এসব পরিবারের জন্য সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নে ৩ মেঃটন চাল মজুদ রয়েছে।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোঃ আবু জাফর বলেন, বন্যার জন্য সব ধরনের প্রস্তুতি সরকারের রয়েছে। তবে করোনার কারনে কাজে একটু সমস্যা হচ্ছে। সামাজিক দুরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে ত্রান বিতরনের জন্য নির্দেশনা দেয়া আছে এবং সেভাবেই কাজ হচ্ছে।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com