(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি):-
পাকা ধানে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ
নীলফামারী ডিমলা উপজেলার দশটি ইউনিয়নে উঠতি বোরো ধানের বিস্তীর্ণ এলাকায় ব্যাপক আকারে ব্লাস্ট রোগ ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে ব্যাপক ফসলহানির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে গোটা উপজেলায়। এছাড়া এরইমধ্যে কয়েক দফা শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ো বাতাসে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। ক্ষেতে যেটুকু ধান অবশিষ্ট রয়েছে মাত্র দুই/তিন দিন সময়ের মধ্যে শীষ বের হওয়া কাঁচা ধানগাছ হঠাৎ করে হলুদ বর্ণ ধারণ করে শুকিয়ে যাচ্ছে। কৃষি বিভাগ এটিকে ব্লাস্ট রোগ বলে চিহ্নিত করেছে। অসময়ে হঠাৎ এ রোগের আক্রমণে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। একদিকে ব্লাস্ট রোগের আক্রমণ, অন্যদিকে ঝড় শিলাবৃষ্টিতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি। এমন পরিস্থিতিতে লোকসানের আশঙ্কা এবং মাথার উপর থাকা বিভিন্ন এনজিও প্রতিষ্ঠানের ঋণের বোঝা নিয়ে দুশ্চিন্তায় এ উপজেলার কৃষকেরা। অনেকে কান্না জড়িত কন্ঠে এই প্রতিবেদককে বলেন, আবাদ না হইলে, খামু কি? আর কেমনে কইরা, এনজিও'র ঋণের টাকা শোধ করুম, তা আল্লাই জানে। আমরা কেমনে কইরা সামনের দিন পারি দিমু!
সরেজমিনে গয়াবাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিণ গয়াবাড়ী (কাউয়া ধনিপাড়া) ও খালিশা চাপানী ইউনিয়নের ছোটখাতা গ্রামে দেখা গেছে, বেশ কিছু খেতের ধান শুকিয়ে হলুদ বর্ণ ধারণ করেছে। দূর থেকে ধান পেকে আছে মনে হলেও কাছে গিয়ে দেখা যায় ভিন্ন চিত্র। এ বিষয়ে কৃষি সম্প্রসারণ কয়েকজন কর্মকর্তা জানান, কোন পোকা নয়, ধান খেতগুলোতে ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে। চাষে নিরূৎসাহিত করার পরও যে কৃষকরা ব্রি-২৮, ব্রি-৮১ এবং কাটারিভোগ নামের অনুমোদিত জাতের ধান চাষ করেছেন ওই খেতগুলোতেই কেবল ব্লাস্ট রোগ আক্রমণ করেছে।
উপজেলা বিভিন্ন এলাকার চাষীরা অভিযোগ করে জানান, গত দুই সপ্তাহ ধরে টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের কলোনি পাড়া, নাউতারা ইউনিয়নের আকাশকুড়িসহ এ উপজেলার দশটি ইউনিয়নের প্রায় প্রতিটি গ্রামের বোরো খেতে পোকার আক্রমণে শীষ শুকিয়ে যাওয়া শুরু হয়। অসময়ে এই রোগের আক্রমণে ওই এলাকার কয়েক শতাধিক হেক্টর জমির ধান নষ্ট হয়ে গেছে। এর মধ্যে কৃষি বিভাগের কোন কর্মকর্তা বা কর্মীকে তারা পাশে না পাওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকেরা।
১৮ বিঘা জমির মধ্যে ১০ বিঘার ধানখেত সম্পূর্ণরূপে ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে দক্ষিণ গয়াবাড়ী (কাউয়া ধনিপাড়া) গ্রামের মৃত মজির উদ্দিন সরকারের ছেলে মো. মাহাবুবার রহমান (লাভলু) (৬০) তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, কৃষি বিষয়ে পরামর্শ বা সহযোগিতা দূরে থাক, এ এলাকার দায়িত্বপ্রাপ্ত উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা বা সংশ্লিষ্ট কাউকেই আমরা চিনি না। একই গ্রামের এজার উদ্দিন মাস্টারের সাত বিঘা, ফিলিপস সরকারের পাচ বিঘা, মন্জু মিয়া ও জমিলা বেগমের পাঁচ বিঘা করে জমির ধান কয়েক দিনের মধ্যেই শুকিয়ে গেছে। তারা অভিযোগ করে বলেন, কৃষি বিভাগের লোকজন তাদের কাছে আসেন না। তাই আমাদের বাজারের কীটনাশক ও সারের দোকানীদের পরামর্শ নিয়ে জমির পরিচর্যা করতে হয়। ফলে জমিতে কখন কোন ওষুধ দিতে হয় জানি না।
গয়াবাড়ী ইউনিয়নের সরকার পাড়া গ্রামের কৃষক তহিদুল ইসলাম বলেন, কৃষি বিভাগের সঠিক নজরদারি না থাকায় মেয়াদোত্তীর্ণ এ জাতগুলোর ধান চাষ থেকে চাষীরা ফিরে আসতে পারছেন না। পুরনো ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাবিহীন জাতের ধান চাষ করে বারবার ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন চাষীরা।
ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) মো. সেকেন্দার আলী জানান, কৃষকেরা যে অভিযোগ করেছে এটা সঠিক নয়। মাঠ পর্যায়ে আমি সহ আমার পুরো টিম ব্লাস্ট রোগ দমনে কৃষকদের করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে প্রতিনিয়ত। আপনারা যেটা বলছেন আসলে এটা ব্লাস্ট রোগ নয় বিএলবি রোগ। হাইব্রিড ধানক্ষেতে বিএলবি রোগের কারণ কালবৈশাখী ঝড়। গত কয়েকদিনে দফায় দফায় শিলাবৃষ্টি ও ঝড়ের কারণে ধানক্ষেতে বিএলবি রোগ ছড়িয়েছে। এ ক্ষেত্রে আক্রান্ত ক্ষেত বাঁচানোর কোনো ব্যবস্থা আছে বলে তাঁর জানা নেই। তবে সদ্য চাষ করা এসব হাইব্রিড ধান বীজ হিসেবে সংরক্ষণ না করতে তিনি কৃষকদের পরামর্শ দেন।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com