(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি):
নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজ সুন্দর খাতা হইতে দক্ষিন সুন্দর খাতা পর্যন্ত কয়েক হাজার বিঘা কৃষি জমি বর্ষা মৌসুমে পতিত থাকে। ভাঙ্গা অংশ দিয়ে পানির ঢুকার কারণে স্থানীয় কৃষকেরা আবাদ করতে পারেন না। ফলে প্রতিনিয়ত ঐ এলাকার কৃষকেরা অভাব অনটনের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করে করে আসছে। বর্ষার শেষে পানি শুকিয়ে যাওয়ায় কৃষকদের উৎসাহ উদ্দীপনার শেষ নেই। কেউ বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যা নিয়ে ব্যস্ত আবার কেউ পতিত জমির আইল (মাল্লি) ছাঁটা ও সেচ পাম্প দিয়ে পানি তুলে যান্ত্রিক টিলার দিয়ে হাল চাষে ব্যস্ত। পতিত কৃষি জমিতে কৃষকের পরিশ্রমে ফলবে সোনালী ফসল বোরো ধান। জানা যায়, বালাপাড়া ইউনিয়নের নিজ সুন্দর খাতা হইতে দক্ষিন সুন্দর খাতা পর্যন্ত প্রায় ৫ কিঃ মিঃ বুড়ি তিস্তার বাঁধটি দেশ স্বাধীনের পূর্বে নির্মিত হয়।
তবে ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় কচুবাড়ীর দুলার বাঁধের অংশে প্রায় ৬০ মিটার ভেঙ্গে যায়। এলাকাবাসীর স্বেচ্ছাশ্রম ও স্থানীয় জমির মালিকগনের নিজস্ব অর্থায়নে বাঁধটি এক সময় মেরামত করা হলেও পুনরায় উজানের পানির ঢলে ভেঙ্গে য়ায়। তখন থেকে আজ পর্যন্ত বাঁধটির ভাঙ্গা অংশ দিয়ে উজানের ঢল ও বুড়িতিস্তা নদীর পানি ঢুকে ভুট্টাসহ আমন ও বোরো মৌসুমে রোপনকৃত বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতিসাধন হয়। ৬০ মিটার ভাঙ্গা বাঁধটি সংস্কারের অভাবে এলাকার কৃষকদের কয়েক হাজার বিঘা জমি পতিত থাকে এবং বর্ষা মৌসুমে চাষাবাদের অনুপযোগী হয়ে পড়ে। একারণেই স্থানীয় এলাকাবাসি বাঁধটি মেরামতসহ বুড়িতিস্তা নদী পুনঃ খননের দাবী করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
স্থানীয় কৃষক পাষান আলী জানান, বুড়িতিস্তা নদীর পশ্চিম পার্শ্বের বাঁধটি কিছু অংশ অনেকে আগে বন্যায় ভেঙ্গে যায়, নদীর পানি ঢুকে আমাদের জমিগুলোতে বর্ষা মৌসুমে আমন ধান রোপন করতে পারি না। বোরো ধানের আবাদ ছাড়া কিছুই হয়না জমিগুলোতে “বছরের অর্ধেক মাসেই পতিত থাকে কৃষি জমি একবার হয় আবাদ, সে আবাদ দিয়ে কি আর সংসার চলে ”। জমির মালিক আব্দুল হামিদ জানান, বুড়িতিস্তা নদী খনন ও বাঁধটি মেরামত করা হলে পতিত জমিগুলোতে কৃষকেরা আমন-ইরি দুই ফসল উৎপাদিত করতে পারবে। তখন জমিগুলো এক ফসল থেকে দুই ফসলে রুপান্তরিত হবে। এতে এলাকার কৃষকেরা উপকৃত হবে। বালাপাড়া ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী জানান, জমিগুলো ছয়মাস পতিত থাকে শুধু এক ফসল হয়। বোরো ধানের উপর আর নির্ভরশীল না থেকে আমন মৌসুমে যাতে পতিত জমিগুলোতে কৃষকেরা চাষাবাদ করতে পারে সে জন্য নীলফামারী-১ (ডোমার-ডিমলা) সংসদীয় আসনের সংসদ সদস্য বীরমুক্তিযোদ্ধা আলহাজ্ব আফতাব উদ্দিন সরকারের কাছে দৃষ্টি আর্কষন করছি।
সরেজমিনে দেখা যায়, বুড়িতিস্তা নদীর পূর্বপাশ ঘেষা কচুবাড়ী দোলার বাঁধটি সংস্কার/মেরামত করা হয়নি। মেরামত না হওয়ায় নিজ সুন্দর খাতা, মধ্য সুন্দর খাতা, দক্ষিন সুন্দর খাতা গ্রামের প্রায় হাজারো বিঘা জমি আমন ধান রোপন করতে পারে না ফলে কৃষকদের জমিগুলো বর্ষা মৌসুমে পতিত থাকে। যার ফলে প্রতিনিয়ত কৃষকেরা অভাব অনটনের মধ্যে মানবেতর জীবন যাপন করে। পতিত জমিগুলোতে বোরো ধান চাষাবাদ করলেও বোরো ধানকাঁটা মৌসুমে বুড়িতিস্তা নদীর পানি বাঁধটির ভাঙ্গা অংশ দিয়ে প্রবাহিত হয়ে ফসলি জমিতে ঢুকে পড়ে। এতে বোরো ধান কাঁটা মৌসুমে চাষাবাদকৃত পাঁকা ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয় এবং বর্ষা মৌসুমে মধ্যম সুন্দর খাতা মাঝিয়ালীর ডাঙ্গা প্রাথমিক বিদ্যায়লয়টির মাঠ বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ার ফলে বিদ্যালয়টির ছাত্র-ছাত্রী, শিক্ষক-শিক্ষিকাদের চরম দূর্ভোগ পোহাতে হয়। বাঁধটি বন্যায় ভেঙ্গে যাওয়ায় সুন্দর খাতা কচুবাড়ীর দলা হইতে খোকসারঘাট ব্রীজের উজানের কৃষি জমিগুলো বর্ষা মৌসুমে প্রতিবছর পতিত থাকে।
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা (কৃষিবিদ) সেকেন্দার আলী বলেন, বাঁধটি মেরামত হলে জমিগুলো পতিত থাকবে না তখন কৃষকেরা আমন ধান রোপন করতে পারবে। স্থানীয় কৃষকেরা নিজেদের খাদ্য চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্য জেলার খাদ্য চাহিদা পূরণে সহায়তায় সক্ষম হবে। তাই বাঁধের ভাঙ্গা অংশটি দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন।
নিউজ রুমঃ [email protected] অথবা [email protected]
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com