মোঃবায়েজিদ আহমেদ,রায়গঞ্জ প্রতিনিধি
সবুজ পাতাকে ছাপিয়ে সোনালী রঙের ফুলে সজ্জিত গাছটির নাম সোনালু। গ্রীষ্মের রুক্ষ প্রকৃতিতে প্রাণের সজিবতা নিয়ে গাছের প্রতিটি ডাল-পালায় থোকায় থোকায় অলংকারের ন্যায় শোভা পায় সোনালু ফুল। সিরাজগঞ্জের বিভিন্ন স্থানে গ্রীষ্মের দক্ষিণা হাওয়ায় সোনা ঝড়া সোনালু ফুল যেন প্রকৃতির কানে দুলছে দুল।
সোনালু বা বাঁদরলাঠি গাছ সাধারণত ১৫ থেকে ২০মিটার উঁচু হয়ে থাকে। উঁচু থেকে মাঝারি উঁচু ভূমি সোনালু গাছ উৎপাদনের জন্য উপযোগী স্থান। পত্র ঝরা বৃক্ষ, শীতে গাছের সমস্ত পাতা ঝরে গিয়ে গাছ থাকে পত্র শুন্য এবং বসন্তের শেষে ফুল কলি ধরার পূর্বে গাছে নতুন পাতা গজায়। গ্রীষ্মে গাছের শাখা-প্রশাখা জুড়ে ঝুলন্ত মঞ্জুরিতে সোনালী হলুদ রঙের ফুল ফুটে এবং এর ব্যাপ্তি থাকে গ্রীষ্ম কাল পুরো সময় জুড়ে। ফুলের পাঁপড়ি পাঁচটি, মাঝে পরাগ দ- অবস্থিত। পাতা হাল্কা সবুজাভ, মধ্য শিরা স্পষ্ট। গাছের শাখা-প্রশাখা কম,কা- সোজা ভাবে উপরের দিকে বাড়তে থাকে, বাকল সবুজ থেকে ধুসর রঙের, কাঠ মাঝারি শক্ত মানের হয়। ফুল থেকে গাছে ফল হয়, ফলের আকার দেখতে সজিনা সবজির আকৃতির, তবে সজিনার গায়ের চামড়াতে ঢেওতোলা সোনালু ফলে তা নেই চামড়া মসৃণ। ফল লম্বায় প্রায় এক ফুট, রঙ প্রথমে সবুজ ও ফল পরিপক্ব হলে কালচে খয়েরি রঙ ধারণ করে। ফলে বীজ হয়,ফলের বীজ হতে বংশ বিস্তার ঘটে। কোন কোন অঞ্চলে সোনালু এর ফলকে বানর লাঠি হিসেবে চিনে বলে সোনালু গাছকেও তারা বানর লাঠি গাছ বলে ডাকতে শুনা যায়
প্রকৃতিকে নয়নাভিরাম রূপে সাজিয়ে তুলতে সোনালু ফুলের জুড়ি নেই। পরিবেশ ও প্রকৃতির শোভা বর্ধণে সোনালু দারুণ এক নিসর্গ মায়া এনে দিয়েছে। দীর্ঘ মঞ্জুরিতে ঝুলে থাকা পাঁচ পাঁপড়ি বিশিষ্ট সোনালু ফুলের থোকা অনেকটা অলংকারের মতো। গ্রামের শিশু-কিশোরীরা এখনো ওই ফুল কানে দুল লাগিয়ে খেলায় মগ্ন হয়।
অনেক পথচারী ক্ষণিকের জন্য হলেও থমকে দাঁড়িয়ে প্রকৃতির অপার সৌন্দর্য প্রাণ খুলে উপভোগ করতে দেখা গেছে। এলাকার মানুষ যখন গ্রামের মেঠো পথ ধরে চলতে শুরু করে অনেক দূর থেকে দিগন্তে হাসতে শুরু করে সোনালু ফুল। অনেকে আবার সেখানে থমকে দাঁড়িয়ে উপভোগ করে সোনালু ফুলের হাসি।
রায়গঞ্জের বিভিন্ন সড়কে ও পল্লির বিভিন্ন স্থানে সারি সারি সোনালু গাছে ফুটেছে হলুদ ফুল। কেউবা এই অপরূপ সৌন্দর্যের ছবি বন্দি করে মেতেছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
বাংলাদেশের সিংহভাগ সোনালু গাছ জন্মায় প্রাকৃতিকভাবে। অথচ প্রকৃতির শোভাবর্ধনকারী ও ভেষজ গুণাবলী সম্পন্ন এই গাছটি বেশির ভাগই বেড়ে উঠছে অযত্ন-অবহেলায়। রোপণের সংখ্যা একেবারেই কম।
তথ্য নিয়ে জানা যায়, সোনালু গাছের পাতা ও বাকল ভে
ষজগুণ সমৃদ্ধ। যা ডায়রিয়া ও বহুমূত্র রোগে ব্যবহৃত হয়। বাংলাদেশ, ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ায় এ গাছ জন্মে বেশি। সোনালু গাছের বৈজ্ঞানিক নাম কেসিও ফেস্টুলা এবং প্রকৃত শুদ্ধ নাম কর্ণিকার। ইংরেজিতে এর নাম গোল্ডের শোয়ার। তবে বাংলাদেশে অঞ্চল ভেদে নামেও রয়েছে ভিন্নতা।
সোনালু গাছের কাঠ তেমন গুরুত্ব বহন না করায় এবং গাছটি খুব ধীরগতিতে বেড়ে উঠায় এই গাছ রোপণে আগ্রহ নেই কারও। প্রকৃতিকে সাজাতে সকলকে এগিয়ে আসার আহবান জানায় পরিবেশবিদরা।
নিউজ রুমঃ News.dainikparibarton@gmail.com অথবা News@dainikparibarton.com
মোবাইল: +8809696195106 অথবা +8801715-395106
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com