শনিবার, ১২ এপ্রিল ২০২৫, ১১:২০ অপরাহ্ন
রাজশাহী প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ) গঠন ও দায়িত্ব পালনে সরকারি যে নীতিমালা আছে তার কিছুই মানছেন না চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইন-২০১৮ অনুযায়ী চেয়ারম্যান বোর্ড সভায় সভাপতিত্ব করবেন, কোনো সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে বোর্ড
সদস্যদের মতামত সমান হলে নিজেদের ভোট প্রদান করবেন। এর বাইরে তার কোনো দায়িত্ব আইনে নেই।
কিন্তু আসাদুজ্জামান চেয়ারম্যানের দায়িত্ব নেয়ার পর বিএমডিএ-তে বিরাজ করছে অস্থিরতা। বদলি, ঠিকাদারী, সেচ নীতিমালা, অপারেটর নিয়োগ-সবক্ষেত্রে নিজের প্রভাব খাটিয়েছেন। ফলে সেচ নীতিমালা নিয়ে কৃষকরা মাঠে আন্দোলন করেছেন। বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকা গভীর নলকূপ অপারেটরের ঘর দখলের মতো ঘটনা ঘটেছে। এছাড়া অপারেটর নিয়োগের সিদ্ধান্ত চ্যালেঞ্জ করে কৃষকরা
উচ্চ আদালতে মামলাও করেছেন। চেয়ারম্যানের স্বেচ্ছাচারিতার বিরুদ্ধে
বিভিন্ন অঞ্চলে বিএমডিএ কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে বিক্ষোভ করেছেন চাষিরা।
তানোরের কৃষক নেতা কেএম জুয়েল জানান, সেচ নীতিমালা বোর্ড সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী হওয়ার কথা। তাতে স্বাক্ষর থাকার কথা নির্বাহী পরিচালকের। কিন্তু এবার স্বাক্ষর করেছেন চেয়ারম্যান নিজেই। যা তার এখতিয়ারের মধ্যে পড়ে না।
ভুগরোইলের কৃষক সলেমান আলী জানান, তার এলাকার গভীর নলকূপ দখল করে নেয়া হয়েছে। দীর্ঘদিন ধরে যিনি সেচ দিয়ে আসছিলেন, তাকে বাদ দিয়ে অন্য একজনকে
অপারেটর নিয়োগ দেয়া হয়েছে।
শুধু মাঠে নয়, অফিসেও বিশৃংঙ্খলা তৈরি করে রেখেছেন আসাদুজ্জামান।
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা দুইভাগে বিভক্ত। আওয়ামী লীগের সময় সুবিধাভোগী, সাবেক চেয়ারম্যান আকতার জাহানের স্ক্রীপ্ট রাইটার, তার সময়ে প্রকল্প পরিচালক হওয়া প্রকৌশলীদের নিয়ে তিনি গড়েছেন নতুন সিন্ডিকেট। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক তত্ত্ববধায়ক প্রকৌশলী জানান, চেয়ারম্যানের ইন্ধনে বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলামের উপর হামলার ঘটনা ঘটে।
এদিকে কৃষি উপদেষ্টার নির্দেশনা উপেক্ষা করায় বোর্ড সভা থেকে বের হয়ে গেছেন রাজশাহীর বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিএমডিএ) একজন বোর্ড সদস্য। নির্বাহী পরিচালককে লাঞ্ছিত করে তার কক্ষ থেকে বের করে
দেওয়ার ঘটনা তদন্তে কমিটি গঠনে চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামানের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ তুলে লিখিত অভিযোগ করেছেন সদস্য সাইফুল ইসলাম হিরক।
তিনি জানান, ২৩ মার্চ বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালক শফিকুল ইসলামকে তার কক্ষে লাঞ্ছিত করে বের করে দেওয়ার ঘটনা ঘটে। বিষয়টি নিয়ে কৃষি উপদেষ্টা ও
কৃষি সচিবের সঙ্গে বৈঠক হয়। বৈঠকে কৃষি উপদেষ্টা তাকে (সাইফুল ইসলাম
হিরক) প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দেন চেয়ারম্যানকে। কিন্তু
চেয়ারম্যান ৮ এপ্রিল চিঠি দিয়ে বৃহস্পতিবার বোর্ড সভা আহ্বান করেন। তাতে
লেখা আছে ৩ এপ্রিল তদন্ত কমিটির সভা হয়েছে। সেখান থেকে মন্ত্রণালয়ে তদন্ত
রিপোর্ট পাঠানো হবে। কিন্তু এমন কোনো সভায় তিনি উপস্থিত ছিলেন না বা তাকে
জানানো হয়নি। এমনকি কমিটিও গঠন করা হয়নি। তাই বৃহস্পতিবার লিখিত দিয়ে তিনি বোর্ড সভা বর্জন করেছেন।
বিএমডিএ চেয়ারম্যান ড. আসাদুজ্জামান জানান, তিনি বোর্ড সভায় আছেন। এনিয়ে
ব্যক্তিগত কর্মকর্তার সঙ্গে কথা বলতে বলেন। চেয়ারম্যানের ব্যক্তিগত
কর্মকর্তা এসএম রফিকুল ইসলাম জানান, একজন বোর্ড সদস্য একটি লিখিত চিঠি দিয়েছেন। তিনি সেটি রিসিভ করেছেন।
উল্লেখ্য, গত ২৩ মার্চ বিএমডিএ’র নির্বাহী পরিচালককে তার চেয়ার থেকে জোর করে তুলে কক্ষ থেকে বের দেন। সরকারি আদেশ ছাড়াই সেই চেয়ারে বসেন প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম খান। ইতিমধ্যে মন্ত্রণালয় তাকে অবসরে পাঠিয়েছে। অন্য ৮ কর্মকর্তা-কর্মচারীকে কারণ দর্শানোর চিঠি দিয়েছে কৃষি মন্ত্রণালয়। এছাড়া
নগরীর রাজপাড়া থানায় ১৩ জনের নামে মামলা হয়েছে।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।