বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৫০ পূর্বাহ্ন
(জামান মৃধা ডিমলা নীলফামারী)
করোনা বা (কোভিড-১৯) মহামারী দমাতে পারেনি দেশের গ্রামীণ অর্থনীতিকে।দেশের অন্যান্য খাতসমূহে সমসাময়িক বিপর্যয় ঘটলেও বর্তমান সরকারের যুগ উপযোগী সিদ্ধান্ত, প্রয়োজনীয় প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা ও সহায়তা সহ বাস্তবায়নের কারণে দেশের গ্রামীণ অর্থনীতি পূর্বের ন্যায় ঘুরে দাঁড়িয়েছে। দেশ আজ উন্নত দেশে রূপান্তরীত হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় কৃষি ও কৃষি যন্ত্রপাতির বৈপ্লবিক উন্নতি সাধিত হয়েছে । তাই, পুরাতন ধ্যান-ধারণাকে কে পিছে ফেলে, আধুনিক যন্ত্রপাতি, উন্নত এবং পরীক্ষিত বীজ ব্যবহারের মাধ্যমে সরিষা চাষে অসম প্রতিযোগিতায় নেমেছে ডিমলা উপজেলার কৃষক। এ উপজেলার মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ করেছেন কৃষককূল।
যেদিকে চোখ যায় বিস্তীর্ণ হলুদের সমারোহ। যেন দিগন্ত ছুঁয়েছে সরিষা ফুলের হলুদ রঙে। ডিমলায় শীতের সকালে কুয়াশাচ্ছন্ন হলুদ ফুলের মনমাতানো মৌ-মৌ গন্ধ আর অপরূপ দৃশ্য আকৃষ্ট করে যে কারো মনকে। বিশেষ করে জেলার তিস্তার চরাঞ্চলে মাঠের পর মাঠ সরিষার আবাদ হচ্ছে এখন। একচিমটি জমি পতিত রাখার সময় এখন নাই কারো।এখন সরিষার ফুল ধরার সময়। এ অপরুপ দৃশ্য দেখে মনে করে, কৃষকরা যেন তাদের ক্ষেতে রাশি রাশি সোনা ছড়িয়ে রেখেছে প্রকৃতি। প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য্যের শোভা পাচ্ছে ক্ষেতময় ক্ষেত।
ডিমলা উপজেলার ১০টি ইউনিয়নেই এবার সরিষার ব্যাপক আবাদ হয়েছে যা চোখে পড়ার মতো। অল্পকিছু দিনের মধ্যে কৃষকের ঘরে উঠবে এ সরিষা। এ উপজেলার অনেক ফসলি জমিতে এ বছর সরিষার অাবাদ হয়েছে। তাই কোন প্রকার প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা না দিলে এবার বাম্পার ফলনের সম্ভবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় কৃষকেরা।
কৃষি অফিস সূত্রে জানা যায়, এবার প্রতি বিঘা জমিতে টরি-৭ জাতের সরিষা ৩-৪ মণ এবং বারি-১৪,১৫ জাতের সরিষা ৫-৬ মণ পর্যন্ত উৎপাদন হয়। টরি-৭ জাতের সরিষা ৬৫-৭০ দিন এবং বারি-১৪,১৫ জাতের সরিষার জাত ৮০-১০০দিনের মধ্যে ঘরে তোলা যায়। ঘন কুয়াশা বা আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এবার সরিষার ভালো ফলন হবে। এবার দাম ভালো পেলে আগামীতে কৃষকেরা সরিষা চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবে। শুধু বীজ উৎপাদনের জন্য প্রচলিত জাতগুলো থেকেও উন্নত জাতের বেশ কিছু প্রদর্শনি প্লোট করা হয়েছে।
নাউতারা গ্রামের কৃষক মমিনুর রহমান জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এ বছর সরিষার ভালো ফলন হবে। সামনে ঘন কুয়াশা সরিষার জন্য ঝুঁকি রয়েছে। অাকাশকুড়ি গ্রামের কৃষক তারেক মিয়া জানান, এ বছর যে পরিমাণ সরিষার ফলন হয়েছে, তাতে বিঘা প্রতি ৪-৫ মণের ওপরে ফলন পাওয়া যাবে।
তবে, অভিযোগ রয়েছে ডিমলা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে তারা, কৃষকদের সরিষা চাষে আগ্রহ সৃষ্টির জন্য উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তেমন কোনও ভূমিকা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে ডিমলা উপজেলা কৃষকদের। তাদের মতে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যদি কৃষকদের প্রশিক্ষণসহ যথারীতি দেখাশোনা করতো তাহলে অনেক অনাবাদি জমিতে আরও বেশি সবজিসহ সরিষা চাষ করা সম্ভব হতো। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও সার্বিক সহযোগিতা এবং সরিষার ন্যায্যমূল্য পেলে এ অঞ্চলের কৃষকেরা ধান চাষের পাশাপাশি সরিষা সহ অন্যান্য তৈল বীজ জাতীয় ফসল চাষে আরও বেশি আগ্রহী হবেন।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মোঃ সেকেন্দার আলী জানান, ডিমলায় এবার টরী-৭ ও বিভিন্ন ধরনের বারি-১৪,১৫ জাত মিলিয়ে মোট ৭৬০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। গতবার ছিল প্রায় ৭০০ হেক্টর জমি। এ বছর প্রতি বিঘা জমিতে পাঁচ মণ পর্যন্ত সরিষার ফলন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে । আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে এবার সরিষার বাম্পার ফলন হওয়া সমূহসম্ভাবনা রয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমরা আগামীতে এই অঞ্চলের ভোজ্য তেলের চাহিদা পূরণের জন্য সরিষার পাশাপাশি তিল, তিষিসহ অন্যান্য তেল বীজ আবাদের জন্য কৃষকদের আগ্রহ সৃষ্টির উদ্যোগ হাতে নিয়েছি।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।