খোন্দকার কাওছার হোসেন : কারাবন্দি দলীয় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য ৩ পথই খোলা রাখছে বিএনপি। দলটির দৃঢ় অবস্থান যে কোনো মূল্যে তাদের নেত্রীর মুক্তি। এজন্য যে পথেই হাঁটতে হয়, তার জন্য প্রস্তুত দলটির নেতারা। তাদের কাছে নেত্রীর জীবন আগে, এরপর রাজনীতি। এ কারণে আপসহীন অবস্থান থেকে সরে এসে সরকারের কাছে নিঃশর্ত মুক্তির আহ্বান জানিয়েছেন দলটির মহাসচিব।
বিএনপি নেতারা জানান, খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আন্দোলন, আলোচনা ও আইনি প্রক্রিয়া- এই ৩ পথ উন্মুক্ত রাখছেন তারা। তাদের মতে, খালেদা জিয়ার শারীরিক অবস্থা বর্তমানে যে অবস্থায় রয়েছে, তাতে উন্নত চিকিৎসা না হলে তার জীবন বিপন্ন হতে পারে। এতে দল বড় রকমের ঝুঁকির মধ্যে পড়বে। এর বাইরে খালেদা জিয়া ইতোমধ্যে ২ বছর কারাভোগ করেছেন। এই বয়সে আরো কারাভোগ তার জন্য বিপদজনক হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় খালেদা জিয়ার সঙ্গে আলোচনা করেই তার মুক্তির জন্য স্বোচ্চার হয়ে উঠেছে দলটি।
বিএনপি নেতারা মনে করেন, খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি নিয়ে তার পরিবার সরকারের সঙ্গে যোগাযোগ অব্যাহত রাখবে। দল আন্দোলনের মাধ্যমে একদিকে সরকারকে চাপে রাখবে; অন্যদিকে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তার জামিনের চেষ্টা অব্যাহত রাখবে। যে প্রক্রিয়ায়ই হোক তার কারাবাসের আপাতত অবসান চায় বিএনপি।
ইতোমধ্যে পরিবারের পক্ষ থেকে খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম ও ভাই শামীম ইস্কান্দার সরকারের সঙ্গে আলোচনা অনেক দূর এগিয়ে নিয়েছেন। তারা প্যারোলে হলেও খালেদা জিয়ার কারামুক্তি চান। উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে লন্ডন পাঠাতে চান। সেখানে অবশ্য খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান রয়েছেন। তিনি মায়ের চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনীয় প্রস্তুতিও নিয়ে রেখেছেন বলে খবর রয়েছে। তারেকের স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমান সেখানকার বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের সঙ্গে পরামর্শ সেরে রেখেছেন বলে জানা গেছে।
এই প্রক্রিয়ায় সর্বশেষ যুক্ত হয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে ফোন করে প্রধানমন্ত্রীর সহানুভূতি চেয়েছেন। ওবায়দুল কাদেরও বিষয়টি গতকাল শনিবার রাতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বোর্ডের সভার পর প্রধানমন্ত্রীকে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করেছেন। এমন পরিস্থিতিতে বিএনপি অপেক্ষা করছে প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের। প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে সবুজ সংকেত পেলে কী প্রক্রিয়ায় খালেদার কারামুক্তি সম্ভব তার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরিবারের ছদ্মাবরণে প্রস্তুত করবে বিএনপি। সেটা প্যারোল হোক বা অন্যকোনো প্রশাসনিক সিদ্ধান্ত হোক। খালেদা জিয়া মুক্ত হলে বিএনপিকে আপাতত রাজপথের আন্দোলনে দেখা যাবে না।
