সোমবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৮ অপরাহ্ন
(জামান মৃধা, নীলফামারী প্রতিনিধি):-
সাধারণত যে কচু স্বল্প পানিতে চাষ করা যায় তাকে পানিকচু বলে। আমাদের দেশে স্থান ভেদে পানিকচুর নাম ভিন্ন যেমন নারকেলি কচু, শোলা কচু, জাত কচু, বাঁশকচু, কাঠকচু ইত্যাদি। তবে পানিকচু নামেই সর্বাধিক পরিচিত। পানিকচুর লতি ও কাণ্ড সবজি হিসেবে ব্যবহৃত হয়। বর্ষার শেষে যখন বাজারে সবজির ঘাটতি দেখা দেয় তখন জুন-সেপ্টেম্বর মাসে বাজারে পানিকচুর লতি ও কান্ড বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে অনেকের কাছে। শহর অঞ্চল সহ প্রত্যন্ত অঞ্চলেও কচু পাওয়া যায়। কচুতে প্রচুর পরিমাণ শ্বেতসার, লৌহ, ফসফরাস, ক্যালসিয়াম, এবং ভিটামিন এ ও সি রয়েছে।
আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার, যথাযথ গবেষণা, সরকারি প্রণোদনা প্রদান, সর্বোপরি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সার্বিক সহযোগিতায় বর্তমানে বাণিজ্যিকভাবে
নীলফামারী ডিমলা উপজেলায় বাড়ছে পরিবেশ বান্ধন ও ভিটামিনযুক্ত বারি-১ জাতের লতিরাজ পানি কচুর চাষ। সম্ভাবনা নেই আর্থিক ক্ষতির, নেই পোকার আক্রমণ ও রোগবালাই। সেই সাথে বর্তমান বাজারে, স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি এ সবজির চাহিদা বাড়ায় পানিকচু বারি-১ জাতের লতিরাজ চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে এ উপজেলার কৃষকেরা।
তেমনি পানিকচু বারি-১ জাতের লতিরাজ চাষে সাফল্য পেয়েছে ডিমলা সদর ইউনিয়ন রামগঙ্গা এলাকার আনারুল ইসলামের পুত্র কৃষক সাজু মিয়া। ২০১৯-২০ অর্থবছরে কৃষি প্রণোদনার আওতায় ডিমলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতায় জয়পুরহাট জেলার পাঁচবিবি উপজেলা থেকে বারি-১ জাতের লতিরাজ পানিকচু কৃষক সাজু তার জমিতে রোপণ করে।
সরেজমিনে তার কচু ক্ষেতে গিয়ে দেখা যায়, বসত বাড়ির পেছনেই এক ফসলি ধানি জমিতে তিনি চাষ করেছেন বারি-১ জাতের লতিরাজ কচু। এক একর জায়গায় বেড়ে উঠেছে হাজার হাজার কচুর গাছ।
প্রত্যেক গাছের গোড়ায় রয়েছে একাধিক লতি। সাজু বলেন, বছরে একবার ধান ফলানোর পর এই জমি পুরো বছরই অনাবাদি থাকতো। কৃষি অফিসের পরামর্শে এবার পানিকচুর চাষ করি। কৃষি প্রণোদনা প্রকল্পের আওতায় কৃষি অফিস থেকে প্রদর্শনী পাই। বারি-১ লতিরাজ জাতের তিন হাজার কচুর চারা রোপণ করি। এক মাসেই গাছে লতি আসতে শুরু করে। অল্পদিনেই বিক্রি হয় চল্লিশ হাজার টাকার লতি। তাছাড়া খানসামা, ডোমার, পাটগ্রাম উপজেলা সহ বিভিন্ন এলাকার কৃষকের নিকট ৩০ হাজার টাকার অধিক বারি-১ জাতের লতিরাজ কচুর চারা বিক্রি করা হয়েছে।
এছাড়াও ৩ হাজার কেজি লতি বিক্রি করে ৭০ হাজার থেকে ৮০ হাজার টাকা মুনাফা করার সম্ভাবনা দেখছেন তিনি। কচুর চারা বিক্রি করেছেন ২৫ হাজার টাকা। পানিকচুর মোড়া বিক্রি হবে প্রায় ৮০ হাজার থেকে ৯০ টাকা। ফুল ও কান্ড বিক্রি হবে ৩০-৩৫ হাজার টাকা। এতে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা খরচ বাদে ১ লাখ ৪০ হাজার থেকে ১ লাখ ৫০ হাজার টাকার ঊর্ধ্বে মুনাফা হবে বলে মনে করেন তিনি।
এ বিষয়ে কথা হলে ডিমলা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ মোঃ সেকেন্দার আলী এই প্রতিবেদককে বলেন, ”কচু” সবজি হিসেবে স্বাস্থ্যের জন্য উপকারি। কচু উৎপাদনে খরচ ও রোগ-বালাই কম, দামও ভালো পাওয়া যায়। এ উপজেলায় ইতিমধ্যে পশ্চিম ছাতনাই ও বালাপাড়া ইউনিয়নের জাহাঙ্গীর এবং অহিদুল ইসলাম বারি-১ জাতের লতিরাজ কচুর চাষাবাদ শুরু করেছে। সাজু সহ তিন জনের বারি-১ লতিরাজ জাতের কচু চাষের জমির পরিমান ১০ বিঘার উপরে। আমরা এ ব্যাপারে কৃষকদের সার্বক্ষণিক সহায়তা ও কৃষি পরামর্শ দিচ্ছি।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।