মেহেদী হাসান,নোবিপ্রবি প্রতিনিধি:
নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) দীর্ঘদিনের স্থবিরতা কাটছে অবশেষে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণার অন্যতম প্রধান অবকাঠামো, একাডেমিক ভবন–৩ এবং কেন্দ্রীয় গবেষণাগার নির্মাণে প্রি-একনেকে ৩৪২ কোটি টাকার নতুন প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। এই অনুমোদনকে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও শিক্ষার্থীরা নোবিপ্রবির উন্নয়নযাত্রার এক ‘ঐতিহাসিক মোড়’ বলে মনে করছেন।
বৃহস্পতিবার (৩০ অক্টোবর) বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল একান্ত সাক্ষাৎকারে বিষয়টি নিশ্চিত করেন।
তিনি বলেন, “এটি নোবিপ্রবি পরিবারের জন্য এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত। দীর্ঘদিন ধরে স্থবির থাকা ভবন–৩ নির্মাণকাজ আবারও শুরু হবে। শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি ও গবেষণাগারের সংকট দূর হবে। আমরা বিশ্বাস করি, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে নোবিপ্রবি একটি আধুনিক ও আন্তর্জাতিক মানসম্পন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিণত হবে।”
বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, একাডেমিক ভবন–৩ ও কেন্দ্রীয় গবেষণাগার নির্মাণকাজ শুরু হয় ২০১৮ সালে। প্রকল্পের প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১১৫ কোটি ৭০ লাখ টাকা। চুক্তি অনুযায়ী ২০২১ সালের মাঝামাঝি সময়ে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও, বাস্তবে অগ্রগতি ছিল অত্যন্ত ধীর।
নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান দুটি জিকে বিল্ডার্স ও বিল্ডার্স ইঞ্জিনিয়ারিং। ২০১৯ থেকে ২০২০ সালের মার্চ পর্যন্ত করোনার অজুহাতে ধীরগতিতে কাজ চালায়। পরে কাজ পুরোপুরি বন্ধ করে দেয় তারা। এ সময় জিকে বিল্ডার্সের মালিক জিকে শামিম টেন্ডার বাণিজ্য ও অর্থপাচারের অভিযোগে গ্রেপ্তার হন।
এরপর ২০২১ সালের ১০ অক্টোবর শিক্ষা মন্ত্রণালয় আনুষ্ঠানিকভাবে প্রতিষ্ঠান দুটির সঙ্গে চুক্তি বাতিল করে। কাজ বন্ধ হয়ে যায় পুরোপুরি। ফলে নোবিপ্রবির শিক্ষাকর্ম ও গবেষণার পরিবেশ ব্যাহত হতে থাকে। শ্রেণিকক্ষ সংকটে পড়তে হয় প্রায় সব বিভাগের শিক্ষার্থীদের।
নোবিপ্রবি তুলনামূলক নতুন হলেও, দ্রুত সম্প্রসারণের ফলে শ্রেণিকক্ষ, ল্যাবরেটরি ও অফিস–সংকট প্রকট আকার ধারণ করে। বিশেষ করে একাডেমিক ভবন–৩ এর কাজ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় নতুন ব্যাচের শিক্ষার্থীরা ভীষণ ভোগান্তিতে পড়েন।
শিক্ষা বিভাগের শিক্ষার্থী মোমেনুল ইসলাম বলেন, “আমরা প্রায়ই ক্লাসরুম সংকটে পড়ি। অনেক সময় একাধিক ব্যাচকে একই কক্ষে ক্লাস নিতে হয়। একাডেমিক ভবন–৩ এর কাজ বন্ধ থাকাটা আমাদের জন্য দীর্ঘদিনের হতাশার বিষয় ছিল। এখন নতুন প্রকল্পের অনুমোদন পাওয়ার খবর শুনে সত্যিই স্বস্তি লাগছে। আশা করি, কাজটি দ্রুত শুরু হবে।”
নোবিপ্রবির উপ–উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক বলেন, “একাডেমিক ভবন–৩ ছিল নোবিপ্রবির দীর্ঘদিনের দুঃখের নাম। শ্রেণিকক্ষ ও গবেষণার সংকটে জর্জরিত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় আশি ভাগ সমস্যার মূলে ছিল ওই অসমাপ্ত ভবনটি। প্রি-একনেকে অনুমোদন পাওয়া মানে সেই দুঃখের অবসান। এবার আমরা আশাবাদী—খুব দ্রুতই কাজ শুরু হবে।”
তিনি আরও বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়ে গবেষণায় যুক্ত হচ্ছেন। আমরা চাই তাদের জন্য একটি আধুনিক ও প্রযুক্তিনির্ভর অবকাঠামো তৈরি হোক। এই প্রকল্প সেই লক্ষ্য পূরণের দিকেই নিয়ে যাবে।”
গত কয়েক বছরে নোবিপ্রবি প্রশাসন অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও গবেষণায় নতুন গতি আনতে বিভিন্ন পদক্ষেপ নিয়েছে। নতুন আবাসিক হল, রাস্তা উন্নয়ন, গ্রিন ক্যাম্পাস উদ্যোগ, ডিজিটাল সেবা চালু ও গবেষণা তহবিল বৃদ্ধির মাধ্যমে বিশ্ববিদ্যালয়টি এগিয়ে যাচ্ছে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষকরা বলছেন, ভবন–৩ সম্পন্ন হলে শুধু শ্রেণিকক্ষ সংকটই দূর হবে না, গবেষণাগার সুবিধাও বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে। এতে নোবিপ্রবি দেশের অন্যান্য বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় শক্ত অবস্থানে থাকবে।
উপাচার্য অধ্যাপক ইসমাইল বলেন, “আমরা চাই শিক্ষার্থীরা যেন তাদের গবেষণা, উদ্ভাবন ও একাডেমিক কর্মকাণ্ডে আন্তর্জাতিক মানে পৌঁছাতে পারে। এজন্য অবকাঠামোগত উন্নয়ন সবচেয়ে বড় চাবিকাঠি। নতুন প্রকল্পের অনুমোদন সেই স্বপ্নপূরণের দ্বার খুলে দিয়েছে।”
দীর্ঘ অচলাবস্থার পর নতুন করে প্রকল্প অনুমোদনের খবর বিশ্ববিদ্যালয়জুড়ে আনন্দের সঞ্চার করেছে। শিক্ষক–শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা–কর্মচারী—সবাই এখন একটাই প্রত্যাশা করছেন, দ্রুত যেন কাজ শুরু হয় এবং আর কোনো জটিলতা না দেখা দেয়।
নোবিপ্রবি পরিবারের প্রত্যাশা, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বিশ্ববিদ্যালয়টি দেশের অন্যতম আধুনিক ও গবেষণানির্ভর উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে রূপ নেবে—যেখানে ভবিষ্যতের বিজ্ঞানী, গবেষক ও উদ্ভাবক তৈরি হবে।
নিউজ রুমঃ News.dainikparibarton@gmail.com অথবা News@dainikparibarton.com
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2025 dainikparibarton.com