বৃহস্পতিবার, ২০ নভেম্বর ২০২৫, ০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
রাজশাহী প্রতিনিধিঃ
রাজশাহীর বাঘায় মন্দিরের নামে নারায়ন ভৌমিক নামের এক ব্যক্তির নিজ নামিয় ক্রয়কৃত সম্পত্তি দখলের অভিযোগ উঠেছে। বাউসা ইউনিয়নের বেণুপুর গ্রামের নারায়ণ ভৌমিকের ক্রয়কৃত নিজ নামিয় সম্পত্তি বেণুপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের দোহাই দিয়ে জমির পূর্বের মালিকের বংশধররা দখল করেছে বলে জানা যায়।
জানা যায়, নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক ১৯৯২ সালের ২৩ জানুয়ারি শ্রী খগেন্দ্র নাথের কাছ থেকে তার রেকর্ডী সম্পত্তির ২৫ দাগের কাতে ১২ শতক জমি ক্রয় করেন। তৎকালীন সময় থেকেই উক্ত জমি
৯২৩৩ দাগে ১২ শতক জমি
ভোগদখলে রয়েছেন যা দলিলে উল্লেখ রয়েছে।
প্রায় ৩৩ বছর পরে গত ৩০ জুন ২০২৩ তারিখে শুবোধ কুমার, শুবল কুমার উভয়ের পিতা দেবেন্দ্রনাথ প্রাঃ, প্রভাত কুমার, প্রবোধ প্রাং উভয়ের পিতা শ্রী চরণ, সোমেন কুমার পিতা সত্যেন্দ্রনাথ প্রাং উক্ত জমি থেকে ১টি মেহগনির গাছ কাটে নেয় এবং ঐ সম্পত্তির উপর একটি ঘর তৈরি করেন। এ ঘটনায় জমির ক্রয়কৃত মালিক নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক প্রথমে থানায় এবং পরে রাজশাহীর আদালতে মামলা দায়ের করেন।
এ বিষয়ে ভুক্তভোগী নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক বলেন, গত ২০২৩ সাল থেকে মৃত শ্রী চরনের ওয়ারিশ প্রভাত কুমার, প্রবোধ কুমার ও দেবনন্দ্রাথের ওয়ারিশ সুভ্রত কুমার ও সুবল কুমার এবং সত্যেন্দ্রনাথের ওয়ারিশ সোমেন কুমার আমার নিজ নামিয় ক্রয়কৃত সম্পত্তিতে হস্তক্ষেপ করে দখলের চেষ্টা করেন। আমি নিরুপায় হয়ে রাজশাহীর আদালতে একটি মামলা দায়ের করি, এর পরে ৩১/১০/২০২৪ ইং তারিখে আদালত ১৪৪ ধারা বলবৎ করেন। কিন্তুু তারা আদালতের ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করে আমার নালিশী জমিতে অনধিকার প্রবেশ করে একটি বড় ফজলী আমগাছ ও বাঁশঝাড় থেকে ১শ টি বাঁশ কেটে নিয়ে যায়। আনুমানিক গাছের মূল্য ৩০ হাজার টাকা এবং বাঁশের মূল্য ২৫ হাজার টাকা। বিষয়টি জানতে পেরে আমি তাদের নিষেধ করলে তারা আমাকে মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেয়।
গত ১০/০১/২০২৪ ইং তারিখে
তৎকালীন বাঘা উপজেলার ভূমি কর্মকর্তা জুয়েল আহমেদ রাজশাহীর অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের আদালতের নির্দেশে
সরেজমিন তদন্তে অভিযোগের সত্যতা পান। সার্ভেয়ারের মাধ্যমে জমি পরিমাপ করে সীমানা নির্ধারণ করেন এবং উক্ত জমি বাদীর ভোগ দখলে আছে মর্মে তদন্ত প্রতিবেদনে উল্লেখ করেন।
সর্বশেষ গত দূর্গা পূজার পূর্ববর্তী সময়ে উক্ত জমিতে থাকা পুকুর থেকে প্রায় লক্ষাধীক টাকার মাছ মেরে নেয় বলে অভিযোগ করেন নারায়ন চন্দ্র ভৌমিক। এছাড়াও সম্প্রতি মামলা তুলে নেওয়ার জন্য তারা প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলেও বাদী নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক জানান। এছাড়াও ২০২২ সালে উক্ত জমির বাটোয়ারা মামলা রয়েছে। যার মামলা নং- ৪৯৪।
