(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি)
নীলফামারী ডিমলা উপজেলায় আমন ধান পাকার শেষ মুহূর্তে খেতে বাদামি গাছ ফড়িংয়ের (কারেন্ট পোকা) উপদ্রব দেখা দিয়েছে। এতে ধানগাছ মরে যাচ্ছে। এ কারণে পুরোপুরি পাকার আগেই অনেক কৃষক আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তুলতে বাধ্য হচ্ছে।
কৃষকেরা জানান, খেতে কারেন্ট পোকার উপদ্রব দেখা দেওয়ায় গাছ পুড়ে যাওয়ার রং ধারণ করে মরে যাচ্ছে। এ কারণে অনেকে আধা পাকা ধান কাটতে শুরু করেছেন। অনেকে স্থানীয় বাজারের দোকানদারদের পরামর্শে ধানে কীটনাশক ছিটাচ্ছেন। অনেক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, নামিদামি কোম্পানির কীটনাশক ঔষধ ব্যবহার করেও কোন ফল পাওয়া যাচ্ছে না।
রবিবার সকালে উপজেলার ডিমলা সদর নাউতারা, ঝুনাগাছ চাপানী, গয়াবাড়ি, টেপাখরিবাড়ি, খালিশা চাপানি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, মাঠে মাঠে মৃদু হাওয়ায় দোল খাচ্ছে ভরা ধানখেত। শিষের ভারে নুইয়ে পড়েছে ধানগাছ। এসব খেতের কিছু কিছু অংশের ধানগাছ মরে গেছে কারেন্ট পোকার আক্রমণে।
গয়াবাড়ি ইউনিয়নের ৫নং ওয়ার্ডের কৃষক ফারুক হোসেন তিনি বলেন, এবার আমি সাত বিঘা জমিতে আমন ধান রোপন করেছি তন্মধ্যে আমার চার বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকা আক্রমণ করেছে। ঔষধ দিয়েও কাজ হচ্ছে না।
একই গ্রামের আব্দুর রহমান বলেন, দশ বিঘা জমিতে এবার আমনের আবাদ করেছি। এর মধ্যে দুই বিঘা জমিতে কারেন্ট পোকায় আক্রমণ করেছে। গতকাল কীটনাশক দিয়েছি এখন কী হবে জানি না! তিনি আরও বলেন, শুরু থেকে ভালোভাবে আবাদ হলো। এখন ধান পাকার সময় প্রায় ১০/১৫ দিন ধরে এলাকায় কারেন্ট পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে। টেপাখরিবাড়ি ইউনিয়নের কলোনি পাড়া গ্রামের তোরাব আলী বলেন, চার বিঘা জমিতে এবার আমন ধানের আবাদ করেছি। দুই বিঘায় ১১ জাতের এবং দুই বিঘায় মামুন স্বর্ণ জাতের ধান লাগিয়েছি। মামুন স্বর্ণ ধান কাটার অপেক্ষায়। বাকি দুই বিঘায় কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে।
একই ইউনিয়নের কলোনি পাড়া গ্রামের জহুরুল হক বলেন, আমি এ বছর আট বিঘা জমিতে আমন ধানের আবাদ করেছি। এসব জমিতে বিচ্ছিন্নভাবে কারেন্ট পোকা ধরেছে। এখন কীটনাশক ছিটাচ্ছি কী হবে জানি না!!! তিনি আরও বলেন, এ ইউনিয়নের অনেক এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে কারেন্ট পোকা দেখা দিয়েছে। দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে ক্ষতি আরও বাড়বে। এভাবে কারেন্ট পোকার আক্রমণ চলতে থাকলে কৃষক এবার আমনের আবাদ ঘরে তুলতে পারবে না। এরইমধ্যে গত ১৬ই অক্টোবর রাতের বেলায় হঠাৎ ঝড় ও বৃষ্টিতে মাঠের পর মাঠ আমন ধানের গাছ গুলো মাটিতে নুইয়ে পড়ে এতে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়। অনেক কষ্টের ও শ্রমের সোনালি ফসল ঘরে তুলার পূর্বেই কৃষকের স্বপ্ন নষ্ট হয়ে গেল। তাই আগামী দিনগুলো পরিবারসহ কিভাবে চলবো এই চিন্তায় বিষন্ন-বিপন্ন ডিমলার কৃষক।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, এ বছর ডিমলা উপজেলায় ১৯ হাজার ৮৩০ হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়ার কারণে ২০ হাজার ৪৩৩ হেক্টর জমিতে ধানের চাষ হয়েছে যা লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬০৩ হেক্টর বেশি। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ৫৯ থেকে ৬০ হাজার মেট্রিক টন চাল। এছাড়াও এখন পর্যন্ত প্রায় ২৪৫ হেক্টর জমির ধান কর্তন করা হয়েছে। তাছাড়াও কারেন্ট পোকার আক্রমণ রোধে কৃষককে সচেতনতামূলক লিফলেট ও প্রেসক্রিপশন বিতরণ করা হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেকেন্দার আলী বলেন, কৃষকেরা যাকে কারেন্ট পোকা বলছেন, সেটি হলো বাদামি গাছফড়িং। অন্ধকারাচ্ছন্ন ও আলো–বাতাস কম থাকে এমন জমিতে এই পোকার আক্রমণ হয়। প্রাথমিক অবস্থায় কীটনাশক ছিটিয়ে এটি দমন করা যায়। এ উপজেলায় বিচ্ছিন্নভাবে বাদামি গাছফড়িং অল্প বিস্তার লাভ করেছে। তা খুবই কম। যেসব খেতে ধান পেকে যাচ্ছে, আমরা সেগুলো কৃষকদের কেটে ফেলার পরামর্শ দিচ্ছি।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com