নোবিপ্রবি প্রতিনিধি :
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (নোবিপ্রবি) ‘মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে ফসল উৎপাদন ও কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব; ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা’ শীর্ষক সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ নভেম্বর ২০২৫) সকাল ১০টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউশনাল কোয়ালিটি অ্যাসুরেন্স সেল (আইকিউএসি) কক্ষে পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের উদ্যোগে দিনব্যাপী এ সেমিনার আয়োজন করা হয়।
সেমিনারটি অনুষ্ঠিত হয় পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন ট্রাস্ট (BCCT) অর্থায়িত প্রকল্প “মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চলে ফসল উৎপাদন ও কৃষিতে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব নিরূপণ এবং ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে জলবায়ু সহনশীল সমাধান” এর আওতায়।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল। সভাপতিত্ব করেন প্রকল্প পরিচালক ও পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক এবং রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “খাদ্য নিরাপত্তা আমাদের জন্য বড় একটি চ্যালেঞ্জ। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে কৃষি উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল নির্বাচন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এ অঞ্চলে সয়াবিন ও বার্লি চাষের সম্ভাবনা রয়েছে, যা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।”
বিশেষ অতিথি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাংকিংয়ে উন্নতির পেছনে আমাদের শিক্ষকদের গবেষণাই মূল ভূমিকা রাখছে। গবেষণা মানসম্মত হলে র্যাংকিং স্বয়ংক্রিয়ভাবে উন্নত হয়। কৃষি গবেষণায় আমরা দ্রুত ফলাফল পেতে পারি, তাই প্রযুক্তিনির্ভর কৃষি ও জলবায়ু অভিযোজনের দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি।”
রিসার্চ সেলের পরিচালক অধ্যাপক ড. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এই প্রকল্পটি সময়োপযোগী ও অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। মেঘনা অববাহিকার কৃষিতে লবণাক্ততা একটি বড় সমস্যা। এই গবেষণার মাধ্যমে জলবায়ু সহিষ্ণু ফসলের জাত উদ্ভাবন করা গেলে উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা ব্যাপকভাবে উপকৃত হবেন।”
সভাপতির বক্তব্যে প্রকল্প পরিচালক অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান বলেন, “জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে আমাদের কৃষি পদ্ধতিতে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। পূর্বপুরুষদের প্রচলিত কৃষি পদ্ধতিতে এখন আর টিকে থাকা সম্ভব নয়। গবেষণার মাধ্যমে আমরা দেখতে চাইছি এই অঞ্চলে সয়াবিনের পাশাপাশি বার্লি উৎপাদনের সম্ভাবনা কেমন। আজকের সেমিনারে আমরা জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব, অভিযোজন কৌশল ও ভবিষ্যতের টেকসই কৃষি নিয়ে মূল্যবান দিকনির্দেশনা পেয়েছি।”
দিনব্যাপী সেমিনারে জলবায়ু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক দিক, কৃষি অভিযোজন, খাদ্যনিরাপত্তা ও স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা করেন বিশিষ্ট গবেষক ও বিশেষজ্ঞরা। আলোচনায় অংশ নেন পরিবেশ বিজ্ঞান ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. আব্দুস সালাম, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট, নোয়াখালীর প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. শহিদুল ইসলাম, কৃষি বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. গাজী মো. নুরুল হোসেন, বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (BADC) সুবর্ণচরের সিনিয়র পরিচালক ড. আর. এস. ইকবাল এবং সেন্টার ফর পিপল অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টের পরিচালক মো. আবুল কালাম আজাদ।
বক্তারা বলেন, মেঘনা অববাহিকার নিম্নাঞ্চল বাংলাদেশের অন্যতম কৃষিনির্ভর অঞ্চল, যা জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ। পানির লবণাক্ততা, অতিবৃষ্টি, খরা ও অস্বাভাবিক আবহাওয়া কৃষি উৎপাদন ব্যাহত করছে। এর প্রতিকার হিসেবে স্থানীয় পর্যায়ে জলবায়ু সহিষ্ণু ফসল চাষ, স্মার্ট কৃষি প্রযুক্তি প্রয়োগ ও দীর্ঘমেয়াদি কৃষি পরিকল্পনার ওপর তারা গুরুত্বারোপ করেন।
সেমিনারে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদের শিক্ষক, গবেষক, প্রশাসনিক কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। শেষে এক মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশগ্রহণকারীরা উপকূলীয় কৃষি উন্নয়ন, জলবায়ু অভিযোজন কৌশল ও ভবিষ্যতের খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে মতবিনিময় করেন।
নিউজ রুমঃ News.dainikparibarton@gmail.com অথবা News@dainikparibarton.com
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2025 dainikparibarton.com