সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩২ অপরাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ বিশ্বের অন্যান্য দেশের নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনের কাজের তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নূরুল হুদা। তিনি বলেন, ‘লন্ডনে কেউ ছয় মাস থাকলে নির্বাচনের আগে তাদের নিবন্ধন দিয়ে দেয়। ভুয়া ভোটার নেই বলেই তারা ধরে নেয়। আর আমাদের দেশে নির্বাচন কমিশনকে মলম পার্টি, পকেটমার, ব্যাগ টানা পার্টি ও ক্যাসিনো মেম্বার নিয়ে কাজ করতে হয়।’ রবিবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) আগারগাঁওয়ে নির্বাচন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটে ৪৯ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তার যোগদান উপলক্ষে ১২ দিনব্যাপী আয়োজিত কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের দেশে দেখা গেলো, একবার গুলিস্তান মহল্লায় হকারদের কাছ থেকে কেউ টাকা নেয়। কিছুদিন পর হয়তো তাকে দেখা গেলো নেতা, পাতি নেতা, উপ-নেতা তারপর পূর্ণ নেতা হতেও। তারপর কমিশনার হতে। এগুলোও তো আমাদের দেখতে হয়। কে জানেন, তিনি একদিন এমপি হবেন না? সুতরাং সেই ব্যাকগ্রাউন্ড নিয়ে আমাদের কাজ করতে হয়।’
নির্বাচন কর্মকর্তাদের উদ্দেশে সিইসি বলেন, ‘রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের সামাল দেওয়ার দায়িত্ব আপনাদের। এই দায়িত্ব আর কারও ওপর দেওয়া হয়নি। তার মানে সমাজের সর্বস্তরের সংমিশ্রণগুলো আপনারা একসঙ্গে পেয়ে যাচ্ছেন। এটা একটা বিরাট চ্যালেঞ্জের বিষয়। সেই চ্যালেঞ্জগুলোকে মোকাবিলা করার বিষয় হলো—চেষ্টা, দক্ষতা ও একাগ্রতা। আর আপনাদের ব্যক্তিত্ব। নিজেকে সেভাবেই প্রস্তুত রাখুন।’ তিনি বলেন, ‘অনেক দেশে ৪০ লাখ ভোটার নিয়ে জাতীয় নির্বাচন হয়। অথচ আমাদের এক ঢাকা সিটিতেই ৫৪ লাখ ভোটারের ভোট হয়ে গেছে।’
সিইসি বলেন, ‘আমাদের দেশে অনেক সময় বলা হয়, আমেরিকা এমন করে, সুইজারল্যান্ড, জার্মানিতে এ রকম হয়, আমাদের এখানে হয় না কেন? সেদিন একটা পলিটিক্যাল পার্টি এসে একথা বলেছিল। আমি অত্যন্ত নিচু গলায় বললাম কানে কানে, আগে সুইজারল্যান্ড হতে হবে, তারপর। ইউ মাস্ট থিংক গ্লোবালি, বাট অ্যাক্ট লোকালি। তবে সেটি পরিস্থিতির ওপর নির্ভর করে।’
কে এম নূরুল হুদা বলেন, ‘ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) এখন টক অব দ্য কান্ট্রি। এটি নিয়ে অনেক কথা বলা হয়। আমরা বলি যে, সুইজারল্যান্ডেও তো পেপারে ভোট হয়। কিন্তু সেখানে তো যুদ্ধের মতো বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হয় না। পুলিশ, আর্মি সবাইকে নামাতে হয় না। পোস্টারে আকাশ ঢেকে যায় না, বাতাস বন্ধ হয়ে আসে না। সেই দেশে তো এমন হয় না। তাই বলে, আমাদের এখানে নির্বাচন করতে হবে না? সেভাবেই নির্বাচন করতে হবে। কেন ইভএম? ইভিএমের ফলেই এখন আর সেই দশটা হুন্ডা, বিশটা গুন্ডার যুগ নেই। এদের ভাড়া করতে প্রার্থীদের যেতে হবে না। যারা ভোট ছিনতাই করবে, তাদের কাছে যেতে হবে না। আর নির্বাচনে যারা দায়িত্বে থাকেন, তাদের পেছনে যারা টাকা দেয়, তাদের কাছেও যেতে হবে না। একমাত্র ইভিএমই পারে, ভোটারদের কাছে প্রার্থীদের নিয়ে যেতে।’
ইসি সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বৈঠকে চার নির্বাচন কমিশনারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।