যদি তা না হয় তবে চলতি সপ্তাহেই আরো একবার হাইকোর্টে জামিন আবেদন করবে বিএনপি। এজন্য প্রয়োজনীয় আইনি কাগজপত্র প্রস্তুত করছেন দলটির সিনিয়র আইনজীবী নেতারা। গত শুক্রবার রাতে স্থায়ী কমিটি ও আইনজীবীদের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক হয়। এতে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য আরো একবার জামিন আবেদন করার সিদ্ধান্ত হয়। জামিন আবেদন প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দীন সরকার বলেন, দেশে যে আইনের শাসন রয়েছে তা প্রমাণ করার জন্য খালেদা জিয়াকে জামিন দেয়ার আহ্বান জানাব আদালতে।
আলোচনা ও আইনি প্রক্রিয়ায় খালেদা জিয়ার মুক্তি না মিললে বিএনপির সামনে রাজপথ ছাড়া আর কোনো পথ খোলা থাকবে না। এজন্য বিএনপি ধীরে ধীরে রাজপথমুখী হচ্ছে। এজন্য এখন থেকেই পুলিশের অনুমতি না নিয়েই আন্দোলনের পথে হাঁটতে চাইছে দলটি। এর মাধ্যমে তারা সরকারকে বার্তা দিতে চায়, খালেদার মুক্তির বিষয়ে সরকার একটা সমঝোতায় না এলে বিএনপিও আর ঘরে বসে থাকবে না। তাতে যত ধরপাকর, অত্যাচার নির্যাতনই করা হোক। গতকাল শনিবার তারই অনুশীলন করেছে বিএনপি। পুলিশের অনুমতি না নিয়েই রাজধানীসহ সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দেয় দলটি। রাজধানীতে পুলিশ বিক্ষোভে বাধা দিলেও কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করা থেকে বিএনপিকে বিরত করতে পারেনি। দলীয় কার্যালয়ের সামনে ঠিকই সমাবেশ করে পুলিশকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছে দলটি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, সরকার মনে করেছে এইভাবে নির্যাতন করে, নিপীড়ন করে, গ্রেপ্তার করে, গুম করে জনগণের প্রাণের দাবিকে তারা দমিয়ে রাখবে। কিন্তু ইতিহাস প্রমাণ করে এভাবে দমননীতি নিয়ে, নির্যাতন-নিপীড়ন করে জনগণের ন্যায্য দাবি কখনো দমন করা যায় না। তিনি বলেন, খালেদা জিয়া অত্যন্ত অসুস্থ, আমরা বারবার তার মুক্তির দাবি করেছি, জামিন চেয়েছি এবং মুক্তির মধ্য দিয়ে তার চিকিৎসার দাবি জানিয়েছি। আমরা তাদের কাছ থেকে কোনো রকমের সাড়া পাইনি। আশা করব, মানবিক কারণে খালেদা জিয়াকে অবিলম্বে মুক্তি দেবেন।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, দেশনেত্রীকে ২ বছর ৭ দিন কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে। আমরা বলতে চাই, বিএনপি নেত্রী কারাগারে নয়; আজকে সারা বাংলাদেশকে কারাগার করা হয়েছে। আজকে গণতন্ত্রকে হত্যা করেছে, অর্থনীতিকে ধ্বংস করা হয়েছে, দেশের মানুষ নিপীড়িত-নির্যাতিত। খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে হবে। আজকে আমরা কর্মীদের যে সাহস দেখেছি, এভাবে যদি নেতাকর্মীরা রাস্তায় থাকেন অচিরেই নেত্রীকে মুক্ত করতে পারব।
স্থায়ী কমিটির অপর সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, আমাদের লাঠিপেঠা করুক প্রতিবাদ থামবে না। জেলখানায় ভরলেও প্রতিবাদ থামবে না। আমাদের গুম করুক প্রতিবাদ থামবে না, এই প্রতিবাদ চলতেই থাকবে। খালেদা জিয়ার মুক্তি জন্য যে কোনো প্রক্রিয়ায় বিএনপির কর্মী ও নেতারা সব ধরনের ভূমিকা পালন করবে। সারা বাংলাদেশে মুক্তির দাবিতে কর্মসূচি হচ্ছে। নেত্রীকে আমরা এবার মুক্ত করে ছাড়ব।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com