শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৫ অপরাহ্ন
পরিবর্তন ডেস্কঃ রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের সব জায়গায়ই ধুলা উড়ছে। দেশে এমন কোনো স্থান নেই যেখানে ধুলা নেই। দেশের সর্বোচ্চ আদালতও এ ধুলা নিয়ন্ত্রণের জন্য বলেছে। আর এ ধুলার কারণেই দেশে করোনা ভাইরাসের ঝুঁকি বেশি বলে মনে করছে রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান (আইইডিসিআর)। আর সাধারণ মাস্কও ভাইরাস প্রতিরোধক নয় বলে এই প্রতিষ্ঠানের অভিমত। প্রতিষ্ঠানটির মতে সার্জিক্যাল মাস্কই ভাইরাস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করবে। তবে সবার মাস্ক পড়ার দরকার নেই বলেও জানিয়েছেন তারা।
আইইডিসিআর সূত্রে জানা গেছে, করোনাভাইরাস মাটিতে পড়ার পর অন্তত ৬ ঘণ্টা পর্যন্ত জীবিত থাকতে পারে। এ সময়ের মধ্যে কোন মানুষের দেহে তা প্রবেশ করলে সেই ব্যক্তি আক্রান্ত হতে পারে। প্রতিষ্ঠানটির গবেষণা কর্মকর্তারা বলেন, ভাইরাস আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি থেকে এক মিটার দূরে থাকলে অন্যদের আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা নেই। তবে আক্রান্ত ব্যক্তির হাঁচি-কাশি থেকে যে ভাইরাস বের হয় তা মাটিতে পড়ে যায়। কারণ করোনাভাইরাস বাতাসে ভাসতে পারে না। তবে শঙ্কার বিষয় হচ্ছে, দেশে ব্যাপক ধুলা-ধূসর পরিবেশ বিরাজ করছে। এসব ধুলার সঙ্গে ভাইরাসও উড়ে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি এক গবেষণায় বলা হয়েছে, নতুন করোনাভাইরাস বাতাসে কয়েক ঘণ্টা টিকে থাকতে পারে। গবেষণাটি চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের অধীন ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব অ্যালার্জি অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেস (এনআইইডি)।
এ বিষয়ে আইইডিসিআর প্রধান বৈজ্ঞানিক গবেষণা কর্মকর্তা ডাক্তার এএসএম আলমগীর যায়যায়দিনকে বলেন, করোনাভাইরাস ভারি হলেও ধুলা-বালুর তুলনায় হাল্কা। এ ধুলা-বালুর ওপর ভর করে ভাইরাসও উড়ে আসতে পারে। এ কারণেই ধুলা-বালু নিয়ন্ত্রণ করারও প্রয়োজন আছে। তবে সবারই উচিত হাঁচি-কাশি দেওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করা। তাহলে অনেকাংশে নিরাপদ থাকা সম্ভব হবে। কারণ রোগাক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেওয়ার চেয়ে রোগ প্রতিরোধই জরুরি বলেও এ গবেষক মনে করেন।
আইইডিসিআরের ভাষ্যমতে, সাধারণ মাস্ক ধুলা-বালু প্রতিরোধে সহায়তা করলেও ভাইরাস প্রতিরোধ করতে পারে না। ভাইরাস প্রতিরোধের জন্য প্রয়োজন সার্জিক্যাল মাস্ক। এ মাস্কের ভেতরে বিশেষ এক ধরনের লেয়ার বা স্তর থাকে, যা ভাইরাস প্রতিরোধক। করোনা আতঙ্কে অনেকেই মাস্ক পরছেন, কিন্তু সবার মাস্ক পড়ার প্রয়োজন নেই বলেও এ প্রতিষ্ঠানের কর্তা ব্যক্তিরা মনে করেন। তাদের মতে, রোগী আর চিকিৎসক-নার্সরা মাস্ক পরলেই হয়।
এ বিষয়ে গবেষক আলমগীর বলেন, মাস্ক সবার পরতে হবে না। আর ভাইরাসের জন্য মাস্ক পরলে তা অবশ্যই সার্জিক্যাল মাস্ক পরতে হবে। এ মাস্ক পুরোটাই এয়ার টাইট। ফলে নাকের ওপর দিয়েও বাতাস প্রবেশ করতে পারে না। অন্যান্য মাস্কের মধ্যে এ সুবিধা থাকে না। ফলে সাধারণ মাস্ক ভাইরাস প্রতিরোধক হিসেবে কাজ করে না।
ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের প্রায় সব এলাকাতেই এখন ধুলার রাজত্ব। নগরের প্রধান-অপ্রধান সড়ক ঘেঁষে লাগানো গাছগুলোর সবুজ পাতায় ধুলার আস্তর দেখে পরিস্থিতি কিছুটা আঁচ করা যায়। এ মুহূর্তে ঢাকায় চলছে মেট্রোরেল ও অ্যালিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েসহ বেশ কয়েকটি বড় উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ চলছে। পাশাপাশি নগরজুড়ে চলছে বিভিন্ন সেবা সংস্থার খোঁড়াখুঁড়ি ও আবাসন সংস্থার নির্মাণযজ্ঞ।
ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) সড়কে খোঁড়াখুঁড়ির পাশাপাশি ওয়াসা, ডেসকো, ডিপিডিসিসহ বিভিন্ন সেবা সংস্থার সড়ক খুঁড়ে রেখেছে। দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সড়কে একইভাবে চলছে খোঁড়াখুঁড়ির কাজ। যার মধ্যে ওয়াসার কাজই সবচেয়ে বেশি।
এছাড়া নদীপাড়ের আচ্ছাদনহীন স্তূপগুলো থেকে যখন বালু ট্রাকে করে শহরের বিভিন্ন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়, তখনো তাতে ঢাকনা দেওয়ার কোনো ব্যবস্থা থাকে না। ফলে তা শহরময় ছড়িয়ে পড়ে। এছাড়া ইটভাঙা থেকে যে সূক্ষ্ণ ধূলিকণা বের হয়, তাও আটকানোর কোনো পথ নেই। শহরের নানা জায়গায় উন্মুক্ত পরিবেশে ইট ভাঙতে দেখা যায়। শুধু রাস্তাঘাটেই নয়, ঘরবাড়ি, শ্রেণিকক্ষ, পার্ক কোথাও ধুলামুক্ত নয়।
বাংলাদেশ পরিবেশ অধিদপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের বায়ুমান পর্যবেক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যে গত ১৯ জানুয়ারির ঢাকার বাতাসকে মারাত্মক অস্বাস্থ্যকর বলে চিহ্নিত করেছে। এরই ভিত্তিতে আন্তর্জাতিক সংস্থা এয়ার ভিজু্যয়ালের হিসাবে গত ১৯ ও ২০ জানুয়ারি রাত ১১টার বিশ্বের সবচেয়ে দূষিত বাতাসের শহর হিসেবে ঢাকাকে ১ নম্বরে ফেলেছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন বলছে, বাতাসকে দূষণমুক্ত রেখে সুস্থ-স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য জরুরি নির্মাণাধীন নতুন ভবন ও রাস্তাঘাট থেকে উৎপন্ন ধুলাবালু নিয়ন্ত্রণ করা। শিল্প-কলকারখানাকে শহর থেকে দূরে স্থাপন, কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণসহ শিল্পবর্জ্যরে নিরাপদ অপসারণ নিশ্চিত করা অত্যাবশ্যক। ত্রম্নটিপূর্ণ যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করাসহ যানবাহনে সীসামুক্ত জ্বালানি ব্যবহার নিশ্চিত করা জরুরি। ইটভাটা স্থাপন এবং ভাটায় চিমনি ব্যবহারের মাধ্যমে কালো ধোঁয়া নিয়ন্ত্রণে যথাযথ নিয়ম মেনে চলার নিশ্চয়তাবিধান অত্যাবশ্যক। জীবাশ্ম জালানির বদলে নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, রাস্তার পাশে উন্মুক্ত ডাস্টবিন স্থাপন বন্ধ করতে হবে। নদীর পানি দূষণের হাত থেকে রক্ষা পেতে ওয়াসার সিউয়েজ নির্গমনসহ নদ-নদীর পানিতে সব রকমের কঠিন, গৃহস্থালি, শিল্প ও স্যানিটারি বর্জ্যের মিশ্রণ রোধ করতে হবে। মাটি রাখতে হবে দূষণমুক্ত।
All rights reserved © 2020-2024 dainikparibarton.com
অনুমতি ব্যতিত এই সাইটের কোনো কিছু কপি করা কপিরাইট আইনে দণ্ডনীয়।