এ বিষয়ে সাবেক বেনুপুর সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের সাবেক সভাপতি শুভোদ বলেন, এই ঘটনার আমি কোন ভাবেই জড়িত নই। মন্দিরের উন্নয়নে নারায়ন চন্দ্র ভৌমিকের যথেষ্ট অবদান রয়েছে। মন্দিরের জমি কম থাকায় পূজা উদযাপনের জন্য তার জমি নির্বিঘ্নে ব্যাবহার করা হয়। বিকাশ যে দাবি করেছেন তা অন্যায্য। ওই জমি থেকে গাছ ও বাঁশ কাটা এবং পুকুরে মাছ মারা ঠিক হয়নি। এ ঘটনায় আমার কোন ভূমিকা না থাকলেও মামলায় আমাকে আসামী করা হয় যা অত্যন্ত দুঃখজনক।
এ বিষয়ে শ্রী বিকাশের কাছে জানতে চাইলে তিনি জমির বিষয়টি আমার কাকা প্রবোধ কুমার ভালো জানেন বলে
এড়িয়ে যান। তবে বর্তমানে ওই জমির সীমানা সম্পর্কে বলেন, সম্প্রতি বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতির নেতৃত্বে একটি শালিস অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত শালিসে নারায়ন ভৌমিক উপস্থিত না হওয়ায় একপাক্ষিক রায় ঘোষণা করেন এবং সীমানা নির্ধারণ করেন। যেখানে একটি সিমেন্টের তৈরি পিলার ও সাইনবোর্ড দেওয়া আছে।
ঘটনার বিষয় স্বিকার করে প্রবোধ বলেন, তারা বিনা কারণে আমাদের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানি করছেন। এছাড়াও এ মামলার কারণে আমাদের সমাজের মধ্যে বিভক্তি সৃষ্টি হয়েছে। তাই কিছু লোকজন ক্ষিপ্ত হয়ে ওই জমি দখল, গাছ ও বাঁশ কাটা এবং মাছ মারার ঘটনা ঘটিয়েছে।
এ ঘটনায় আদালতে বাটোয়ারা মামলা সহ একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। তারপরও কিভাবে করা হয় শালিস তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে জনমনে। এ দিকে মামলা তুলে নেওয়ার জন্য নানা ভাবে হুমকি দেওয়ায় নারায়ন চন্দ্র ভৌমিক বাঘা থানায় একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন।
শালিসের ব্যাপারে বাউসা ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দীন বলেন, আমি এবং ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি রেজাউল করিম সহ এলাকার অনেক গণ্যমাণ্য ব্যক্তি ওই শালিশে উপস্থিত ছিলাম, সেই শালিশে নারায়ণ চন্দ্র ভৌমিক উপস্থিত ছিলো না। সীমানা নির্ধারণের বিষয়ে জানা নেই আমরা জমি মাপার পরে সেখানে উপস্থিত হই। তবে কাগজপত্র দেখে যা বুজলাম তাতে মন্দিরের ওই জমি থেকে ১২ শতক জমি নারায়ন চন্দ্র ভৌমিক পাবেন না। কারণ তিনি ২৫টি দাগের কাতে ১২ শতক জমি ক্রয় করেন। নারায়ন চন্দ্র ভৌমিক ওই দাগ থেকে যৎসামান্য জমি পাবেন।
এ বিষয়ে বাঘা থানার অফিসার ইনচার্জ আ.ফ.ম আসাদুজ্জামান বলেন, উক্ত জমি দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে তাদের মধ্যে বিরোধ চলে আসছে, সম্প্রতি তাকে এক পক্ষ হুমকি দেওয়ায় থানায় একটি জিডি করেছেন, তবে আমরা উভয়ের মধ্যে শান্তি বজায় রাখার চেষ্টা করছি।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।