বুধবার, ২৩ এপ্রিল ২০২৫, ০১:২৪ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা ডিমলা নীলফামারি)
নীলফামারী ডিমলা উপজেলার সর্বত্রই গবাদি পশুর নতুন ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ (এলএসডিভি) রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন খামারি ও গরু পালনকারীরা। এ রোগের নির্দিষ্ট কোন প্রতিশোধক ঔষধ না থাকায় দ্রুত এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়ছে। এতে খামারি ও গরু পালনকারীর মাঝে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে।
এ পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর বলছে, লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস জনিত রোগ। মূলত মশা -মাছি, আঠাঁলী থেকে এ রোগ ছড়ায়। এতে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, সময় মতো সঠিক চিকিৎসা ও সেবায়, এ রোগে আক্রান্ত গরু সুস্থ হয়ে উঠবে। গরু পালনকারীরা জানান, গরুর গায়ে প্রথমে গুটি গুটি দেখা যায়, দু-একদিনের মধ্যেই তা পুরো শরীরে ছড়িয়ে পড়ে, গুটিগুলো একসময় ঘাঁয়ে পরিণত হয়। এ সময় গরুর শরীরে তীব্র জ্বর ও তাপমাত্রা বেড়ে যায়, এবং গরু খেতে চায় না, অনেক সময় গরুর পা ফুলে যাওয়া সহ বুকের নিচে পানি জমে ক্ষতের সৃষ্টি হয়, ক্ষতস্থানে থেকে মাংস খসে পড়াসহ মুখ দিয়ে লালা পড়তে থাকে।
ডিমলা উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর এর ভেটেরিনারি সার্জন ডাঃ মোঃ সাইদুর রহমান জানান, এটি একটি ভাইরাস জনিত চর্মরোগ যা শুধুমাত্র গরু ও মহিষ কে আক্রান্ত করে। প্রাথমিক চিকিৎসা হিসেবে এ রোগে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে এ রোগটি নতুনভাবে আবির্ভূত হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে এ রোগে গবাদিপশু আক্রান্ত হচ্ছে, তবে এ রোগে মানুষ আক্রান্ত হয় না।
এ রোগটি প্রথম, মহামারীআনায় জাম্বিয়া (১৯২৯) সনে। পরে জিম্বাবুয়ে,আফ্রিকায় (১৯৪৯) সনে। সারা আফ্রিকায়, তৎপরে (১৯৫০-১৯৮০) সনে। এশিয়ায় রোগের আবির্ভাব শুরু হয় (১৯৯০) সনের দিকে। এ রোগ এশিয়া অঞ্চলে দক্ষিণ এশিয়া (বাংলাদেশ) এ প্রথম দেখা দেয় পানির মহিষের মধ্যে।
আমাদের দেশে,ছড়িয়ে পড়ার সাথে সাথে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সভা-সমাবেশ, উঠান বৈঠক, লিফলেট বিতরণের মাধ্যমে রোগের লক্ষণ কারণ বিষয়ে গরু লালন -পালন কারীদের সচেতন করা হয়েছে। এ রোগে আতঙ্কিত না হয়ে সচেতনতার পরামর্শ দেয়া হচ্ছে।
সরেজমিনে উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের গ্রাম গুলো ঘুরে দেখা যায়, এই রোগের ব্যাপক প্রার্দুভাব ছড়িয়ে পড়েছে। এতে চরম দুশ্চিন্তায় পড়েছেন গরু পালনকারীরা। কথা হয় দঃগয়াবাড়ী কালী স্থানের কৃষক আলিম হোসেনের সাথে তিনি জানান, আমার একটি ষাঁড় গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত হয়েছে। একদিকে করোনার ভয়, অন্যদিকে আক্রান্ত গরু নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় আছি।
এছাড়াও একই গ্রামের সাজারুল ইসলামের দুইটি গরু, পশ্চিম খড়িবাড়ি গ্রামের অহিদুলে একটি গরু, দক্ষিণ তিতপাড়া গ্রামের মজনুর দু,টি গরুসহ বিভিন্ন এলাকায় কয়েকশ গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে। উপজেলায় বিভিন্ন এলাকার গরু পালনকারী দের সাথে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে। অন্তত কয়েকশ গরু লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত এসব গরু গুলো নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় ভুগছেন বলেও জানান, ভুক্তভোগী গরু পালনকারীরা।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর ও ভেটেরিনারি কর্মকর্তা আরো বলেন, ‘গবাদি পশুর ভাইরাসজনিত লাম্পি স্কিন ডিজিজ ভাইরাস যেহেতু মশা-মাছি থেকে ছড়ায় সেজন্য আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গবাদি পশু গুলো আলাদা করে রাখাসহ গবাদি পশু থাকার জায়গা সবসময় শুকনো রাখা ও মশারি ব্যবহারের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে খামারি ও কৃষকদের। এদিকে কুরবানীর ঈদ কে সামনে রেখে উভয় সংকটে পড়েছেন ক্রেতা ও বিক্রেতা। এই কারণে ডিমলা থানার প্রতিটি হাটে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের একজন করে প্রতিনিধি নিয়োগ করা হলে,প্রতারিত হবেন না ঈদকে সামনে রেখে গরু ক্রয় করতে আসা মানুষ জন জন।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।