মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ০৫:৪০ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা ডিমলা নীলফামারী)
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের কৃষক ও কৃষি শ্রমিকদের মুখে আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা নামক আকাল-এর কথা এখন আর শোনা যায় না।
তিস্তা নদীর বন্যা ও ভাঙ্গনের সাথে সংগ্রাম করে বেঁচে থাকা মানুষ গুলোর নতুন প্রজন্মের সন্তানদের কাছে আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা-আকাল নামক শব্দ বর্তমানে শুধুই গল্প।
এক সময় আশ্বিন মাস আসলেই এক দিকে প্রান্তিক কৃষক ও কৃষি শ্রমিকসহ ক্ষুদ্র আয়ের মানুষের ঘরে খাবার থাকতো না। এছাড়া এলাকার শ্রমিকদের মধ্যে ৯০ ভাগই ছিল কৃষি শ্রমিক। এলাকায় কৃষি কাজসহ অন্যান্য কাজ-কর্ম না থাকায় শ্রমিকদের পরিবার পরিজন অর্ধাহারে অনাহারে দিনাতি পাত করতে করেত অনেকের শরীর কঙ্কালে পরিনত হতো।
সে সময়ের উত্তরবঙ্গের মঙ্গা বা আকালের খবর সংগ্রহ করতে ঢাকা থেকে ছুটে আসতেন বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকের সিনিয়র সংবাদকর্মী। অতঃপর সে সংবাদ জাতীয় গণমাধ্যম পেরিয়ে স্থান পেত আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে।
কিন্তু উত্তরাঞ্চের বিশেষ করে নীলফামারী জেলার ডিমলা উপজেলার তিস্তা নদীর চরাঞ্চলের সেই অভাবের চিত্র এখন আর নেই। মঙ্গা নামক দানব মরে গিয়ে মাটির সাথে মিশে গেছে।
স্থানীয় সংসদ সদস্য বীর মুক্তিযোদ্ধা আফতাব উদ্দিন সরকার বলেন, আধুনিক কৃষি উপকরণ ব্যবহারে আগাম ও অধিক ফলনশীল জাতের ধান, ভূটা, গম, মরিচ, মিষ্টি কুমড়া পিঁয়াজ, রসুন সহ নানা রকমের মসলা জাতীয় ফসল চাষের মাধ্যমে তারা তাদের ভাগ্যের পরিবর্তন আনতে সক্ষম হয়েছেন।
এ ছাড়া বিভিন্ন সময়ে সরকারী-বেসরকারী ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের পাশাপাশি সরকারের একাধিক কর্মসূচীর আওতায় বিশেষ করে, বয়স্ক, বিধবা, মাতৃত্বকালীন ও প্রতিবন্ধিভাতা, ভিজিডি, ভিজিএফ, ১০ টাকা কেজি দরে চাল ও শিক্ষাখাতে উপবৃত্তি পেয়ে আসছে চরাঞ্চলের বিভিন্ন শ্রেণির মানুষ। তিনি আরো বলেন, সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে নানা কর্মসংস্থান সৃষ্টির ফলে অতীতের সেই আশ্বিন-কার্তিক মাসের মঙ্গা এখন আর নেই।
অপর দিকে তিস্তা পাড়ের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা রেখেছে সরকারের আধুনিক কৃষি উন্নয়ন পরিকল্পনার পাশাপাশি যথা সময়ে সার, বীজ ও কীটনাশক সরবরাহসহ কৃষি দপ্তরের আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি সংক্রান্ত নানান প্রশিক্ষণ।
সরজমিনে দেখা গেছে, তিস্তা নদীর ভাষানীর চর নামক জায়গায় জেগে উঠা নতুন চরে চলছে আগাম জাতের ধান কাঁটা মাড়াইরের নবান্ন উৎসব।
চরের কৃষকদের কাছে জানাগেছে, আগাম জাতের ধান কাঁটা-মাড়াই শেষ করেই তারা আগাম ভূটা, মিষ্টি কুমড়া, গম, মরিচ, পিঁয়াজ ও রসুনসহ নানা রকমের মসলা জাতীয় ফসল চাষ করা প্রস্তুতি নিবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সেকেন্দার আলী বলেন, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহ থেকে চরাঞ্চলে রোপনকৃত বিনা-৭ ও পটোলপারী জাতের ধান কাটা-মাড়াই শুরু হয়েছে।
উপজেলার তিস্তা নদী বেষ্টিত টেপাখাড়ি ইউনিয়নের দক্ষিন খড়িবাড়ী গ্রামের কৃষক মকবুল হোসেন বলেন, “আগাম ধান ঘরে তুলতে পেরে আমরা খুশি। এ এলাকায় এখন আর আশ্বিন-কার্তিক মাসের সেই মঙ্গা আর নেই। তবে তিনি চর এলাকায় বিশেষ আর্থিক প্রণোদনা ও প্রযুক্তিগত সুবিধা বাড়ানর দাবি তুলেছেন।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।